সোমবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ

মেজর জেনারেল এ কে মোহাম্মাদ আলী শিকদার পিএসসি (অব.)

জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ

অতি ক্ষুদ্রাতি ক্ষুদ্র একটি ভাইরাস পৃথিবীকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পরম ও চরম ক্ষমতাধর বৈশ্বিক শক্তিধর রাষ্ট্র দিশাহারা। কখন কী করা উচিত বুঝে উঠতে পারছে না। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সকালে যা বলছেন বিকাল পর্যন্ত তা ঠিক রাখতে পারছেন না। লকডাউনের ফলে ধাই ধাই করে বেকারত্বের ঊর্ধ্বগতিতে ব্যবসায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ঘোষণা দিলেন কোন রাজ্যের লকডাউন কখন তুলে নিতে হবে সে বিষয়ে তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত দিবেন। রাজ্যের গভর্নররা উদ্বিগ্ন হয়ে পাল্টা বলে দিলেন মানুষকে বাঁচিয়ে রাখাই এখন এক নম্বর প্রধান কাজ। মানুষের জীবন বিপন্ন হয় এমন ঘোষণা প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে এলে সেটি তারা মানবেন না। সাংবিধানিক সংকট এড়াতে তড়িঘড়ি করে পরের দিন ট্রাম্প সম্পূর্ণ পিছু হটে বললেন, লডকাউন তুলে নেওয়ার সম্পূর্ণ দায়িত্ব থাকবে গভর্নরদের হাতে। লেখার শুরুতে উদাহরণটি দিলাম এই কারণে, লকডাউন থেকে বেকারত্ব, অর্থনৈতিক স্থবিরতা ও দুর্ভিক্ষের ভয় ভার্সেস করোনার আক্রমণ থেকে এই মুহূর্তে মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা, কোনটা কীভাবে রক্ষা হবে তার পথ ও পন্থা নিয়ে বিশ্বের নেতারা কতখানি চাপ ও দ্বিধাদ্বন্দ্বের মধ্যে আছেন এটি তার একটা ছোট প্রতীকী উদাহরণ মাত্র। ধনে-জনে, সম্পদে, ক্ষমতায়, মেধা-মনন, গবেষণা এবং বিজ্ঞান প্রযুক্তিতে সর্বশ্রেষ্ঠ দেশ আমেরিকার যখন এ অবস্থা তখন আমাদের মতো গরিব দেশগুলোর অবস্থা কী হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। এ পর্যন্ত তথ্যমতে, করোনার ভ্যাকসিন ও ওষুধ বাজারে আসতে এ বছরের শেষ থেকে আগামী বছরের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। তারপর সেটি আমাদের মতো দেশে উৎপাদন, বাজারজাতকরণ এবং কোটি কোটি মানুষকে ভ্যাকসিন প্রদান ও অ্যান্টিবডি টেস্ট, সে তো এক মহাকর্মযজ্ঞ, আরও অনেক সময়ের ব্যাপার। ভ্যাকসিন না আসা পর্যন্ত করোনা থেকে বাঁচার একমাত্র পথ সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সন্দেহভাজনদের অন্তত ১৫ দিন কঠোরভাবে বিচ্ছিন্ন থাকা নিশ্চিত করা। পূর্ব প্রস্তুতি থাকা এবং অত্যন্ত কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া, তাইওয়ান, অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কিছু দেশ অনেক সাফল্য পেয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার মতো গণতান্ত্রিক দেশও বাইরের দেশ থেকে আসা নাগরিকদের বিমানবন্দর থেকে সোজা হোটেলে নিয়ে রুমে ঢুকিয়ে ১৫ দিন তালাবদ্ধ করে রেখেছে। কিন্তু বাংলাদেশসহ অনেক দেশই তা পারেনি, এখনো পারছে না। বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের ম্যানেজমেন্ট ব্যর্থতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় খেলাফত মজলিশের এক নেতার মৃত্যুতে জানাজার জন্য লক্ষাধিক মানুষের সমাগম, মানুষকে ঘরে রাখার জন্য বাহিনীসমূহের ঘর্মাক্ত নিরুপায় অবস্থায়, ভারতে এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কর্মরত শ্রমিকসহ সব মানুষের বাড়িতে ফেরত আসার ঢল এবং আমেরিকায় লকডাউন তুলে নেওয়ার দাবিতে একশ্রেণি মানুষের আন্দোলন ইত্যাদি বলে দিচ্ছে একনাগাড়ে দীর্ঘদিন সর্বত্র একই রকম লকডাউন বজায় রাখা হবে প্রায় অসম্ভব কাজ। অন্যদিকে বিশ্বের বড় বড় বিশেষজ্ঞ বলছেন, প্রাকৃতিকগতভাবে করোনাভাইরাস নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার কোনো লক্ষণ নেই। আর এটা এমনই ভয়ঙ্কর সংক্রমক যে, একজনের ভিতরে প্রবেশ করতে পারলে স্বল্প সময়ের মধ্যে শত শত মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিপদের কথা হলো, কোনোরকম লক্ষণ ছাড়াই একজন এই ভাইরাস নিয়ে ঘুরে ফিরে বেড়াতে পারে এবং সবার অদৃশ্যেই অন্যদের ভিতরে ছড়িয়ে দিতে পারে। গ্লোবাল পাবলিক হেলথের চেয়ারপারসন অধ্যাপক দেবী শ্রীধর এবং ব্রিটিশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ডাক্তার চান্দ নাগপাল ভারতের এনডিটিভির সঙ্গে সাক্ষাৎকারে বলেছেন, এই সংকট থেকে উত্তরণের শর্টকাট কোনো রাস্তা নেই।

সব দেশকে দীর্ঘ মেয়াদি চিন্তাভাবনা করতে হবে। একদিকে  দুর্ভিক্ষের হাতছানি এবং তাহলে লক্ষ কোটি মানুষের মৃত্যুর আশঙ্কা। সেটি ঠেকাতে হলে কলকারখানা, ব্যবসা-বাণিজ্য খুলে দেওয়া ছাড়া উপায় নেই। অন্যদিকে ভ্যাকসিন ও ওষুধ বাজারে আসার আগে তা করা মানে মৃত্যুর আরও বড় ভয়ঙ্কর দানব করোনার মধ্যে নিক্ষেপিত হওয়া। দুই দিকেই মৃত্যুর প্রবল আশঙ্কা। বাংলার অতি পুরনো কথা, জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ। তবে এ কথা ঠিক, এই মুহূর্তে মানুষ না খেয়ে মরাকে যতটুকু ভয় পাচ্ছে, তার থেকে শতগুণ বেশি ভয় পাচ্ছে করোনাকে। কী করা যায়। অধ্যাপক দেবী শ্রীধর এবং ডাক্তার চান্দ নাগপাল এই উভয় সংকট মোকাবিলায় কিছু পরামর্শ দিয়েছেন। প্রথমত, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সঙ্গে সুর মিলিয়ে দুজনই বলেছেন, এই সময়ে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন তিনটি কাজের, আর তা হলো টেস্ট, টেস্ট অ্যান্ড টেস্ট। অর্থাৎ ব্যাপকহারে গণটেস্ট কেবল এই মুহূর্তে মানুষকে রক্ষা এবং আবার কাজে ফিরিয়ে আনতে পারে। টেস্ট তো করতে হবে। তার সঙ্গে পজিটিভ চিহ্নিত ব্যক্তির সঙ্গে গত ১৫ দিনের কন্টাক্ট বা সংযোগে আসা মানুষকে অতি দ্রুত ট্রেসিং বা খুঁজে বের করে তাদের সবাইকে অন্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন রাখার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে করোনার বিস্তার অবধারিতভাবে কমে যাবে বলে ওই দুজন বিশ্বখ্যাত বিশেষজ্ঞ মত প্রকাশ করেছেন। খবরে দেখলাম ভারতের হাসপাতালগুলো কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের জন্য আলাদা ওয়ার্ক ফোর্স তৈরি করছে। ব্যাপকহারে টেস্টের ফলে একসঙ্গে তিনটি কাজ হবে। মানুষ শঙ্কামুক্ত হবে, পজিটিভ ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর হওয়ার আগেই চিকিৎসা দেওয়া যাবে এবং একই সঙ্গে আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে গত ১৫ দিনে অন্য যেসব মানুষের সংযোগ ঘটেছে তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত এবং বিচ্ছিন্ন করা যাবে। টেস্ট বিশ্বাসযোগ্য ও সারা দেশে ব্যাপকহারে করতে হলে এর সঠিক মান কঠোর হস্তে নিয়ন্ত্রণ ও নিশ্চিত করতে না পারলে ফল হিতেবিপরীত হতে পারে। গত ১৭ এপ্রিল ডেইলি স্টারের সম্পাদকীয়তে সুনির্দিষ্ট তথ্যসহ টেস্টের গুণগত মান সম্পর্কে যে মতামত প্রকাশিত হয়েছে তাতে এখনই সতর্ক না হলে আরও বিপদ আসন্ন। ব্রিটেনের জনসংখ্যা প্রায় পৌনে সাত কোটি। ব্রিটিশ সরকার বলেছে দৈনিক এক লাখ টেস্টের সক্ষমতা অর্জন করার পরই কেবল তারা পর্যায়ক্রমে লকডাউন তুলে নেওয়া শুরু করবেন। বাংলাদেশের লোকসংখ্যা প্রায় ১৭ কোটি। তাই একটা নিরাপদ পরিস্থিতি তৈরির লক্ষ্যে টেস্ট করতে হলে ১৫-২০টি কেন্দ্রে টেস্টের ব্যবস্থায় তা হবে না, এর বিস্তার ঘটাতে হবে দেশব্যাপী। অধ্যাপক দেবী শ্রীধর ও ডাক্তার চান্দ নাগপালের মতে টেস্টের সঙ্গে নিরাপদ ও আস্থাশীল চিকিৎসা সহজলভ্য করা একান্ত প্রয়োজন। চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত সবাইকে প্রয়োজন মতো সুরক্ষা সামগ্রী প্রদান তাদের কথায় বারবার উঠে এসেছে। করোনায় বৈশ্বিক গড় মৃত্যুর হার এখন শতকরা ছয় ভাগ। বাংলাদেশে শতকরা হিসেবে মৃত্যুর হার সম্পর্কে কোনো তথ্য কর্তৃপক্ষ দেয়নি। ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত সর্বমোট আক্রান্ত ৪১৮৬। তার মধ্যে মোট মৃত্যু ১২৭ জন। সুস্থ হয়েছেন ১০৮ জন। সুস্থ হওয়ার চেয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ব্রিফিংয়ে বলা হলো, আক্রান্তদের সেরে উঠতে বেশি সময় লাগছে বলে মৃত্যুর সংখ্যা বেশি দেখা যাচ্ছে। তবে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সঙ্গে এই কথার মিল নেই। ভারতে ২২ এপ্রিল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ২০৪৭১। তার মধ্যে মৃত্যু ৬৪০, ভালো হয়েছেন ৩৯৭৬ জন। ভালো হওয়ার সংখ্যা অনেক বেশি। ভারতের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেরালা রাজ্যে চিকিৎসা ব্যবস্থা অন্যান্য রাজ্যের চেয়ে উন্নতমানের হওয়ায় আক্রান্ত ৪২৭ জনের মধ্যে মাত্র তিনজন মারা গেছেন, সুস্থ হয়েছেন ৩২৩ জন। বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসার হাল কেমন তা বোঝা যায় বাংলাদেশ প্রতিদিনের ২২ এপ্রিল সংখ্যার প্রথম পৃষ্ঠার দিকে তাকালে সেখানে তিনটি শিরোনাম হাসপাতালের দুর্বিষহ অভিজ্ঞতা, এটা কি মৃত্যু নাকি হত্যা এবং তৃতীয়টি হলো ‘বিপর্যস্ত হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা’ প্রতিবেদনে উঠে আসা মানুষের করুণ আর্তনাদ ও আহাজারিতে হৃদয় ভেঙে কান্না যদি কারও না আসে তাহলে তাকে সত্যিকার মানুষ বলা যাবে কিনা সন্দেহ। একবার ভেবে দেখুন ওই অবস্থা আমাদের যে কারও হতে পারত, হতে পারে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের ডেইলি ব্রিফিংয়ে মন্ত্রীসহ বড় কর্তারা কথা বলছেন। এর উদ্দেশ্য কী? যদি কিছু তথ্য সরবরাহ করাই উদ্দেশ্য হয় তাহলে সেটা মিডিয়ায় পাঠিয়ে দিলেই তো মানুষ জানতে পারে। তারা তো কোনো প্রশ্ন নিচ্ছেন না। তাহলে সশরীরে উপস্থিত হওয়ার প্রয়োজন কী। সশরীরে উপস্থিত হয়ে যদি কথা ও ভঙ্গিতে ব্যক্তিত্বের প্রকাশ না থাকে, অনুপ্রেরণার পরিস্ফুটন না ঘটে তাহলে সশরীরে আসার তো কোনো মানে হয় না। সারা চাকরি জীবনে ও দায়িত্বকালে যারা নিজেকে নিয়েই শুধু ব্যস্ত থেকেছেন, তাদের কথায় মানুষ অনুপ্রাণিত হবে কী করে। তারা এতদিন কী করছেন সেটা তো হাসপাতালগুলোর হালই বলে দিচ্ছে। অতিরিক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের দরকার নেই। তাদের ব্রিফিংয়ের কথার সঙ্গে গ্রাউন্ড বাস্তবতার কোনো মিল নেই। গত এক মাসে, ভয়াবহতা শুরু হওয়ার পর মন্ত্রী, সচিব, মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ কয়টা হাসপাতালে কয়দিন এসে সরজমিনে সব দেখেছেন এবং সেখানে ডাক্তারসহ সবার সঙ্গে কথা বলেছেন জানি না। দুঃসময়ে ফ্রন্টলাইনে যারা কাজ করছেন তাদের জন্য উৎসাহ উদ্দীপনা ও প্রেরণাই আজ সবচাইতে বড় প্রয়োজন। দূর থেকে টেলিফোনে কথা বলা আর সামনা সামনি সব দেখা ও কথা বলার মধ্যে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। চার দেওয়ালের মধ্যে বসে হুকুম দেওয়া অনেক সহজ। ইংরেজ কবি আলফ্রেড লর্ড টেনিসনের অসাধারণ কবিতা চার্জ অব দ্য লাইট ব্রিগেডের কথা ডু অ্যান্ড ডাই হুকুম আজকের দিনে অচল। পিছন থেকে হুকুম দিয়ে এখন আর যুদ্ধে জয় পাওয়া যায় না। আজকের বাস্তবতা হলো কমান্ডারকে সৈন্যদের সামনে দাঁড়িয়ে বলতে হয় ফলো মি। ৬৪টি জেলার মধ্যে ২৩ এপ্রিল পর্যন্ত ৫৮ জেলায় করোনা ছড়িয়ে পড়েছে। খোদার রহমতে শহরের বস্তিগুলোতে এখনো সংক্রমণ হয়নি। তবে গার্মেন্ট খোলার পর সেখানকার ঝুঁকি বৃদ্ধি পাবে। খোদা না করুক বস্তিগুলোতে করোনা ঢুকে গেলে কী হবে একমাত্র আল্লাই জানেন। সামাজিক, শারীরিক দূরত্ব এবং বিচ্ছিন্ন করা কতটুকু সম্ভব হবে। এখনই নজর দেওয়া উচিত। বাংলাদেশে করোনা টেস্টিং এবং চিকিৎসা সেবার বিস্তৃতি ঘটাতে সরকারি ও বেসরকারি সব হাসপাতাল ও ক্লিনিককে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত করা এখন আবশ্যক হয়ে পড়েছে। টেস্টিং ও চিকিৎসার পর তৃতীয় বিষয়টি বিশেষজ্ঞরা বলছেন সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব এবং সবার জন্য সব সময় মাস্ক ও গ্লোবস ব্যবহারের মানসিক প্রস্তুতি ও অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। মানবজীবনের কোনো কিছুই আর পূর্বের মতো থাকবে না। সবরকম কর্মস্থল ও কলকারখানায় নিজস্ব সুবিধা অনুযায়ী শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার স্ট্যান্ডিং অপারেটিং প্রসিডিউর তৈরি এবং তা অনুসরণ বাধ্যতামূলক করা উচিত। মনে রাখা প্রয়োজন এটা বৈশ্বিক সংকট। পৃথিবীর যে কোনো একটি দেশে এর রেশ থাকলে সেটি আবার বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়তে পারে। লকডাউন খুলতে হলে পর্যায়ক্রমে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে করার কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা। চার-ছয় মাসের মধ্যে সব কিছু একদম ঠিক হয়ে যাবে এমন ভাবনার সঙ্গে বিশ্বের কোনো বিশেষজ্ঞ একমত হচ্ছেন না। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাতে বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ ছিল। তার কতটুকু সদ্ব্যবহার হয়েছে জানি না। তবে পত্রিকায় প্রায়ই খবর বের হয় অমুক হাসপাতালের অমুক বিভাগে কোটি কোটি টাকার যন্ত্রপাতি কেনার পর পড়ে আছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে, ব্যবহারের উপযোগী নয়। কোনো অপকর্মকারীকে যেমন ছাড় দেওয়া উচিত নয়, তেমনি এই জাতীয় দুর্যোগের সময় শুধু পিছনের দিকে তাকালে চলবে না। জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় বাজেট ও যন্ত্রপাতি ক্রয় এবং তা যথাস্থানে স্থাপন করা এখন প্রধান কাজ। যুদ্ধের সময় যেমন অনেক নিয়ম-কানুন শিথিল করে অত্যন্ত দ্রুতগতিতে যুদ্ধ সামগ্রী ক্রয় করা হয়, তেমনি এখন করোনা মোকাবিলার জন্যই সেটাই করতে হবে। এর জন্য একটি জাতীয় জরুরি বাস্তবায়ন কমিটি করা যেতে পারে। সেই কমিটিতে সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে সরকারের অনুগ্রহ প্রার্থী নয় এমন সিভিল সমাজের প্রতিনিধি রাখা গেলে একটা ভারসাম্য থাকবে। অর্থনৈতিক স্থবিরতা কাটাতে আগাম পরিকল্পনা দরকার। তবে এই মুহূর্তে সবার মূল ফোকাস করোনা মোকাবিলার দিকেই থাকতে হবে। হয়েছে অবস্থা এই, সামনে করোনা পিছনে অর্থনৈতিক মহামন্দা ও দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা। কোন দিকে যাব। তাই জলে কুমির ডাঙ্গায় বাঘ এমন পরিস্থিতিতে সাহস, সততা, মানবতা, স্বচ্ছতা এবং দেশের প্রতি ভালোবাসাই কেবল সঠিক পথ দেখাতে পারে।

লেখক : রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক।

[email protected]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর