সোমবার, ২০ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

যেভাবে স্বাগত জানাবেন রমজানকে

যুবায়ের আহমাদ

যেভাবে স্বাগত জানাবেন রমজানকে

আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের মহাসুযোগ নিয়ে আবারও হাজির হচ্ছে রমজান। পুণ্য অর্জনের অবারিত সুযোগ নিয়ে হাজির হওয়া এ পবিত্র মাসকে স্বাগত জানাতে অপেক্ষা করছে পৃথিবীর মুসলমানরা। রমজানকে স্বাগত জানাতে নিচের বিষয়গুলোতে খেয়াল রাখা যেতে পারে।

চাঁদ দেখা : রমজানের চাঁদ উঠলেই শুরু হয় রোজা। আবার শাওয়ালের চাঁদ উঠলেই রোজার সমাপ্তিতে ঈদুল ফিতর হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমরা (রমজানের) চাঁদ  দেখে রোজা রেখো এবং চাঁদ দেখেই রোজা ছাড়ো!...’ বুখারি। রমজান কবে শরু হবে তা ভালোভাবে জানার জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখা জরুরি। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শাবান মাস শুরু হলেই রমজানের চাঁদের অপেক্ষা করতেন এবং শাবান মাসের দিন গণনা করতেন। হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘শাবান মাসের চাঁদের হিসাব যেভাবে গুরুত্বের সঙ্গে রাখতেন অন্য কোনো মাসের হিসাব সেভাবে রাখতেন না।’ আবুদাউদ। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে গুরুত্বের সঙ্গে শাবানের চাঁদের হিসাব রাখতেন আবার নির্ভুলভাবে রমজানের তারিখ জানতে উম্মতকেও শাবানের হিসাব রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন,  ‘তোমরা রমজানের জন্য শাবানের চাঁদের হিসাব রাখ!’ তিরমিজি।

রমজানের চাঁদ দেখা : রমজানের নতুন চাঁদের অনুসন্ধান করা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের গুরুত্বপূর্ণ একটি সুন্নত। শাবান মাসের ২৯ তারিখ প্রত্যেক মুসলমানের উচিত আকাশে রমজানের বরকতপূর্ণ চাঁদের অনুসন্ধান করা। তবে এবার যেহেতু করোনাভাইরাসের কারণে মসজিদে ফরজ নামাজের জামাতই সীমিত করা হয়েছে তাই চাঁদ দেখতে গিয়ে যেন কোনোরকমের জনসমাগম না হয় সেদিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে।

চাঁদ দেখে দোয়া পড়া : রমজানের নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং তাঁর সাহাবিরা রমজানের নতুন চাঁদ দেখে দোয়া পড়তেন। হাদিসে এসেছে, নতুন চাঁদ দেখে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ দোয়া পড়তেন-‘আল্লাহুম্মা আহিল্লাহু আলাইনা বিল আমনি ওয়াল ইমানি, ওয়াসসালামাতি ওয়ালইসলামি, রাব্বি ওয়ারাব্বুকাল্লাহ, হিলালু রুশদিন ওয়াখাইর।’ অর্থ : হে আল্লাহ, এ চাঁদকে আমার ওপর ইমান, নিরাপত্তা, শান্তি ও ইসলামের সঙ্গে উদিত করুন! আমার ও তোমার প্রভু আল্লাহ। সুপথ ও কল্যাণের চাঁদ। তিরমিজি।

আনন্দিত হওয়া : বিশেষ কোনো নেয়ামত প্রাপ্তির পর আনন্দ আসাই স্বাভাবিক, যেহেতু রমজান পাওয়া আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে এক বিশেষ নেয়ামত। তাই রমজানের চাঁদ দেখে আনন্দিত হওয়া, আনন্দ প্রকাশ করাও সুন্নত। আকাশে রমজানের চাঁদ দেখে রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম খুশিতে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করতেন। রমজান শুরু হলে জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে জান্নাতের সব দরজা খুলে দেওয়া হয়। আমলের সওয়াব বহুগুণে বাড়িয়ে দেওয়া হয়। তাই প্রত্যেক মুসলমানের উচিত রমজান পেয়ে আনন্দিত হওয়া এবং আনন্দ প্রকাশ করা।

তারাবি ও সেহরির প্রস্তুতি গ্রহণ : তারাবি নামাজ সুন্নত। আমাদের দেশসহ সারা বিশ্বেই রমজানের তারাবিতে পবিত্র কোরআন প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত ধারাবাহিকভাবে তেলাওয়াত করা হয়। করোনাভাইরাসের কারণে যেহেতু এবার মসজিদে জামাত সীমিত রয়েছে, তাই পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘরেই তারাবি পড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। ঘরেই হাফেজে কোরআন থাকলে বড় জামাত এড়িয়ে খতমে তারাবি ঘরেই পড়া যেতে পারে। নয়তো নিজের ঘরেই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে জামাতের সঙ্গে সুরা তারাবি পড়া যেতে পারে। পাশাপাশি পরদিনই যেহেতু রোজা শুরু হবে তাই সেহরির জন্য যেন সময়মতো ঘুম থেকে ওঠতে পারেন সেজন্য ঘড়ির এলার্ম ঠিক করে রাখা দরকার।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর