শুক্রবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

অন্যায়ভাবে দাম বাড়ানোর পরিণাম ভয়াবহ

যুবায়ের আহমাদ

যারা বেশি লাভের আশায় মজুদদারির মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করবে ইসলাম তাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদের দিকে আঙ্গুল তুলেছেন বারবার। মজুদদারদের প্রতি আল্লাহও ক্ষুব্ধ হন। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন খাদ্য মজুদ রাখল সে আল্লাহ থেকে নিঃসম্পর্ক হয়ে গেল, আল্লাহও নিঃসম্পর্ক হয়ে গেলেন তার থেকে।’ মুসনাদে আহমাদ। হজরত আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি (কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে দাম বাড়ানোর জন্য) ৪০ দিন পর্যন্ত কোনো জিনিস গুদামজাত করে রাখবে, তার এত মারাত্মক গুনা হবে যে, এই সমুদয় সম্পদ দান করে দিলেও তার গুনা মাফের জন্য যথেষ্ট হবে না।’ মিশকাত। মজুদদারির মাধ্যমে কোটিপতি হলেও তার ওপর গজব ও দারিদ্র্য অবধারিত হবে। উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কেউ যদি খাদ্য গুদামজাত করে কৃত্রিম উপায়ে সংকট তৈরি করে আল্লাহ তাকে মহামারী ও দারিদ্র্য দ্বারা শাস্তি দেবেন।’ ইবনে মাজাহ। পক্ষান্তরে যারা মজুদদারি না করে স্বাভাবিকভাবে মুনাফা অর্জন করতে চায় আল্লাহ তাদের ব্যবসায় বরকতের দরজা খুলে দেন। তাকে অপ্রত্যাশিত রিজিক প্রদান করেন। হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘অবাধ ব্যবসায়ী রিজিকপ্রাপ্ত হয় আর পণ্য মজুদদকারী অভিশপ্ত হয়।’ ইবনে মাজাহ। হালাল পন্থায় করলে আল্লাহ রিজিকে বরকত দেবেন আর ব্যবসা পরিণত হবে ইবাদতে। পরকালেও পাওয়া যাবে এর প্রতিদান।

মজুদদারি করে হারাম পথে বেশি উপার্জন করে লাভ কী? একজন মানুষ হারাম উপার্জন করলেই বেশি ভোগ করতে পারবে না; আল্লাহ তার জন্য যতটুকু নির্ধারণ করে রেখেছেন ততটুকুই সে লাভ করবে। উপার্জন হারাম হওয়ার কারণে তার নামাজ, রোজা, হজ, দান-সদকা কিছুই কবুল হবে না। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি অবৈধভাবে সম্পদ সঞ্চয় করে এরপর তা দান করবে, সে এ দানের জন্য কোনো প্রতিদান পাবে না এবং তাতে পাপ ভোগ করতে হবে।’ ইবনে হিব্বান। পক্ষান্তরে একজন মুমিন হালাল পথে থেকে অল্প উপার্জন করলেও তার জন্য পরকালে জান্নাত দিয়ে আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হালাল খাদ্য খেয়ে জীবনযাপন করবে, সুন্নাত অনুযায়ী আমল করবে এবং কোনো মানুষকে কষ্ট দেবে না সে জান্নাতি হবে।’ তিরমিজি। আর আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ব্যবসায় সব ধরনের প্রতারণা, মজুদদারি, মুনাফাখোরি বাদ দিলে দুনিয়ায় তো বরকত আছেই, হাশরের ময়দানেও থাকবে পুরস্কার। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, ‘সত্যবাদী ও বিশ্বস্ত ব্যবসায়ীদের নবী, সিদ্দিক ও শহীদদের সঙ্গে হাশর হবে।’ তিরমিজি।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফিক মসজিদ, বোর্ডবাজার (আবদুল গনি রোড), গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর