শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

সিরিয়া জয়

১১৭৪ সালে নুরউদ্দিনের মৃত্যুর অল্পকাল পরে সালাহউদ্দিন সিরিয়া বিজয়ে ব্যক্তিগতভাবে নেতৃত্ব দেন। দামেস্কের শাসকের অনুরোধে তিনি শান্তিপূর্ণভাবে শহরে প্রবেশ করেন। ১১৭৫ সালের মধ্যভাগে তিনি হামা ও হিমস জয় করেন। জেনগি নেতারা তার বিরোধী হয়ে পড়েন। সরকারিভাবে তারা সিরিয়ার শাসক ছিলেন। এরপর শিগগিরই তিনি জেনগি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করেন এবং আব্বাসীয় খলিফা আল মুসতাদি কর্তৃক মিসর ও সিরিয়ার সুলতান ঘোষিত হন। ১১৮২ সালে আলেপ্পো জয়ের মাধ্যমে সালাহউদ্দিন সিরিয়া জয় সমাপ্ত করেন। তবে জেনগিদের মসুলের শক্ত ঘাঁটি দখলে সমর্থ হননি।

সালাহউদ্দিনের সঙ্গে ক্রুসেডারদের যুদ্ধ হয় ১১৮৭ সালে। এর কয়েক দশক আগে অন্য এক ক্রুসেড যুদ্ধে এই মর্মে বিরতি আসে যে খ্রিস্টানরা মুসলমানদের হজে যাতায়াতে বাধা দেবে না, ব্যবসায় কাফেলাদের ও ধর্মীয় কাজে বিঘœ সৃষ্টি করবে না। এটাই প্রায় চার যুগ ধরে চলছিল। কিন্তু ১১৮৭ সালের জানুয়ারিতে একটি হজযাত্রী কাফেলাকে রেনোল্ড আক্রমণ করেন, মালামাল লুট করেন এবং তাদের মারধর করে জেলে নিক্ষেপ করেন। রেনোল্ডের উদ্দেশ্য ছিল সালাহউদ্দিনকে যুদ্ধে নামানো। অবস্থা ছিল যে, জেরুজালেমের বাদশাহ বল্ডউইন কোষ্ঠরোগে আক্রান্ত হয়ে তার ভায়রা গি অব লুসিগনানকে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব দেন। কিন্তু গির সে ধরনের কোনো দক্ষতা ছিল না। তাই তার এক সাবেক মৈত্রী রেনোল্ড তার কাজে সহায়তা করতেন এবং ‘সুযোগও গ্রহণ করতেন’। রেনোল্ড একজন রক্তলিপ্সু ব্যক্তি ছিলেন। তবে রেনোল্ড কর্তৃক ব্যবসায় কাফেলাকে ইতিপূর্বে হয়রানি করার অভিযোগও আছে। পাশের এলাকায় মুসলমানদের ঐক্য ও শক্তি বৃদ্ধি পাচ্ছিল তাই রেনোল্ড ইচ্ছা করেই সালাহউদ্দিনকে যুদ্ধে নামিয়ে পরাজিত করার পরিকল্পনা করেন। এ উদ্দেশ্যেই একটি নিরপরাধ, নিরস্ত্র, হজগামী কাফেলাকে আক্রমণ! এরই জবাব দিতে আসেন সালাহউদ্দিন আইয়ুবি। ১১৮৭ সালে তিনি ক্রুসেডারদের দারুণভাবে পরাজিত ও জেরুজালেম পুনরুদ্ধার করেন। তাঁর জেরুজালেমে প্রবেশ ও বিজয় ছিল রক্তপাতহীন।

সালাহউদ্দিনের বিজয় ইউরোপে তুমুল ক্ষোভ ও বিকম্পন সৃষ্টি করে। পোপ তৃতীয় আরবান হার্ট অ্যাটাক করে মারা যান। ক্রুসেডাররা তখনো ধারণা করতে পারেনি সালাহউদ্দিন ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিতে আগমন করেছেন। বায়তুল মুকাদ্দাসে খ্রিস্টানদের মহাবিপর্যয়ের পর মুসলিম শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয়। পোপ দ্বিতীয় আরবানুসের আহ্বানে সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির বিরুদ্ধে একতাবদ্ধ হলো সমগ্র খ্রিস্টান শক্তি। ইংল্যান্ডের রিচার্ড দ্য লায়নহার্ট, ফ্রান্সের ফিলিপ অগাস্টাস আর জার্মানির ফ্রেডরিকের নেতৃত্বে প্রায় ৬ লাখ সেনার বিশাল বাহিনী নিয়ে খ্রিস্টানদের পবিত্র স্থান আক্রায় মুসলমানদের অবরোধ করা হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর