মঙ্গলবার, ২৮ এপ্রিল, ২০২০ ০০:০০ টা

রমজানের বরকতে আল্লাহ করোনা থেকে মুক্তি দিন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

রমজানের বরকতে আল্লাহ করোনা থেকে মুক্তি দিন

মুসলিম জাহানের বহু কাক্সিক্ষত মাহে রমজান এসেছে। পরম দয়ালু আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করি, তিনি যেন আমাদের বিশ্বব্যাপী করোনার এই মহাদুর্যোগের প্রাদুর্ভাব থেকে রক্ষা করেন, আমাদের রোজা কবুল করেন, সারা পৃথিবী থেকে সমস্ত বালা-মুসিবত দূর করেন, পবিত্র মাহে রমজানে বিশ্বমানবতার পক্ষে দয়াময় মহাপ্রভু আল্লাহ রব্বুল আলামিনের কাছে কায়মনে এই প্রার্থনা করি।

এক অসহ্য দমবন্ধ পরিবেশে জীবন চলছে। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সারা পৃথিবী স্তব্ধ। এটা খুবই সত্য, বড় বড় মহাশক্তিধর উন্নত দেশের চাইতে ঘনবসতি বাংলাদেশে আমরা এখনো ভালোই আছি। এতে কারও কোনো সন্দেহ নেই- আল্লাহর রহমতে বালা-মুসিবত কেটে গিয়ে আমরা আবার আলোর মুখ দেখব। করোনার প্রাদুর্ভাবে বিরোধী দলের নেতা বেগম খালেদা জিয়ার দ- ছয় মাসের জন্য স্থগিত রেখে তাঁকে মুক্তি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবনে মানবিক শ্রেষ্ঠ সিদ্ধান্ত বলে ভবিষ্যতে বিবেচিত হবে। এক মাস কয়েকদিন তিনি কারাগারের বাইরে। এ এক মাসে কারও সঙ্গে দেখা করেননি। বলতে গেলে হোম কোয়ারেন্টাইনে আছেন- এটা খুবই ভালো কথা। পত্রিকায় দেখলাম রোজার পর তিনি লোকজনের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ-মেলামেশা করবেন। জানি না তাঁকে কীভাবে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কোনো শর্ত থাকলে সেই শর্তের মধ্যে তাঁকে থাকতে হবে। আর এ ছয় মাস বা যত দিন মুক্ত তত দিন তিনি দেশের স্বাধীন নাগরিক এমন হলে যা খুশি তা করতে পারবেন। আর যদি সাজা স্থগিত রেখে মুক্তি দেওয়া হয় তাহলে সরকারেরও নানা শর্ত থাকতে পারে। দেখা যাক, আগামীতে কী হয়! তবে ৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর করোনার এই ভয়াবহ প্রাদুর্ভাবের মুহূর্তে মুক্ত থাকা দেশ ও জাতির জন্য এক পরম স্বস্তি। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে কোনো সরকারের এমন সুখকর সিদ্ধান্ত আর হবে না। তবে এই সময় জেলখানার কয়েদি-আসামিদেরও মুক্তি দেওয়া উচিত ছিল। কতটা কি হচ্ছে জানি না, তবে শুনেছিলাম সত্তরোর্ধ্ব ও অন্যদের মুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। তবে আগেকার দিনের কয়লার ট্রেনের মতো ঝিকঝিক করে চললে হবে না, সিদ্ধান্ত রকেট গতিতে নিতে হবে। পত্রিকায় দেখলাম, থানার ওসি বাড়িতে বসে থেকে রণক্ষেত্রে আছেন বলে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এসপিকে জানিয়েছিলেন। মোবাইল ফোন হওয়ায় এখন অনেকেই ও রকম বলে। আছে ময়মনসিংহ, বলে মতিঝিল। মানুষের ভিতরে আল্লাহ বাস করেন। মিথ্যা বলা পাপ- এটা যখন কেউ ভুলে যায় তখন তাকে সামাল দেওয়া কঠিন। তাই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলায় মাওলানা জুবায়ের আহমদ আনসারীর নামাজে জানাজার ঘটনায় ওসি শাহাদৎ হোসেন টিটু ঘরে বসে মিথ্যা রিপোর্ট করায় থানা থেকে তুলে আনা হয়েছে। তাকে নাকি আবার জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করতে বলা হয়েছে। দায়িত্ব অবজ্ঞায় যার জেল-জরিমানা হওয়ার কথা, তাকে যদি তদন্তের আগেই দায়িত্ব দেওয়া হয় তাহলে দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা খুব একটা সহজ হবে না। করোনার জন্য দেশে কোয়ারেন্টাইন চলছে সেই মার্চের গোড়া থেকে। একটা প্রশ্ন কিছুতেই মন থেকে দূর করতে পারছি না। চীনে আক্রান্ত উহান প্রদেশ থেকে বাংলাদেশ বিমানে প্রথম যাত্রায় ১৬৩ জন আমাদের বীর সন্তানকে আনা হয়েছিল। তারা দারুণ অনাদরে অব্যবস্থার মধ্যে আশকোনা হজক্যাম্পে ছিলেন। তাদের একজনও করোনায় আক্রান্ত ছিলেন না। ১৪ দিন কারা নির্যাতনের চাইতে বেশি অনাদরে থেকে বাড়ি ফিরেছেন। প্রায় দুই মাস তাদের কোনো খবর নেই। মনে হয় ভালোই আছেন। আল্লাহ তাদের ভালো রাখুন এটাই কামনা করি। তাই করোনা নিয়ে আমরা যথাযথভাবে অগ্রসর হতে পারছি কিনা বুঝতে পারছি না। আমি ২৪ মার্চ গণপরিবহন বন্ধের আগে আগে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছিলাম। খুব একটা বেশি গাড়ি-ঘোড়া ছিল না। মিরপুর সেতু থেকে নামার সময় পুলিশের ব্যারিকেডে একজন সাব ইন্সপেক্টর সালাম দিয়ে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘স্যার, ভালো আছেন? স্যার, ভালো আছেন?’ অনেকেই বলে। সবার কণ্ঠেই দরদ থাকে। কিন্তু তার কণ্ঠে দরদ ছিল অভাবনীয়, হৃদয়কাড়া। মিরপুর সেতু এমনিতেই আমার প্রাণের সেতু। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর সকাল ৯টায় মিরপুর সেতুতে পা রেখেছিলাম। যদিও সেটা এখনকার সেতু নয়। সেটা এখনকার সেতুর পাশে লোহার জীর্ণশীর্ণ সেতু। যে সেতুর নাম হওয়া উচিত ছিল ‘স্বাধীনতা সেতু’। সে সেতুর ওপর দিয়ে আমরা ঢাকা জয় করেছিলাম, নিয়াজির গুহায় গিয়ে তাকে বন্দী করেছিলাম। সেই সেতু আজ অবহেলা-অনাদরে পড়ে আছে। যেটা মুক্তিযুদ্ধের স্মারক হিসেবে সংরক্ষিত হওয়ার কথা। কবে কোন দিন পুরান জীর্ণ হওয়ার কারণে ভেঙে ফেলা হবে, যুদ্ধজয়ের স্বাধীনতার কোনো চিহ্নই থাকবে না। তবে সেতুটি আমার কাছে খুবই প্রিয়। মিরপুর দিয়ে যাওয়া-আসার পথে প্রতিবারই মনে-প্রাণে শিহরণ জাগায়।

১৭-১৮ দিন পর টাঙ্গাইল গিয়েছিলাম। এই ১৭-১৮ দিনে দোতলা থেকে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামিনি। শোয়ার ঘর আর বসার ঘর, কোনো কোনো সময় ছাদ- এই ছিল বিচরণ। দু-একবার গোসল করে হাত-মুখ ধুয়েমুছে কুশিমণিকে কোলে নিয়েছি, দীপের মাকে পাশে বসিয়েছি। এই তো জীবন! আবার রোজার জন্য ২৩ এপ্রিল দুপুরের দিকে টাঙ্গাইল থেকে ঢাকায় এসেছি। টাঙ্গাইলেও ঘরের বাইরে বের হইনি। যা কাজকর্ম টেলিফোনেই করেছি। ২৩ তারিখ মিরপুর ব্রিজ পার হওয়ার পথে সেই সাব ইন্সপেক্টর ঠিক একইভাবে জিজ্ঞাসা করলেন, ‘স্যার, ভালো আছেন?’ মনে হলো এই দুর্যোগ-দুর্বিপাকে আমার বাবা-মা, চাচা-চাচি, ফুপু-খালাদের মধ্যে কেউ যেন বলছে, ‘বাবা, ভালো আছ?’ এত দরদ পুলিশের কণ্ঠে ভাবাই যায় না। আমার কলিজার ছেলে-মেয়ে, আমার স্ত্রীর চাইতেও যেন অনেক বেশি দরদ তার কণ্ঠে। তাই মাঝেমধ্যে ভাবী, এত দরদ যে পুলিশের কণ্ঠে সেই পুলিশ কী করে দেশের মালিক সাধারণ মানুষকে লাঠিপেটা করে? সবকিছুতেই আলো-অন্ধকার। এখানেও তাই।

করোনা নিয়ে নানা জন নানা কথা বলছে। এ উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা যতক্ষণ করোনার প্রতিষেধক আবিষ্কার না হবে ততক্ষণ থেকেই যাবে। তবে এই কত দিনে করোনা নিয়ে যা বুঝলাম, কোনো কোনো ক্ষেত্রে আমরা খুব একটা ঠিক করছি না। এটা পরিষ্কার, করোনা জীবদেহ ছাড়া বাইরে বেশিক্ষণ বাঁচতে পারে না। প্রাণহীন দেহে তার বেঁচে থাকার সময় দু-তিন ঘণ্টা। খুব বেশি হলে চার ঘণ্টা। আমাদের দেশে যে কোনো লাশ দাফন-কাফন করতে চার ঘণ্টার বেশি লাগে। তাহলে অত সমস্যা কী? বাবা মারা গেলে উপস্থিত থেকেও সন্তান যদি তার কবর দিতে না পারে, তার চাইতে বড় দুঃখের আর কী হতে পারে। তাই এ ব্যাপারে যতটা সম্ভব আমাদের ভেবে দেখা দরকার। করোনার হুমকি আমাদের আরও কত দিন বয়ে বেড়াতে হবে কেউ জানি না। তাই বিষয়টা নিয়ে যতটা যতœ নেওয়া যায় ততই মঙ্গল। এ ক্ষেত্রে মনে হয় না স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় যথাযথভাবে কাজ করতে পারছে। গণস্বাস্থ্যের করোনা চিহ্নিতকরণ কিট গ্রহণ করতে কাউকে পাওয়া যায়নি, এটা মোটেই ভালো কথা নয়। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। মানুষের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হতে পারে। যে যাই বলুন, নেত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই বুঝেছেন জনগণকে লাঠিসোঁটা দিয়ে ঘরে রাখা যাবে না, তাদের বলে-কয়ে-বুঝিয়ে ঘরে রাখতে হবে।

করোনায় আমার ব্যক্তিগত সহকারী ফরিদ আহমেদের দুই কথা বলি। প্রায় ৩৬ বছর সে আমার সঙ্গে কাজ করে। গরিব মানুষের ছেলে। ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে ’৮২-’৮৩ তে বর্ধমান গিয়েছিল। বাসে যাবে সে জায়গায় জীবনে প্রথম প্লেনে চেপে গিয়েছিল। টিকিট দিয়েছিল সিলেটের বিয়ানীবাজারের বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন জলিল। সেই থেকে ছায়ায়-মায়ায় মিশে আছে। অনেক দুর্লভ কাজ করার সুযোগ পেয়েছে। ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি তাকে নামে চেনেন। কতবার কত কারণে তাঁর কাছে গেছে। সামনে বসে খেয়েছে; আরও অনেক কিছু। আমাদের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ভারতে গেলে অনেক সময় দমদম বিমানবন্দর থেকে ডলার ভাঙাতে ফরিদকে নিউমার্কেটে পাঠাতেন। তাতে হাজার ডলারে দু-তিন হাজার টাকা বেশি পাওয়া যেত, যা কর্মীদের দিয়ে আসতে পারতেন। এমনি কত ঘটনার সঙ্গে ৩৬-৩৭ বছর জড়িয়ে আছে। বেশ জেদি, ইচ্ছা করলে ১০ জনের লেখালেখির কাজ একাই করতে পারে। ম্যাট্রিক পাস করে আমার কাছে গিয়েছিল। সেখান থেকেই মাস্টার্স করেছে। বউ মাস্টার্স, মেয়ে মাস্টার্সের কাছাকাছি, ছেলে খুব ভালো ছাত্র। স্বাধীনতা ’৭১ ওদেরই ১৫-১৬ জন কর্মীর ঘামের ফসল। আরও অন্য লেখালেখিতেও যথেষ্ট হাত লাগিয়েছে। যদিও পাঁচ-ছয় বছর তেমন কাজ করে না, কেন যেন কাজে মন বসে না। সপ্তাহ দুই আগে হঠাৎ শুনলাম, কী লেখালেখি করছে। আমার ভক্তরা জানাল, ফরিদের দারুণ সুন্দর স্মৃতিচারণা। কেন জানি অনেক দিন থেকে কারও খারাপ চিন্তা করতে পারি না। ভালো হলে ভীষণ ভালো লাগে। ফরিদকে তার অভিজ্ঞতা অনেকবার লিখতে বলেছি। আগে আমার কথা সে বেদবাক্য বলে মনে করত। কোনো কথা মাটিতে পড়তে দিত না, তার আগেই পালন করত। এখন সেভাবে করে না বা করতে পারে না। আমি ওর স্মৃতিচারণা এখনো দেখিনি। কিন্তু আমার কাছে ওর হাজারো পত্র আছে। যে পত্র পড়ে প্রবাসেও দেশকে ছবির মতো দেখতে পেতাম। প্রবাসে থাকতে প্রায় ৭০-৮০ হাজার চিঠি পেয়েছি। সেই চিঠিই ছিল প্রবাসে বসে দেশ দেখা। তার মধ্যে ফরিদ যখন বর্ধমানে থাকত তখন তো কাছেই থাকত। দেশে এলে সপ্তাহে সপ্তাহে চিঠি। তাতে ওর চোখে আমি দেশ দেখতাম। সেই ফরিদ স্মৃতিচারণা করছে শুনে খুবই আনন্দিত ও উৎসাহিত হয়েছি। এজন্য ওকে ধন্যবাদ দেব ভাবছিলাম। সেদিন বলেছিলাম, তুই নাকি স্মৃতিচারণা করছিস। খুবই ভালো। আমার কথা শুনে ওর মতো করেই ও বলছিল, ‘আর বসে থাকছি না। শুরু করে দিয়েছি। নামিদামি লেখককেও হার মানিয়ে দেব।’ ও কথা শুনে উৎসাহে ভাটা পড়েছিল। অহংকার থাকলে বড় কাজ করা যাবে না। ওর মধ্যে অহংকার জাগলে আগের মতো লেখা হবে না, ফুটে উঠবে না প্রকৃত ঘটনা। এখনো ওর লেখা দেখিনি, পড়িনি। তবে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করি, সব মানুষের লেখা উচিত। যে লিখতে পারে তার লেখা উচিত। যে পারে না, অন্যকে দিয়ে তার জীবনের অভিজ্ঞতা লেখানো উচিত। নিজেকে প্রকাশে প্রত্যেক মানুষ রবীন্দ্রনাথ, প্রত্যেকেই কাজী নজরুল, সুকান্ত, প্রত্যেকের জীবনে প্রত্যেকে মস্ত বড় জীবনীকার। নিজেকে ব্যক্ত করতে নিজের চাইতে যোগ্য পৃথিবীতে কেউ নেই। দোয়া করি ফরিদের কলম মানুষের চোখে আলো জ্বালুক। গণস্বাস্থ্যের কিট ঔষধ প্রশাসন গ্রহণ না করা এক বিস্ময়কর ব্যাপার! এখন ব্যবসায়িক চিন্তা মাথায় আসার কথা নয়। এখন আমাদের চিন্তা হওয়া উচিত করোনার ছোবল থেকে মুক্তি। সবাই মিলেমিশে এ কাজ করতে পারলে সেটাই হবে উত্তম। পত্রপত্রিকায় দেখছি বিএনপি সরকারকে সহযোগিতা করতে চায়। শুধু বিএনপি কেন, সবাই সরকারকে পরম সহযোগিতা দিয়ে চলেছে। এর চাইতে আর কী সহযোগিতা দেওয়া যেতে পারে? প্রায় দুই মাস সরকারকে বিরক্ত বা বিব্রত করার জন্য কেউ কোনো কিছু করেনি বরং সরকার, বিশেষ করে সরকারের প্রধান নেত্রী শেখ হাসিনা যা বলেছেন যা অনুরোধ করেছেন প্রায় সবই সব রাজনৈতিক দল এবং দেশের মানুষ অকপটে মেনে নিয়েছে। রাজনৈতিক দলের কাছে আর কী চাই? বরং সবাইকে ডেকে কাজের রাস্তা করে না দেওয়ায় সরকারই পরে সমালোচিত হবে। সরকারি দলের সব সংগঠন মানুষের সেবায় রাস্তায় নেমেছে বলে বলা হচ্ছে। কিছু কর্মী সব সময়ই নিবেদিত থাকে। তাদের পরোপকারই প্রধান ধর্ম। মানুষের সেবা করে তারা আনন্দ পায়, সেখানে দল-মত লাগে না। ডাকাত দলেও দু-চার জন ভালো মানুষ থাকে। চোরদের মধ্যেও ইমানদার খুঁজে পাওয়া যায়। কিন্তু বর্তমানে সরকারি দলের সংগঠনগুলোর যে অবস্থা তারা এই দুর্বিপাকে খুব বেশি ভূমিকা রাখতে পারবে না, পারছেও না। এ ক্ষেত্রে সবার সহযোগিতা প্রয়োজন। দল-মতনির্বিশেষে সবার কিন্তু তেমন উদ্যোগ খুব একটা নেওয়া হচ্ছে না। অতিসম্প্রতি প্রতি জেলায় একজন সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টা হয়তো সঠিক মনে করেছেন বলেই নীতিনির্ধারকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কিন্তু এর সুদূরপ্রসারী খারাপ ফলও হতে পারে। এমনিতে দেশে রাজনীতি নেই। বিরোধী দল সব সময় পাহারাদারের ভূমিকা পালন করে- সে ব্যবস্থাও নেই। কারণ বিরোধী দল সম্পূর্ণ ম্রিয়মাণ, জনবিচ্ছিন্ন। অন্যদিকে সরকারি দল তাদেরও নেতৃত্ব-কর্তৃত্ব নেই। সবই আমলা-ফইলার কারবার। রাজনীতি করা সরকার এতটা কর্মচারী নির্ভর হতে পারে না, হলে ভবিষ্যৎ ভালো হয় না। এমনিই জেলায় ডিসি-এসপি সরকারি দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের মতো ভূমিকা পালন করেন। সেখানে দলীয় সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের তেমন কোনো ভূমিকা নেই। তার মধ্যে জেলা পরিচালনায় যদি সচিবরা দায়িত্ব পান তাহলে মন্ত্রী-এমপি-রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা কী করবেন? অন্যদিকে জেলা প্রশাসনে এসপি-ডিসি একটি স্থায়ী পদ। তাদের অনেক সহযোগী থাকে। ডিসি-এসপির হুকুমে তারা চলে। সচিবরা গিয়ে ওপরে বসলেও ডিসি-এসপির ওপর যখন হাত ঘোরাবেন কেউ কেউ হয়তো সে হাত আন্তরিকতার সঙ্গে চেপে ধরতেও পারেন। কিন্তু বেশিসংখ্যক তাদের ওপর ছড়ি ঘোরানো হচ্ছে বলে উষ্ণ হাত চেপে না ধরে প্রত্যাখ্যানও করতে পারেন। এখন আর ব্রিটিশ আইসিএস ও পাকিস্তানি সিএসপি নেই। মেধার দিক থেকে আমাদের বিসিএসরা খুব বেশি গর্ব করার মতো নন। তাই ব্যাপারগুলো আন্তরিকতার সঙ্গে ভেবে দেখা দরকার। মানুষের কতটা ধৈর্য থাকবে- এটাও একটা বিবেচনার বিষয়। সাধারণ মানুষ ধৈর্য হারিয়ে ফেললে সামাল দেওয়া মুশকিল।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর