রবিবার, ১০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

হজরত আদম (আ.) থেকে রোজার সূচনা

মুফতি আবদুল কাদির তমিযী

হজরত আদম (আ.) থেকে রোজার সূচনা

পৃথিবীর প্রথম মানুষ হজরত আদম (আ.) থেকেই রোজার সূচনা ঘটে। সর্বপ্রথম তিনি জান্নাতের মধ্যে রোজা রেখেছিলেন। আল্লাহ তাঁকে জান্নাতে পাঠিয়ে এক ধরনের রোজা রাখার আদেশ করেছিলেন। আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে আদম! আর যা ইচ্ছা খাও, পান কর। তবে এই গাছের নিকট যেও না। (যদি যাও অথবা তার ফল খাও) তাহলে অপরাধী বলে সাব্যস্ত হবে।’ সুরা বাকারা, আয়াত ৩৫। এটাই হচ্ছে মানব ইতিহাসে সর্বপ্রথম রোজা। আরও বর্ণিত আছে যে, হজরত আদম (আ.) প্ররোচিত হয়ে ওই গাছের ফল ভক্ষণ করার কারণে ভূ-পৃষ্ঠে অবতরণ করলেন। এরপর তিনি উক্ত ভুলের দরুন কাফ্ফারাস্বরূপ ৪০ বছর রোজা রেখেছিলেন। শুধু তাই নয়, হাদিসে বর্ণিত আছে, তিনি পৃথিবীতে এসে প্রতি চান্দ্রমাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোজা রাখতেন। এই তিন দিনের রোজাকে ‘আইয়ামে বিজ’, অর্থাৎ উজ্জ্বল দিবসের রোজা বলা হয়। এ ছাড়া হজরত নুহ (আ.) শাওয়ালের প্রথম তারিখ ও জিলহজের দশম তারিখ ছাড়া সারা বছর রোজা রাখতেন। হজরত ইদরিস (আ.) পুরো বছরই রোজা রাখতেন। হজরত মুসা (আ.) তওরাত কিতাব পাওয়ার আগে ৩০ দিন এবং পরে ১০ দিন মোট ৪০টি রোজা রেখেছিলেন। এমনিভাবে হজরত ঈসা (আ)ও মুসা নবীর মতো ৪০টি রোজা রেখেছিলেন। এভাবে প্রত্যেক নবী তাঁর জমানায় নিজের শরিয়ত মোতাবেক রোজা রেখেছিলেন।

ইসলামের পাঁচটি মৌলিক ভিত্তির মধ্যে রোজা অন্যতম; যা বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যায় সমৃদ্ধ। রোজার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে আত্মসংযম, কঠোর সাধনা, বিরত থাকা, উপবাস থাকা ও অবিরাম চেষ্টা করা ইত্যাদি। ইসলামী পরিভাষায় সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত বিরত থেকে সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করাকে রোজা বলা হয়।

হাদিসে বর্ণিত আছে, রমজান সারা বছরের প্রাণ। যদি এ মাস ঠিক থাকে তাহলে পুরা বছরই ঠিক থাকবে। এজন্যই মুজাদ্দেদ আলফে সানি (রহ.) নিজ কিতাবে লিখেছেন, ‘রমজান মাসে এত প্রচুর বরকত অবতীর্ণ হয় যে, বাকি সব মাসের বরকত মিলে রমজানের বরকতের সমান হবে না।’

এ বরকতময় মাসে আল্লাহ রোজাদারকে ছয়টি বস্তু দ্বারা সম্মানিত করেন- ১. রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহর কাছে মৃগনাভির সুগন্ধির চেয়ে অধিকতর প্রিয়। ২. সমুদ্রের মাছও রোজাদারদের জন্য ইফতার পর্যন্ত দোয়া করতে থাকে। অন্য একটি বর্ণনায় এসেছে, ফেরেশতারা রোজাদারদের জন্য ক্ষমাপ্রার্থনা করতে থাকে, যতক্ষণ না তারা ইফতার করে। ৩. রোজাদারদের সম্মানে প্রতিদিন জান্নাতকে সুসজ্জিত করা হয়। ৪. রমজানে দুর্বৃত্ত শয়তানকে বন্দী করে রাখা হয়। ৫. রমজানের শেষ রাতে রোজাদারদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। ৬. এই মুবারক মাসে প্রতিদিন একজন ঘোষক ঘোষণা করতে থাকে, ‘হে পুণ্যকামী! তুমি এগিয়ে চল এবং হে পাপাচারী! তুমি নিবৃত্ত হও।’ মুস্তাদরাকে হাকেম।

রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, সব সৃষ্টির ওপর মহান আল্লাহর যেমন ফজিলত ও মযার্দা, অন্যসব মাসের ওপর রমজান মাসেরও তেমন মর্যাদা। এজন্য রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবায়ে কিরামকে রমজানের পূর্ণপ্রস্তুতি গ্রহণ করার জন্য নানাভাবে উৎসাহিত করতেন। পরামর্শ দিতেন সর্বস্ব ব্যয় করে হলেও কল্যাণ আহরণের জন্য আত্মনিয়োগের। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যখন রমজান আগমন করে, আকাশের দরজাগুলো উন্মুক্ত করা হয়, বন্ধ করে দেওয়া হয় জাহান্নামের কপাটগুলো, আর শয়তানকে আবদ্ধ করা হয় শৃঙ্খলে। বুখারি।

লেখক : খতিব : বাইতুন নূর জামে মসজিদ, ছোলমাইদ, ভাটারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর