শিরোনাম
শনিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

মুসলিম বিশ্বে মাহে রমজানের আগমন

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদি

মুসলিম বিশ্বে মাহে রমজানের আগমন

রহমত, মাগফিরাত, নাজাতের মাস রমজানের আগমন হয় বছর ঘুরে মুক্তির পয়গাম নিয়ে। ইসলামের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম হলো সিয়াম (রোজা)। নামাজ ও জাকাতের পরই মুসলমানের প্রতি আল্লাহ যে ইবাদত ফরজ করেছেন তা হচ্ছে মাহে রমজানের রোজা। দ্বিতীয় হিজরি সালে উম্মতে মুহাম্মদীর ওপর রমজানের রোজা ফরজ করা হয়। তবে এ রোজা অন্যান্য জাতির ওপরও ফরজ ছিল। আল কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের জন্য সিয়ামের বিধান দেওয়া হলো, যেমন বিধান তোমাদের পূর্ববর্তীদের দেওয়া হয়েছিল, যাতে তোমরা মুত্তাকি (আল্লাহভীরু) হয়ে চলতে পার।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩।

‘রামাদান’ শব্দটি আরবি ‘রামদ’ ধাতু থেকে উদ্ভূত। এর আভিধানিক অর্থ হচ্ছে দহন, প্রজ্বলন, জ্বালানো বা পুড়িয়ে ভস্ম করে ফেলা। রমজানে সিয়াম সাধনা তথা রোজা পালনের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মানুষ নিজের সমুদয় জাগতিক কামনা-বাসনা পরিহার করে আত্মসংযম ও সুশৃঙ্খল শান্তিময় জীবন যাপন করে এবং ষড়রিপুকে দমন করে আল্লাহর একনিষ্ঠ অনুগত বান্দা হওয়ার সামর্থ্য অর্জন করে। মাহে রমজান মানুষের অভ্যন্তরীণ যাবতীয় অহংকার, কুপ্রবৃত্তি, নফসের দাসত্ব জ্বালিয়ে-পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় বলে এ মহিমান্বিত মাসের আরবি নাম ‘রামাদান’। ইসলামের অন্যান্য বহু আদেশ-নির্দেশের মতো রোজাও ফরজ। আল্লাহ কেবল মাহে রমজানের রোজা নির্দিষ্ট ও এতেই সীমাবদ্ধ করে দেননি, বরং শরিয়তসম্মত কোনো অনিবার্য কারণবশত কেউ রমজানে রোজা পালন করতে না পারলেও এরপর অন্য যে কোনো সময় রোজার কাজা আদায় করার পথও উন্মুক্ত রেখেছেন। ইরশাদ হচ্ছে, ‘রমজান মাস, এতে মানুষের দিশারি এবং সৎ পথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্য-মিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম পালন করে এবং কেউ অসুস্থ থাকলে কিংবা সফরে থাকলে অন্য সময় এর সংখ্যা পূরণ করতে হবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান এবং যা তোমাদের জন্য কষ্টকর তা চান না, এজন্য যে, তোমরা যেন রোজার সংখ্যা পূর্ণ করবে এবং তোমাদের সৎ পথে পরিচালিত করার কারণে তোমরা আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করবে, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করতে পার।’ সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৫।

মাহে রমজানের অন্যতম ফজিলত হলো, এ মাস কোরআন নাজিলের মাস। মূলত এ কারণেই এ মাসের এত মর্যাদা। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে এবং জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘রমজান এলে জান্নাতের দ্বারসমূহ উন্মুক্ত রাখা হয়, জাহান্নামের দ্বারসমূহ বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং শয়তানদের শৃঙ্খলিত করা হয়।’ বুখারি। রোজার প্রতিদান সম্পর্কে হাদিসে কুদসিতে আল্লাহ বলেন, ‘বনি আদমের সব আমল তার জন্য, অবশ্য রোজার কথা আলাদা, কেননা রোজা আমার জন্য এবং আমিই এর পুরস্কার প্রতিদান দেব।’ বুখারি। রোজা রাখার মাধ্যমে গুনার কাফফারা হয় এবং মাগফিরাত লাভ হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রামাদানে রোজা রাখবে, তার আগের সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’ বুখারি। শুধু তাই নয়, রোজা রাখার মাধ্যমে জান্নাত লাভ হয়। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘জান্নাতে একটি দরজা রয়েছে যাকে বলা হয় রাইয়ান। কিয়ামতের দিন এ দরজা দিয়ে রোজাদাররা প্রবেশ করবে। অন্য কেউ এ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না।’ বুখারি।

সিয়াম রোজাদারের জন্য কিয়ামতের দিন সুপারিশ করবে বলে ঘোষণা করেছেন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি ইরশাদ করেন, ‘কিয়ামতের দিন রোজা ও কোরআন বান্দার জন্য সুপারিশ করবে। রোজা বলবে, হে রব! আমি তাকে দিনের বেলায় পানাহার ও প্রবৃত্তির কামনা থেকে বাধা দিয়েছি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ কবুল করুন। কোরআন বলবে, আমি তাকে রাতের বেলায় ঘুমাতে দিইনি; সুতরাং তার ব্যাপারে আমার সুপারিশ গ্রহণ করুন। ফলে এ দুয়ের সুপারিশ গ্রহণ করা হবে।’ মুসনাদে আহমাদ।

তাকওয়া অর্জনের এ মুবারক মাসে মুমিনদের ওপর অর্পিত হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব, সৃষ্টি হয়েছে পুণ্য অর্জনের বিশাল সুযোগ এবং প্রবৃত্তিকে নিয়ন্ত্রণ করে মহান চরিত্র অর্জনের সুন্দর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা। এ অর্পিত দায়িত্ব পালন ও সুবর্ণ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে আজ সারা বিশ্বের মুসলিমদের উচিত চারিত্রিক অধঃপতন থেকে নিজেদের রক্ষা করা, চেতনা জাগ্রত করা এবং সব ধরনের শয়তানি শক্তির বলয় থেকে মুক্ত হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠার প্রতিজ্ঞাকে সুদৃঢ় করা। মাহে রমজানে রোজার মাধ্যমে আল্লাহ মানুষের কুপ্রবৃত্তিকে দমন করেন। রিপুর তাড়না থেকে তাকে মুক্ত করে তার ভিতর তাকওয়া ও আল্লাহপ্রেম জাগ্রত করতে চান। এ সত্য-সুন্দরের পথ তাকে সাফল্য ও মুক্তির দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে। শুধু পানাহার-পাপাচার বর্জনই নয়, রোজা পালনের মাধ্যমে করোনাভাইরাসের মহামারীর এই সময়ে আমরা যেন আল্লাহর প্রিয় বান্দা রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রিয় উম্মত হয়ে জান্নাতের মেহমান হতে পারি, আল্লাহ আমাদের সে তৌফিক দান করুন।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন প্রিন্সিপাল, মণিপুর বাইতুর রওশন মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর