শনিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

ত্রাণ আত্মসাৎকারীর ঠিকানা জাহান্নাম

যুবায়ের আহমাদ

ত্রাণ আত্মসাৎকারীর ঠিকানা জাহান্নাম

করোনার থাবায় থমকে গেছে পৃথিবী। উপাসনালয় থেকে বিনোদন কেন্দ্র- সবই এখন জনশূন্য। কর্মহীন হয়ে অর্ধাহারে কিংবা অনাহারে দিন কাটাচ্ছে লাখো মানুষ। গণমাধ্যমজুড়ে লাশের খবর। দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশের সোশ্যাল মিডিয়া থেকে মূলধারার গণমাধ্যম পর্যন্ত করোনাসংক্রান্ত খবরের সঙ্গে পাল্লা দিয়েই প্রচারিত হচ্ছে চাল আত্মসাতের খবর। দেশের সর্বাধিক প্রচারিত জাতীয় দৈনিক বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদকীয় হয়েছে ‘চাল চোরদের ধরুন!’ শিরোনামে।

করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া অভাবীদের অনাহারে রেখে তাদের ত্রাণের চাল চুরি করে নিচ্ছে দ্রুত বিত্তশালী হওয়ার স্বপ্নে বিভোর একশ্রেণির মানুষ। যদিও তারা এর নিশ্চয়তা দিতে পারবেন না যে, এ চালগুলো খাওয়ার মতো হায়াত তারা পাবেন। হতে পারে আত্মসাৎকৃত চাল অথবা সেগুলোর অর্থ ভোগের আগেই আজরাইল তাদের ধরে নিয়ে যাবে। দুনিয়ার ক্ষণস্থায়ী জীবনে আত্মসাৎকৃত চাল ভোগের বিষয়ে তারা নিশ্চিত না হলেও এ বিষয়টি নিশ্চিত যে, ত্রাণের চাল চুরির কারণে পরকালের চিরস্থায়ী জীবনে তারা হবেন জাহান্নামি। এমনকি লোকটি যদি ত্রাণ চুরির পর আল্লাহর রাস্তায় শহীদও হয় তবু তাকে জ্বলতে হবে জাহান্নামের আগুনে। জনগণের সম্পদ আত্মসাৎকারীর ব্যাপারে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন খুবই কঠোর। হজরত ওমর (রা.) বলেন, ‘খাইবার যুদ্ধে অনেক সাহাবি শহীদ হলে লোকেরা এ সংবাদ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দিচ্ছিলেন। তারা বলছিলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! অমুক শহীদ, অমুক শহীদ। অবশেষে এক ব্যক্তি প্রসঙ্গে তারা বললেন, সেও শহীদ হয়েছে। এমন সময় রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, কখনোই না। গনিমতের মাল থেকে একটি চাদর আত্মসাৎ করার কারণে আমি তাকে জাহান্নামে দেখেছি।’ মুসলিম। সামান্য একটি চাদর আত্মসাতের কারণে একজন শহীদ সাহাবির ব্যাপারেও রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এমনই কঠোর বাণী উচ্চারণ করেছেন। আজ যারা হাজার হাজার মণ চাল আত্মসাৎ করছে, তাদের অবস্থা কী হবে তা সহজেই অনুমেয়।

আত্মসাৎকারী যদি ত্রাণের দায়িত্বরত সরকারি কোনো কর্মচারী বা কর্মকর্তা হন, হাশরের ময়দানে তাকে আত্মসাৎ করা পণ্যের বোঝা মাথায় নিয়ে উঠতে হবে। সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন ‘হে লোকেরা! তোমাদের মধ্যকার কোনো ব্যক্তিকে আমাদের সরকারি কোনো পদে নিয়োগ করার পর সে যদি আমাদের তহবিল থেকে একটি সুই কিংবা তার বেশি আত্মসাৎ করে তবে সে খিয়ানতকারী। কিয়ামতের দিন সে তার এই খিয়ানতের বোঝা নিয়ে উপস্থিত হবে।’ আবুদাউদ। ত্রাণের চাল যথাযথভাবে হকদারদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে কিনা তা তদারকি করার দায়িত্বে নিয়োজিত ব্যক্তিরাও যদি তাদের তদারকির দায়িত্ব ঠিকমতো পালন না করে কৌশলে আত্মসাৎকারীদের আত্মসাতের সুযোগ করে দেন, তারাও হাশরের ময়দানে দাঁড়াবেন আসামির কাঠগড়ায়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘প্রত্যেক দায়িত্বশীলই তার ওপর অর্পিত দায়িত্বের ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ মুসলিম। ত্রাণ আত্মসাৎকারী ও আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত সবারই সম্পদ দান-সদকাসহ ইবাদত কবুল হবে না। আত্মসাতের আগে কবুল হওয়া ইবাদতের সওয়াবও হাশরের ময়দানে দিয়ে দিতে হবে পাওনাদারদের। তাতেও পাওনাদারদের পাওনা পরিশোধ না হলে পাওনাদারদের গুনার বোঝা মাথায় নিয়ে আত্মসাৎকারীদের যেতে হবে জাহান্নামে। আল্লাহ সবাইকে এহেন কবিরা গুনা থেকে হেফাজত করুন।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ড বাজার (আবদুল গনি রোড), গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর