মঙ্গলবার, ৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

শবেবরাতের ফজিলত

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

শবেবরাতের ফজিলত

শবেবরাতের অর্থ ‘মুক্তির রজনী’ বলা যায়। আরবি  শাবান মাসের ১৫তম রজনী আমাদের এ উপমহাদেশে  শবেবরাত বলে পরিচিত। আর হাদিসের ভাষায় এর নাম ‘লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান’। এ পুণ্যময় রজনীর ফজিলত ও তাৎপর্য আল কোরআনে বর্ণিত না থাকলেও কয়েকটি আমলযোগ্য হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এমনিতেই রমজানের আগের মাস হিসেবে শাবানের মর্যাদা অনেক। তবু এ মাসের ১৫তম রজনীর মর্যাদা আলাদাভাবে  কয়েকটি হাদিসে বর্ণিত হয়েছে। তা ছাড়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি আরবি মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। সে হিসেবেও ১৫ শাবানের মর্যাদা রয়েছে। হজরত আলী (রা.) বলেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যখন শাবানের ১৫তম রজনী আসে, তোমরা রাতে নামাজ পড় এবং দিনে রোজা রাখ। কারণ, আল্লাহ সেদিন সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার আসমানে আসেন এবং বলতে থাকেন, কেউ আছে কি, গুনাহ মাফ চাইবে? আমি তার গুনাহ মাফ করে দেব। কেউ আছে কি, রিজিক চাইবে? আমি তাকে রিজিক দান করব। কেউ আছে কি অসুস্থ? আমি তাকে সুস্থ করে দেব। আল্লাহ এভাবে ডাকতে থাকেন ভোর পর্যন্ত।’ ইবনে মাজাহ। ‘হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকের রজনীতে (শবেবরাত) কী কী হয় তোমরা কি জান? আয়েশা (রা.) বললেন, আপনি বলুন এ রজনীতে কী কী হয়? রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আজকের রজনীতে আগামী এক বছরে পৃথিবীতে আগমনকারী আদমসন্তানদের নাম লেখা হয়। আগামী এক বছরে পৃথিবী থেকে কে কে বিদায় নেবে তাদের নাম লিপিবদ্ধ করা হয়। এ রজনীতে মানুষের আমলনামা আল্লাহর কাছে পেশ করা হয়। মানুষের রিজিক আল্লাহর কাছ থেকে বরাদ্দ হয়।’ বায়হাকি। শবেবরাতে আমরা বিভিন্ন নেক আমল করতে পারি। জিকির করতে পারি। কোরআন তিলাওয়াত করতে পারি। নফল নামাজ পড়তে পারি। সম্ভব হলে সালাতুত তাসবিহ পড়তে পারি। প্রিয় নবী তাঁর চাচা হজরত আব্বাস (রা.)-কে এ নামাজ পড়ার প্রতি তাগিদ দিয়েছেন। তা ছাড়া কবর জিয়ারত করতে পারি। আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাওয়ার উত্তম সুযোগ শবেরবাতে। ভোররাতে সাহরি খেয়ে পরদিন রোজা রাখার প্রতি প্রিয় নবী গুরুত্ব দিয়েছেন।  পুণ্যময় শবেবরাতে সবার গুনাহ মাফ হলেও দুই ব্যক্তির গুনাহ মাফ হয় না। এক. হিংসুক। দুই. আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী। অর্থাৎ এ দুই ব্যক্তির অপরাধ এতটাই জঘন্য যে, বরাতের মতো পবিত্র রাতেও তা মাফ হয় না।  এ প্রসঙ্গে হজরত আবু মুসা আশয়ারি (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘আল্লাহ ১৫ শাবানের রজনীতে সমগ্র সৃষ্টিকুলের প্রতি মনোযোগ দেন। অতঃপর সবাইকে ক্ষমা করে দেন দুই ব্যক্তি ছাড়া। তারা হলো আল্লাহর সঙ্গে শরিককারী ও হিংসুক।’ ইবনে মাজাহ। মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে শবেবরাতের তাৎপর্য অনুধাবন করে এ রাতে বেশি বেশি ইবাদত করার তৌফিক দান করুন। তবে এবারের শবেবরাত এমন একসময় উপস্থিত যখন বাংলাদেশসহ সারা বিশ্ব করোনাভাইরাস নামক মহামারীতে আক্রান্ত। সুতরাং এ বছর সরকারি নির্দেশনা মেনে মসজিদে না গিয়ে, সংঘবদ্ধ না হয়ে যার যার ঘরে থেকে ইবাদত করাই হবে উত্তম।

লেখক :  খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর