বৃহস্পতিবার, ৯ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

কীভাবে পালন করব মহিমান্বিত শবেবরাত

মুফতি মিজানুর রহমান

রমজানের আগমনী বার্তা নিয়ে মুসলিম উম্মাহর দুয়ারে কড়া নাড়ল মাহে শাবান। সর্বশ্রেষ্ঠ মাস রমজানের আগাম প্রস্তুতির তাগাদা নিয়ে এলো মহিমান্বিত শাবান। শবেবরাত উপহার নিয়ে এলো বরকতময় মাস শাবান। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাস থেকেই রমজানের প্রস্তুতি নিতেন। রজব ও শাবানে তিনি রমজানের অধীর অপেক্ষায় থাকতেন। রমজানের আগমনের জন্য উদগ্রীব হয়ে থাকতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শাবান মাসের (দিন-তারিখ হিসাব) প্রতি এত অধিক লক্ষ্য রাখতেন যা অন্য মাসের ক্ষেত্রে রাখতেন না।’ আবু দাউদ।

এ মাসের ১৫ তারিখ বরকতময় একটি রাত শবেবরাত। শবেবরাত শব্দটি ফারসি। শব অর্থ রাত বা রজনী আর বরাত মানে ভাগ্য। একত্রে শবেবরাতের মানে ভাগ্যরজনী। আবার আরবিতে বলা হয় লাইলাতুল বারাআত। লাইলাতুন অর্থ হলো রাত আর বারাআতুন অর্থ হলো মুক্তি। একত্রে অর্থ হলো মুক্তির রাত।

উম্মতকেও তিনি শাবান মাসের দিন-তারিখের হিসাব রাখার গুরুত্বারোপ করেছেন। এ মাসে অধিক হারে নফল রোজা রাখা অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। হজরত উম্মে সালমা (রা.) বলেন, ‘আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শাবান ও রমজান মাস ছাড়া অন্য কোনো দুই মাস একাধারে রোজা রাখতে দেখিনি।’ হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শাবান মাসের মতো এত অধিক (নফল) রোজা আর অন্য কোনো মাসে রাখতে দেখিনি। এ মাসের অল্প কয়েক দিন ছাড়া বরং বলতে গেলে সারা মাসই তিনি রোজা রাখতেন।’ তিরমিজি।

হজরত মুয়াজ ইবনে জাবাল (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মহান আল্লাহ মধ্যশাবানের রাতে তাঁর সৃষ্টির প্রতি দৃকপাত করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ছাড়া সবাইকে ক্ষমা করে দেন।’ ইবনে হিব্বান।

হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘এক রাতে আমি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বিছানায় পেলাম না। তাই (খোঁজার উদ্দেশে) বের হলাম। তখন দেখতে পেলাম, তিনি জান্নাতুল বাকিতে আছেন। আমাকে দেখে তিনি বলে উঠলেন, তুমি কি এ আশঙ্কা করছ যে, আল্লাহ এবং তাঁর রসুল তোমার প্রতি অবিচার করেছেন? আমি বললাম হে আল্লাহর রসুল! আমি ধারণা করেছিলাম, আপনি আপনার অন্য কোনো স্ত্রীর ঘরে তাশরিফ নিয়েছেন। তখন তিনি বলেন, শাবানের ১৫ তারিখ রাতে আল্লাহ দুনিয়ার আসমানে অবতরণ করেন এবং বনু কালবের (আরবের একটি বিখ্যাত গোত্র) পশুপালের গায়ের পশমের চেয়েও বেশিসংখ্যক লোককে মাফ করে দেন। অর্থাৎ বিপুলসংখ্যক মানুষকে মাফ করে দেবেন।’ তিরমিজি, ইবনে মাজাহ।

‘নিঃসন্দেহে আল্লাহ সেদিন সূর্যাস্তের পর থেকে প্রথম আসমানে বিশেষ তাজাল্লি বর্ষণ করেন এবং ইরশাদ করেন কেউ আছ কি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি ক্ষমা করে দেব। কেউ আছ কি জীবিকা প্রার্থনাকারী? তাকে আমি জীবিকা দান করব। কেউ আছ কি মুসিবতগ্রস্ত? তাকে আমি মুক্তি প্রদান করব। কেউ এমন আছ কি? এভাবে সূর্য উদয় হওয়া পর্যন্ত আল্লাহ তাঁর বান্দাদের ডাকতে থাকেন।’ ইবনে মাজাহ।

নফল ইবাদত মসজিদ থেকে ঘরে করাই উত্তম। আমাদের দেশে সাধারণত মানুষ মসজিদে এসে নিসফে শাবান বরাতের রাতে নফল ইবাদত করে থাকে, তবে এবার সবার জন্য সুযোগ এসেছে ঘরে বসেই নফল ইবাদত করার। যেহেতু ইসলামিক ফাউন্ডেশন সংকটকালে দেশের নাগরিকদের সুরক্ষা ও নিরাপত্তার স্বার্থে নিজ নিজ বাসস্থানে বসে শবেবরাতের ইবাদত যথাযথ মর্যাদায় আদায়ের জন্য সবাইকে বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে, তাই আমরা ঘরে বসেই ইবাদত করব। এ মহামারী থেকে রক্ষা পেতে আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে একনিষ্ঠভাবে তওবা-ইসতিগফার, দোয়া ও কান্নাকাটি করব এবং দেশবাসী ও মুসলিম উম্মাহর মুক্তির জন্য পরিবারের সব সদস্য নিয়ে দয়াময় প্রভুর দয়া কামনা করব, সর্বোপরি সামনের জীবন যেন পাপমুক্ত হয়ে যাপন করতে পারি এজন্য আল্লাহর কাছে তৌফিক কামনা করব। আল্লাহ আমাদের তৌফিক দান করুন।

                লেখক : সিনিয়র পেশ ইমাম

বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ  ঢাকা।   

সর্বশেষ খবর