সোমবার, ১৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

খুনি মাজেদের ফাঁসি

কলঙ্ক মোচনে আরেক ধাপ অগ্রগতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি ক্যাপ্টেন (বরখাস্ত) আবদুল মাজেদের মৃত্যুদ- অবশেষে কার্যকর হয়েছে। শাস্তি এড়াতে দুই দশকের বেশি সময় ভারতে পলাতক ছিল এই আত্মস্বীকৃত খুনি। কিন্তু পাপ যেন তাকে তাড়া করে এনেছে ফাঁসির মঞ্চের দিকে। ভারতে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান এবং করোনাভাইরাসে সংক্রমণের ভয়ে মৃত্যুদ-প্রাপ্ত এই খুনি পালিয়ে আসে বাংলাদেশে। কয়েক দিন পালিয়ে থাকার পর গত ৬ এপ্রিল গভীর রাতে তাকে রাজধানীর গাবতলী থেকে গ্রেফতার করা হয়। নিজের দোষ স্বীকার করে রাষ্ট্রপতির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে মৃত্যুদন্ড  থেকে বাঁচার শেষ চেষ্টাও করে সে। কিন্তু তার আবেদন প্রত্যাখ্যাত হলে সাজানো হয় ফাঁসির মঞ্চ। শনিবার রাত ১২টা ১ মিনিটে কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মাজেদের মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। মুক্তিযুদ্ধে বাঙালির কাছে পাকিস্তানি হানাদারদের লজ্জাজনক পরাজয় মেনে নিতে পারেনি পাকিস্তান এবং তাদের মুরুব্বিরা। ফলে শুরু হয় ষড়যন্ত্র। সে ষড়যন্ত্রে শিখন্ডী হিসেবে ব্যবহৃত হয় সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য। যাদের মধ্যে আবদুল মাজেদ ছিল অন্যতম। এই জাতীয় বিশ্বাসঘাতক শুধু সপরিবারে বঙ্গবন্ধু হত্যা নয়, জেল হত্যায়ও সরাসরি জড়িত ছিল। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের পর বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহযোগীদের ওপর নির্যাতন চালানোর প্রতিহিংসাপরায়ণ মনোভাবও দেখিয়েছে বিবেক বর্জিত খুনিরা। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর লিবিয়ায় পালিয়ে যায় মাজেদসহ খুনি দলের সদস্যরা। অবৈধভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগতকারী সেনাশাসক জিয়াউর রহমান খুনিদের বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসে মর্যাদাপূর্ণ পদে নিয়োগ দিয়ে পুরস্কৃত করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর দীর্ঘ ২১ বছর খুনিদের বিচারের আওতামুক্ত রাখা হয় ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ নামের জংলি বিধান বলে। ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠনের পর সে জংলি বিধান বাতিল করে শুরু হয় ১৫ আগস্ট হত্যাকান্ডের বিচার। উচ্চ আদালতের চূড়ান্ত রায়ে ১২ জনকে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হয়। ২০১০ সালে পাঁচজনকে ফাঁসি দেওয়ার পর শনিবার মাজেদের মৃত্যুদন্ড কার্যকর হলো মুজিব শতবর্ষের অন্যতম সেরা অর্জন হিসেবে। জাতিকে কলঙ্ক মুক্তির জন্য পলাতক পাঁচ খুনিকে খুঁজে বের করে দন্ড কার্যকর হবে, এ প্রত্যাশা সব দেশপ্রেমিক মানুষের।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর