বুধবার, ৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

পবিত্র রমজানের নেক আমল

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদী

পবিত্র রমজানের নেক আমল

আলহামদুলিল্লাহ! ইবাদতের বসন্তকাল মাহে রমজান। সওয়াবের ভরা মৌসুম। রহমত, বরকত, মাগফিরাত ও নাজাতের মাস। প্রিয় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজান বরকতময় মাস, তোমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছে। এ মাসে আল্লাহ একটি রাত দান করেছেন, যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো, সে বঞ্চিত হলো আল্লাহর মহাকল্যাণ থেকে।’ ইবনে মাজাহ। এ মাসে রয়েছে অনেক আমল। আমরা কয়েকটি বিশেষ আমল উপস্থাপন করছি। আমলগুলো কবুল হবে যদি নিচের এ দুটি শর্ত পাওয়া যায়-

এক. সহি নিয়ত ও ইখলাস। একনিষ্ঠতার সঙ্গে শুধু আল্লাহর জন্য আমল করা। আল্লাহ বলেন, ‘আর তাদের কেবল এই নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল যে, তারা যেন আল্লাহর ইবাদত করে তাঁরই জন্য দীনকে একনিষ্ঠ করে।’ সূরা বাইয়্যেনাহ, আয়াত ৫।

দুই. ইবাদতের ক্ষেত্রে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অনুকরণ ও অনুসরণ। আল কোরআন বলছে, ‘আর রসুল তোমাদের জন্য যা নিয়ে এসেছেন তা তোমরা গ্রহণ কর, আর যা থেকে তিনি নিষেধ করেন তা থেকে বিরত হও।’ সূরা হাশর, আয়াত ৭। আসুন, রমজানের বিশেষ আমলগুলো জেনে নিই। রমজানের প্রধান ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে শরিয়তের বিধান অনুযায়ী ইখলাসপূর্ণ পুরো মাস রোজা রাখা। বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, ‘যে ব্যক্তি রমজানের রোজা ইমান, সওয়াব, ইখলাসের সঙ্গে রাখবে, তার পূর্ববর্তী সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হবে।’

তারাবি ও তাহাজ্জুদ আদায় : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমান ও ইহতিসাব তথা ইমান, সওয়াব ইখলাসের সঙ্গে রমজানে কিয়ামুল লাইল তথা তারাবি ও তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করবে আল্লাহ তার পেছনের সব গুনা মাফ করে দেবেন।’ বুখারি, মুসলিম। আমরা ২০ রাকাত তারাবি নামাজ আদায়ে মনোযোগী হব। প্রতিদিন অধিক সময় কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করব, আল কোরআনের অর্থ ও তাফসির বুঝব। হাদিসে বর্ণিত, ‘হজরত জিবরাইল (আ.) রমজানের শেষ দিন পর্যন্ত প্রতি রাতে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন আর রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাকে কোরআন মাজিদ তিলাওয়াত করে শোনাতেন।’ বুখারি।

দান, সদকা ও রোজাদারকে ইফতার করানো : হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানের সদকা সবচেয়ে উত্তম সদকা।’ তিরমিজি। তিনি আরও বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতারি করাবে সেও রোজাদারের সমপরিমাণ সওয়াব পাবে। এতে রোজাদারের সওয়াব মোটেও কমানো হবে না।’ মিশকাত।

করোনাভাইরাসের এই মহামারীর সময় যাদের ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা নেই, সেই গরিব-দুঃখীদের আমরা সাধ্যমতো ইফতার-সাহরির ব্যবস্থা করব।

নিজেকে হালাল উপার্জনে নিয়োজিত রাখা : ইবাদত কবুলের পূর্বশর্ত হলো হালাল রুজি। আহার ও রুজি হারাম হলে আল্লাহর দরবারে ওই ব্যক্তির কোনো ইবাদতই কবুল হবে না। মাহে রমজানে এর গুরুত্ব বেড়ে যায় বহুগুণ। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রমজানে হালাল রুজির প্রতি যতœবান ব্যক্তির জন্য ভবিষ্যদ্বাণী উচ্চারণ করে বলেছেন, ‘যার রমজান মাস নিরাপদে কাটল, তার পুরো বছরই নিরাপদে কাটল।’ তিরমিজি।

বেশি বেশি দোয়া ও ইসতিগফার করা : মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানে বান্দার দোয়া কবুল করা হয়।’ হাদিসের অংশ। অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি রমজান পেয়েও স্বীয় গুনা ক্ষমা করাতে পারল না তার ওপর লানত, ধ্বংস।’ বুখারি।

ইতিকাফ করা : বুখারিতে বর্ণিত, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছরও ২০ দিন ইতিকাফ করেন। তাঁর ওফাতের পর তাঁর স্ত্রীরা নিয়মিত ইতিকাফ করতেন।

শবেকদর তালাশ করা : হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের শেষ ১০ দিনের বিজোড় রাতে শবেকদর তালাশ কর।’ অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি ইমান, সওয়াব ও ইখলাসের সঙ্গে শবেকদরে ইবাদত করল তার আগের সব গুনা ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ বুখারি, মুসলিম।

লেখক : প্রিন্সিপাল, মণিপুর বাইতুর   রওশন  মাদ্রাসা কমপ্লেক্স, মিরপুর, ঢাকা।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর