বৃহস্পতিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

রমজানের ফজিলত ও তাৎপর্য

আবু নুশফা

প্রতি বছর রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বার্তা নিয়ে আসে মাহে রমজান। রমজান মাসে আল্লাহর অসীম দয়া, ক্ষমা ও পাপমুক্তির এক সুবর্ণ সুযোগ সৃষ্টি হয় বলেই এ পুণ্যময় মাসের গুরুত্ব ও মর্যাদা এত। রমজান হচ্ছে সিয়াম সাধনা, তারাবি, কোরআন তিলাওয়াত তথা ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যলাভের এক বিশেষ মৌসুম। ‘রমজান’ শব্দটি আরবি ‘রামাদ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রোজা মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের নাম ‘রমজান’। সোনা আগুনে পোড়ালে খাদমুক্ত হয় তেমনি রমজানের দহনে সিয়াম সাধক গুনামুক্ত হয়ে ফেরেশতা-সুলভ জান্নাতি মানুষে পরিণত হয়।

রোজার আরবি হলো সিয়াম। যার অর্থ বিরত থাকা। সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌনাচার থেকে বিরত থাকার নামই রোজা। কারণ রোজাদারকে পানাহার থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি যাবতীয় গুনা থেকেও বিরত থাকতে হয়। এ প্রসঙ্গে রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি রোজা রাখার পরও মিথ্যা বলা ও খারাপ কাজ করা থেকে বিরত থাকে না তার পানাহার ত্যাগ করায় আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ বুখারি।

রমজানে সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষ নিজের যাবতীয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত ও সংযমী বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। সিয়াম সাধনার কঠোর সংযমের সিঁড়ি বেয়ে পরহেজগারির শীর্ষচূড়ায় আরোহণ করাই মাহে রমজানের মূল আবেদন। এ ব্যপারে আল্লাহর বাণী, ‘হে ঈমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর, যেন তোমরা পরহেজগারি অর্জন করতে পার।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩।

রমজানের বিশেষত্ব ও তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ ইরশাদ করছেন, ‘রমজান হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথযাত্রীদের জন্য সু®পষ্ট পথনির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫।

আল কোরআনে আল্লাহ রোজার উপকারিতা সম্পর্কে বলেছেন, ‘তোমরা যদি রোজা রাখো, তবে তা তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর।’  সূরা বাকারা, আয়াত  ১৮৪। মানুষের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও রোজার চেয়ে উত্তম কোনো প্রতিষেধক হতে পারে না। তাই তো রসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, ‘রোজা রাখো, সুস্থ থাকবে’।

তিনি আরও বলেছেন, ‘তোমাদের প্রতি একটি মহান মোবারক মাস ছায়া ফেলেছে। এ মাসে সহস্র মাস অপেক্ষা উত্তম একটি রজনি আছে। যে ব্যক্তি এ মাসে কোনো নেক আমল দ্বারা আল্লাাহর নৈকট্য আশা করে, সে যেন অন্য সময়ে কোনো ফরজ আদায় করার মতো কাজ করল। আর এ মাসে যে ব্যক্তি কোনো ফরজ আদায় করে, সে যেন অন্য সময়ের ৭০টি ফরজ আদায়ের নেকি লাভ করার সমতুল্য কাজ করল। এটি সংযমের মাস আর সংযমের পুরস্কার হচ্ছে জান্নাত।’ মিশকাত।

লেখক : ইসলামবিষয়ক  গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর