বুধবার, ৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ইসলামে স্বাস্থ্য সচেতনতা

আবদুর রশিদ

ইসলামে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতাকে ইমানের অংশ হিসেবে মান্য করা হয়। একজন মুসলমান দৈনিক পাঁচবার ফরজ বা অবশ্যপালনীয় ইবাদত হিসেবে নামাজ পড়েন। প্রতিবারই নামাজের জন্য তাকে কনুই পর্যন্ত হাত, মুখ, পা পরিষ্কার করে অজু করতে হয়। শারীরিকভাবে পরিচ্ছন্ন বা পবিত্র থাকতে হয়। আজ করোনাভাইরাস নামের মহামারী থেকে রক্ষা পেতে চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা পরিচ্ছন্ন থাকা ও বারবার সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার তাগিদ দিচ্ছেন। ইসলাম ১৪০০ বছর আগে মুমিনদের এ শিক্ষা দিয়েছে। পরিচ্ছন্নতা তথা স্বাস্থ্য সচেতনতাকে ইমানের অংশ হিসেবে ধারণ করতে বলেছে।

স্বাস্থ্য মানবজীবনে আল্লাহর এক মূল্যবান নিয়ামত। ইসলাম মুমিনদের স্বাস্থ্যসচেতনতার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে। আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদত করার জন্য। আর ইবাদত করতে হলে শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা জরুরি। কেননা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকলেই কেবল একাগ্রতার সঙ্গে অল্লাহর ইবাদত করা সম্ভব। একজন মুমিন যেন শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকে সে বিষয়ে ইসলাম গুরুত্ব দিয়েছে।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘দুর্বল মুমিনের তুলনায় সবল মুমিন অধিক কল্যাণকর ও আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয়। তবে উভয়ের মধ্যেই কল্যাণ রয়েছে।’ মুসলিম।

মানুষকে সুস্থ থাকতে হলে তাকে অবশ্যই শরীর ও স্বাস্থের প্রতি নজর রাখতে হবে। সেই সঙ্গে তাকে প্রতিদিন নিয়মিতভাবে শরীর ও স্বাস্থের পরিচর্যা করতে হবে। প্রতিনিয়ত খেয়াল রাখতে হবে কোনো অসচেতনতার কারণে যেন সে ব্যাধিগ্রস্ত হয়ে না পড়ে। কোনো কারণে মানুষ অসুস্থ হলে আল্লাহ তাকে তার অসুস্থতার কারণে নেকি দান করেন। তবে ইচ্ছাকৃতভাবে অসুস্থ হলে অবশ্যই তাকে কিয়ামতের দিন শাস্তির সম্মুখীন হতে হবে। তা ছাড়া অসুস্থ হয়ে চিকিৎসা গ্রহণের চেয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলে সুস্থ থাকাকে ইসলাম অধিক উৎসাহিত করেছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দাকে নিয়ামত সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে প্রশ্নটি করা হবে তা হলো তার সুস্থতা সম্পর্কে। তাকে বলা হবে আমি কি তোমাকে শারীরিক সুস্থতা দিইনি?’ তিরমিজি।

সুতরাং প্রত্যেক মুমিনের অবশ্য-পালনীয় দায়িত্ব হলো, প্রতিনিয়ত শরীর ও স্বাস্থের প্রতি যতœশীল হওয়া। ইসলামের আদেশ অনুযায়ী মুমিন বান্দা প্রথমত খেয়াল রাখবেন যেন সে কখনো শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ না হয়ে পড়ে। অবশ্য কখনো কোনো কারণে অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে কোনো প্রকার অলসতা করা চলবে না। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর সাহাবিদের দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করতে উৎসাহিত করেছেন এবং তিনি নিজে অসুস্থ হলে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করেছেন। তিনি ইরশাদ করেছেন, ‘হে আল্লাহর বান্দারা! তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর, কেননা আল্লাহ এমন কোনো রোগ সৃষ্টি করেননি, যার প্রতিষেধক তিনি সৃষ্টি করেননি। তবে একটি রোগ আছে যার কোনো প্রতিষেধক নেই, সেটি হলো বার্ধক্য।’ আবু দাউদ।

হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, অসুস্থ হলে চিকিৎসা নেওয়া রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নত। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ রোগ দেন, রোগের প্রতিষেধকও নাজিল করেছেন। প্রতিটি রোগের চিকিৎসা রয়েছে। সুতরাং তোমরা চিকিৎসা গ্রহণ কর তবে হারাম দ্রব্য দ্বারা চিকিৎসা নিও না।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘হারাম বস্তুতে আল্লাহ তোমাদের জন্য আরোগ্য রাখেননি।’ জাদুল মাআদ।

চিকিৎসা সম্পর্কে ইসলামের নির্দেশনা হলো রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা করা। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রোগ অনুযায়ী চিকিৎসা হলেই আল্লাহর হুকুমে আরোগ্য হয়।’ মুসলিম।                                                                                                             লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

সর্বশেষ খবর