বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

সম্রাট জাহাঙ্গীর

মুঘল সাম্রাজ্যের চতুর্থ সম্রাট জাহাঙ্গীর (১৬০৫-১৬২৭)। তিনি জয়পুরের রাজপুত রাজকন্যা ও সম্রাট আকবরের প্রথম পুত্র এবং তাঁর আসল নাম সেলিম। তিনি তাঁর পিতার উত্তরাধিকারী হিসেবে নূরউদ্দিন মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর উপাধি গ্রহণ করে ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দে আগ্রার সিংহাসনে আরোহণ করেন। ক্ষমতা গ্রহণের পর তিনি জনকল্যাণমূলক ১২টি অনুজ্ঞা জারি করেন এবং বিখ্যাত ন্যায়বিচারের শিকল ঝুলিয়ে দেন। পিতার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সময় যারা তাঁর বিরোধিতা করেছিল তাদের সবার প্রতি তিনি সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করেন।

নূরজাহানের সঙ্গে জাহাঙ্গীরের বিয়ে ছিল অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। পারস্যদেশীয় অভিজাতের কন্যা নূরজাহানের পূর্বনাম মেহের-উন-নিসা। বর্ধমানের জায়গির শের আফগান বাংলার গভর্নর কুতুবউদ্দিন খান কোকার হাতে নিহত হলে (১৬০৭) তাঁর স্ত্রী মেহের-উন-নিসা দরবারে ফিরে যান এবং ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে জাহাঙ্গীরের সঙ্গে তাঁর বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাঁকে ‘নূরজাহান’ উপাধি দেওয়া হয়। একজন বিদুষী রমণী নূরজাহান তাঁর স্বামীর ওপর এমন কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিলেন যে, তিনি সাম্রাজ্যের যৌথ শাসকে পরিণত হন। নূরজাহানের নাম বাদশাহর সঙ্গে যৌথভাবে মুদ্রায় খোদাই করা হয় এবং তাঁর আত্মীয়রা সাম্রাজ্যের উঁচুপদগুলো দখল করেন।

জাহাঙ্গীরের অধীনে সাম্রাজ্য উত্তর-পূর্ব দিকে ব্যাপক বিস্তার লাভ করে। কোচবিহার, ত্রিপুরা ও কামরূপ মুঘলদের নিয়ন্ত্রণে আসে। জাহাঙ্গীরের প্রধান সামরিক অর্জন ছিল পূর্ব বাংলার বারো ভূঁইয়া ও আফগানদের দমন। মুঘল কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা ও স্থানীয় বাধাবিপত্তি নিশ্চিহ্নকরণ ছিল সম্রাটের দুধভাই আলাউদ্দিনের কৃতিত্ব। আলাউদ্দিনকে ইসলাম খান উপাধি দেওয়া হয়। তিনি ১৬০৮-১৬১৩ সাল পর্যন্ত বাংলার সুবাদার ছিলেন। মির্জা নাথানের বাহারিস্তান-ই-গায়েবিতে স্থানীয় সামন্তশাসক ও আফগান বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে তাঁর সামরিক অভিযানগুলোর সম্পূর্ণ বিবরণ দেওয়া হয়েছে। বিদ্রোহী আফগান নেতা উসমান খান আফগান সম্পূর্ণরূপে পরাস্ত হন এবং ১৬১২ সালে নিহত হন।

ইসলাম খান বাংলার রাজধানী রাজমহল থেকে ঢাকায় স্থানান্তরিত করেন এবং বাদশাহর নামে এর নামকরণ করেন জাহাঙ্গীরনগর। সীমান্ত এলাকায় মগদের আকস্মিক আক্রমণের আশঙ্কার ভিত্তিতে এটি একটি যথার্থ সিদ্ধান্ত ছিল। ১৬১৩ সালে ইসলাম খানের মৃত্যু হয় এবং তাঁর স্থলাভিষিক্ত হন তাঁর ভাই কাসিম খান। অযোগ্য কাসিম খানের আমলে সীমান্ত এলাকায়  মগ ও  পর্তুগিজদের লুটতরাজ আরম্ভ হয়। কিছু জমিদারও মুঘল শাসনের বিরুদ্ধাচরণ শুরু করেন। কাসিম খানের পরবর্তী শাসক ইবরাহিম খান ফতেহ জঙ্গ (১৬১৭-২৪) একজন দায়িত্বশীল সুবাদার ছিলেন। সর্বপ্রথম তিনি প্রশাসনিক অঞ্চলগুলো সুগঠিত করেন। তিনি বিদ্রোহী শাহজাদা খুররমের (শাহজাহান) সঙ্গে যুদ্ধে নিহত হন। শাহজাদা কিছু সময়ের জন্য বাংলায় কর্তৃত্ব স্থাপন করেন। কিন্তু পরে পরাজিত হয়ে দাক্ষিণাত্যে আশ্রয় গ্রহণ করতে বাধ্য হন। শাহজাদা খুররমের বিদ্রোহ দমনের পর জাহাঙ্গীর একে একে মহব্বত খান (১৬২৫), মুকাররম খান (১৬২৬) ও ফিদাই খানকে (১৬২৭-২৮) বাংলার সুবাদার নিযুক্ত করেন। তাঁদের শাসনকাল ছিল সংক্ষিপ্ত এবং ঘটনাবিহীন। ১৬২৭ সালে কাশ্মীর থেকে ফিরে আসার পথে জাহাঙ্গীরের মৃত্যু হয় এবং লাহোরের কাছে শাহদারায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর