বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

কুমারগুপ্তের স্বর্ণমুদ্রা

রাজা প্রথম কুমারগুপ্ত ১৬ প্রকার স্বর্ণমুদ্রা প্রচলন করেন। এর মধ্যে বাংলার হুগলিতে ‘তীরন্দাজ’, মেদিনীপুর ও হুগলিতে ‘অশ্বারোহী’, হুগলিতে ‘গজারূঢ়’, বর্ধমানে ‘কার্তিকেয়’, বগুড়া, হুগলি ও বর্ধমানে ‘সিংহশিকারি’ মুদ্রা পাওয়া গেছে। ‘অশ্বারোহী’ মুদ্রার একদিকে অঙ্কিত রয়েছে সজ্জিত ঘোড়ার পিঠে তীর-ধনুক হাতে একজন রাজা এবং অন্যদিকে বেতের চৌকিতে উপবিষ্ট দেবীর প্রতিকৃতি। কোনো কোনো মুদ্রার অন্য পিঠে ময়ূরকে আঙুর খাওয়ানোর চিত্রও অঙ্কিত রয়েছে। ‘গজারূঢ়’ মুদ্রায় অঙ্কিত রয়েছে অঙ্কুশ বা সুচালো লাঠি হাতে রাজা হাতির ওপর আসীন আর রাজার পেছনে উপবিষ্ট একজন প্রজা তাঁর মাথার ওপর ছাতা ধরে আছে। এর অন্য পিঠে পদ্মফুলের ওপর দন্ডায়মান একজন দেবী এবং একই সঙ্গে ‘মহেন্দ্রগজ’ উক্তিটি উৎকীর্ণ রয়েছে। সিংহশিকারি মুদ্রায় এক পিঠে তীর-ধনুক নিয়ে রাজা সিংহের সঙ্গে যুদ্ধ করছেন। অন্য পিঠে উৎকীর্ণ রয়েছে ‘শ্রীমহেন্দ্রসিংহ’ উক্তিটি এবং ওত পাতা অবস্থায় শায়িত সিংহের ওপর উপবিষ্ট দেবী। মুদ্রাগুলোর মধ্যে সর্বাপেক্ষা সুন্দর চিত্র অঙ্কিত হয়েছে ‘কার্তিকেয়’ মুদ্রায়। এর একদিকে রাজা একটি ময়ূরকে একগুচ্ছ আঙুর খাওয়াচ্ছেন এবং অন্যদিকে উৎকীর্ণ রয়েছে ‘মহেন্দ্রকুমার’ শব্দটি।

বাংলায় প্রাপ্ত চার প্রকার মুদ্রার মধ্যে ‘তীরন্দাজ’ ও ‘রাজারানী’ মুদ্রার প্রচলন করেন রাজা স্কন্ধগুপ্ত। এর মধ্যে ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া যায় ফরিদপুর, বগুড়া, হুগলি ও বর্ধমানে। ‘রাজারানী’ মুদ্রা পাওয়া যায় মেদিনীপুরে। ‘রাজারানী’ মুদ্রার এক পিঠে অঙ্কিত রয়েছে মুখোমুখি দন্ডায়মান একজন রাজা ও একজন রানীর প্রতিকৃতি। অন্য পিঠে পদ্মফুলের ওপর উপবিষ্ট দেবীর প্রতিকৃতি এবং ‘স্কন্ধগুপ্ত’ শব্দটি উৎকীর্ণ রয়েছে। বাংলার কালীঘাট, উত্তর এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা ও মেদিনীপুরে দ্বিতীয় কুমারগুপ্ত, খালিঘা এবং হুগলিতে বৈন্যগুপ্ত, কালীঘাট, হুগলি, মুর্শিদাবাদ, বীরভূম ও নদীয়ায় নরসিংহগুপ্ত, হুগলি ও বর্ধমানে তৃতীয় কুমারগুপ্ত এবং কালীঘাট, হুগলি ও উত্তর চবিবশ পরগনায় বিষ্ণুগুপ্তের ‘তীরন্দাজ’ মুদ্রা পাওয়া গেছে। অধিকাংশ মুদ্রায় শুদ্ধ সংস্কৃত ভাষায় ছন্দোবদ্ধ শব্দগুচ্ছ ও মুদ্রা প্রণয়নকারীদের কীর্তিমালা উৎকীর্ণ রয়েছে। গুপ্তযুগের একদিকে জ্যামিতিক ডিজাইন ও বেশ কিছু মুদ্রার অন্যদিকে ‘গরুড়’ প্রতীক পাওয়া যায়।

গুপ্তগণ তাঁদের স্বর্ণমুদ্রায় জটিল পরিমাপ অনুসরণ করেছিলেন। তাঁরা সাধারণত রোমানদের ‘অওরেই’ মুদ্রার অনুকরণে কুষাণ মুদ্রার ১২২ গ্রেন মান অনুসরণ করতেন। আর স্কন্ধগুপ্তের কাল থেকে অনুসরণ করা হতো ভারতীয় ‘সুবর্ণ’ মুদ্রার ১৪৪ গ্রেন মান। তবে পর্যায়ক্রমে মুদ্রার ওজন বৃদ্ধি পেতে দেখা যায়, প্রথম চন্দ্রগুপ্তের আমলের ১১২ গ্রেন থেকে শেষ শাসকদের সময়কার ১৪৮ গ্রেন পর্যন্ত। শেষ তিনজন শাসকের মুদ্রা ছাড়া অন্যদের মুদ্রায় খাঁটি স্বর্ণ ছিল ১১৩ গ্রেন। সম্ভবত স্বর্ণমুদ্রা বাহ্যিক মূল্যমানে গৃহীত হতো না, গৃহীত হতো তাদের প্রকৃত মূল্যে। গুপ্তলিপিতে হালকা ও ভারী মুদ্রার পার্থক্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ‘দিনার’ ও ‘সুবর্ণ’ শব্দ দুটির ব্যবহার পাওয়া যায়।

১৮৫২ সালে যশোরের নিকটবর্তী মোহাম্মদপুরে দ্বিতীয় চন্দ্রগুপ্ত, প্রথম কুমারগুপ্ত ও স্কন্ধগুপ্তের কিছু রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া যায়।

সর্বশেষ খবর