শিরোনাম
শুক্রবার, ৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মাগফিরাতের দশকে বেশি বেশি তওবা করুন

মাহমুদুল হক জালীস

মাগফিরাতের দশকে বেশি বেশি তওবা করুন

বলতে বলতে রহমতের দশক পার হয়ে  মাগফিরাতের দশকের অর্ধেক পথে চলে এসেছি। এ দশকে প্রত্যেক বান্দার উচিত বেশি বেশি তওবা করা। তওবার শাব্দিক অর্থ ফিরে আসা, প্রত্যাবর্তন করা। পরিভাষায় গুনাহের কাজ ছেড়ে দিয়ে অনুতপ্ত হয়ে আল্লাহমুখী হওয়াকে তওবা বলে। মহান রব্বুল আলামিনের অনেক সিফাতি বা গুণবাচক নাম রয়েছে। তার অন্যতম দুটি হলো গফুর ও গাফফার; যার অর্থ মহাক্ষমাশীল।

বান্দা যতই অপরাধ করুক না কেন, আল্লাহর কাছে রয়েছে দয়া ও ক্ষমার অফুরন্ত ভা-ার। কোনো পাপী বান্দা যখন বিনয়ী হয়ে হৃদয়ের পুরোটা আবেগ উজাড় করে মাফ চায়, দয়াময় আল্লাহ তখন তাকে ক্ষমা করে দেন। শুধু মাফ করেন না, বরং তার প্রতি সন্তুষ্টির ঘোষণাও দেন।

এ মর্মে আল্লাহ নিজেই বলেন, ‘নিশ্চয় তিনি আল্লাহ, ক্ষমাশীল, পরম ক্ষমাপরায়ণ। নিশ্চয়ই আল্লাহ মার্জনাকারী, ক্ষমাশীল।’ সুরা হজ, আয়াত ৬০। অন্য আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, ‘(হে নবী, আপনি) বলুন, হে আমার বান্দা! যারা নিজেদের ওপর জুলুম করেছ, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হবে না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সব গুনাহ ক্ষমা করে দেন। তিনি তো ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু!’ সুরা জুমার, আয়াত ৫৩।

বান্দাদের তওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করে আরেক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘হে ইমানদাররা! তোমরা সবাই আল্লাহর কাছে তওবা কর; তবেই তোমরা নিঃসন্দেহে সফলতা লাভ করবে।’ সুরা নূর, আয়াত ৩১।

এ ছাড়া রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ মরুভূমিতে হারিয়ে যাওয়া উট খুঁজে পেয়ে যতটা খুশি হয়, আল্লাহ বান্দার তওবায় তার চেয়ে অনেক বেশি খুশি হন।’ বুখারি।

এ ছাড়া তওবা, ইসতিগফারের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার সম্পর্ক সুদৃঢ় হয়। এর দ্বারা মহান আল্লাহর কাছে বান্দার মুখাপেক্ষিতার স্বীকারোক্তি উচ্চারিত হয়। এতে আল্লাহর সন্তুষ্টিও অর্জিত হয়। এ মর্মে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তওবাকারীকে ভালোবাসেন এবং যারা পবিত্র থাকে তাদেরও ভালোবাসেন।’ সুরা বাকারা, আয়াত ২২২।

হাদিসে এসেছে, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিষ্পাপ হওয়া সত্ত্বেও প্রতিদিন শতবার ইসতিগফার করতেন। কারণ তওবা ও ইসতিগফার মানুষের পাপাচার মিটিয়ে দিয়ে পবিত্র-জীবন দান করে। পাপ-পঙ্কিলতা ধুয়েমুছে সাফ করে দেয়। এ মর্মে হাদিসে কুদসিতে ইরশাদ হয়েছে। আল্লাহ বলেছন, ‘হে আমার বান্দারা! তোমরা দিন-রাত গুনাহ করে থাকো, আমি তোমাদের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেব। তোমরা ইসতিগফার কর, আমি তোমাদের ক্ষমা করে দেব।’ মুসলিম।

এ ছাড়া তওবা ও ইসতিগফারের দ্বারা আল্লাহর দরবারে বান্দার গ্রহণযোগ্যতা বৃদ্ধি পেতে থাকে। মর্যাদা বহুগুণ বাড়তে থাকে। সাধারণত প্রবৃত্তির তাড়নায় পড়ে বান্দা পাপ কাজ করে। বিপথগামী পথে নিজেকে পরিচালিত করে পূতপবিত্র আত্মাকে কলুষিত করে। তারপর বান্দা যখন নিজের ভুলত্রুটি বুঝে আল্লাহর দরবারে তওবা করে, তখন স্রষ্টা তাকে ক্ষমা করে দেন। তার নুরের আলোয় বান্দার জীবনকে আলোকিত করে দেন। আর এ সুযোগ রমজান মাসেই বেশি আসে। অল্প নেক আমল করেই আল্লাহর প্রিয় বান্দা হয়ে যাওয়া যায়। এ মর্মে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে নেকির প্রত্যাশায় রমজানের রাতে ইবাদত-বন্দেগি করবে, তার অতীতের গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে।’ বুখারি।

অন্য একটি হাদিসে এসেছে, ‘রমজানের প্রতিটি রাত ও দিনের বেলায় বহু মানুষকে আল্লাহ জাহান্নাম থেকে মুক্তির ঘোষণা দেন। তাই রমজানে বেশি বেশি তওবা ও ইসতিগফার করে নিজের জীবনের সব ভুলত্রুটি মাফ করানোর অপার সুযোগ। সুতরাং এ সুযোগ সবাই কাজে লাগানোর চেষ্টা করব। আর আল্লাহ তো দয়ার সাগর। তিনি বলেন, ‘আল্লাহ এমন নন যে, তারা ক্ষমা চাইবে অথচ তিনি তাদের শাস্তি দেবেন।’ সুরা আনফাল, আয়াত ৩৩।

লেখক : ইসলামবিষয়ক গবেষক।

 

সর্বশেষ খবর