মঙ্গলবার, ৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পবিত্র রমজানে এতিম ও বিধবার প্রতি সহানুভূতি

মুফতি মুহাম্মদ আল আমিন

পবিত্র রমজানে এতিম ও বিধবার প্রতি সহানুভূতি

ইসলাম-পূর্ব যুগে এতিম ও বিধবার কোনো অধিকার সমাজে প্রতিষ্ঠিত ছিল না। বাবা মারা যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে অসহায় সন্তানদের প্রতি শুরু হতো অত্যাচার-অবিচার, জুলুম-নিপীড়ন। তাদেরকে তাদের অধিকার দেওয়া তো হতোই না; বরং এতিম শিশুদের জন্য বাবার রেখে যাওয়া সম্পদ কেড়ে নেওয়ার জন্য শুরু হতো ষড়যন্ত্র। অনুরূপভাবে কোনো নারীর স্বামী মারা যাওয়ার পর স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পত্তিতে তার কোনো অধিকার ছিল না। ইসলাম এতিমের অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে। বিধবাকে মর্যাদা দিয়েছে। এতিমদের অধিকার ও মর্যাদা সম্পর্কে আল কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘এতিমদের তাদের সম্পদ বুঝিয়ে দাও। খারাপ মালের সঙ্গে ভালো মালের অদলবদল কোরো না। আর তাদের ধনসম্পদ নিজেদের ধনসম্পদের সঙ্গে সংমিশ্রিত করে তা গ্রাস কোরো না। নিশ্চয় এটা বড়ই মন্দ কাজ।’ সূরা নিসা, আয়াত  ২। এতিম-বিধবার জন্য উপার্জন করার মতো কেউ না থাকায় তাদের প্রতি দান-অনুদান অব্যাহত রাখার প্রতি ইসলাম উদ্বুদ্ধ করেছে। পবিত্র রমজান মাসে দান করার ফজিলত ও মর্যাদা অনেক বেশি। তাই সবাই কমবেশি কিছু না কিছু এ মাসে দান করে। ব্যক্তিগত  অনুদান, জাকাত ও ফিতরা  দিয়ে এতিম ও বিধবাদের পাশে আমরা দাঁড়াতে পারি। হাদিসের কিতাবগুলোয় এতিম ও বিধবাকে  দান করার ব্যাপারে  ব্যাপকভাবে উৎসাহিত করা হয়েছে। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, বিধবা ও অসহায়দের তত্ত্বাবধানকারী ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারীর মতো। অর্থাৎ যারা অসহায় ও বিধবার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াবে তারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করার মতো সওয়াব পাবে। হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, আমার ধারণা আল্লাহর রসুল এও বলেছেন যে, বিধবা ও অসহায়দের তত্ত্বাবধানকারীর মর্যাদা  ওই ব্যক্তির মতো, যে অলসতা না করে সারা রাত জেগে ইবাদত করে এবং ধারাবাহিকভাবে প্রতিদিন রোজা রাখে। বুখারি, মুসলিম। এ হাদিস দ্বারা বিধবা ও অসহায়দের দায়িত্ব বহনকারী ব্যক্তির ফজিলত ও মর্যাদা বোঝা গেল। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও বলেছেন, আমি এবং এতিমের অভিভাবক জান্নাতে এভাবে থাকব। এই কথা বলে তিনি হাতের শাহাদাত ও মধ্যমা আঙ্গুল দ্বারা ইশারা করলেন এবং উভয়ের মাঝে কিঞ্চিত ফাঁক রাখলেন। অর্থাৎ হাতের দুই আঙ্গুল যেমন একান্ত পাশাপাশি, তেমনি রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও এতিমের অভিভাবক একসঙ্গে জান্নাতে থাকবে। বুখারি। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোনো এতিমের মাথায় হাত বুলাবে, যেসব চুলের ওপর দিয়ে তার হাত অতিক্রম করবে এর প্রতিটির বিনিময়ে তার জন্য সওয়াব লেখা হবে। আর যে ব্যক্তি তার তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত এতিম বালক-বালিকার সঙ্গে ভালো আচরণ করবে, আমি ও সেই ব্যক্তি বেহেশতে এই দুটির মতো একত্রে থাকব (এই কথা বলে তিনি নিজ হাতের আঙ্গুল দুটি মিলালেন)।’ মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি। যে ঘরে এতিম লালিত-পালিত হয় সে ঘর পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঘর।

লেখক : খতিব, সমিতি বাজার মসজিদ, নাখালপাড়া, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর