সোমবার, ১১ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

চিকিৎসায় অবহেলা

এ ট্র্যাজেডির পুনরাবৃত্তি যেন না হয়

করোনাকালে কিডনি জটিলতায় একের পর এক হাসপাতালে ঘুরে মারা গেলেন সরকারের একজন অতিরিক্ত সচিব। গৌতম আইচ সরকার নামের এই অতিরিক্ত সচিবের মৃত্যু জনমনে চিকিৎসা ক্ষেত্রে সাধারণ মানুষের অসহায়ত্বকেই যেন আরও প্রকট করে তুলেছে। প্রশ্ন উঠেছে করোনাকালে কিডনি জটিলতায় আক্রান্ত একজন অতিরিক্ত সচিবকেই যদি একের পর এক হাসপাতালে গিয়ে প্রত্যাখ্যাত হতে হয়, তবে সাধারণ মানুষের অবস্থান কোথায়? তার চিকিৎসক কন্যা ডা. সুস্মিতা আইচ নিজের আক্ষেপের কথা জানিয়েছেন গণমাধ্যমকে। বলেছেন, করোনার কোনো উপসর্গ না থাকলেও অন্য কোনো উপায় না পেয়ে অনেক কষ্টে তার বাবাকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করান। তার আইসিইউ সাপোর্টটা খুব দরকার ছিল, কিন্তু সেখানে তা পাওয়া যায়নি। কোনো চিকিৎসা ছাড়াই তিনি মারা গেলেন। ডাক্তার হয়েও বাবার জন্য তিনি কিছু করতে পারলেন না। যে ৩৩৩ হটলাইন নম্বর থেকে সরকার স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে, সেখানে দায়িত্ব পালন করছেন ডা. সুস্মিতা। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে তার বাবাকে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হলেও তিনি করোনা আক্রান্ত কিনা, তা জানার চেষ্টাও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করেনি। ডা. সুস্মিতা বলেছেন, তার বাবার কিডনির সমস্যা ছিল, নিয়মিত ডায়ালাইসিস করা হতো। ডায়ালাইসিসের সময় প্রায়ই হঠাৎ করে প্রেসার বেড়ে যেত, শ্বাসকষ্ট হতো, ফুসফুসে পানি চলে আসত। আইসিইউ সাপোর্ট হলে ঠিকও হয়ে যেত। গত বৃহস্পতিবার ল্যাবএইড হাসপাতালে অতিরিক্ত সচিব গৌতমের ডায়ালাইসিসের সময় প্রেসার বাড়ার পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট শুরু হলে ল্যাবএইডের ইমারজেন্সি থেকে চিকিৎসক মেয়ে সুস্মিতাকে ফোন করা হয়। তিনি তার বাবাকে ল্যাবএইডে ভর্তি করতে বললে তারা বলেন তাদের কনসালট্যান্ট নেই, আইসিইউ সাপোর্টও দিতে পারবে না। তাই তাকে ভর্তি করা যাবে না। প্রেসার কমানোর ওষুধ দিয়ে রোগীকে বাসায় নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেন তারা। তা ছাড়া ল্যাবএইডে নিয়মিত যে ডাক্তার তার বাবাকে দেখেন তিনিও সে দিন ছুটিতে ছিলেন। ডাক্তার হিসেবে অতিরিক্ত সচিবের চিকিৎসক মেয়ে মনে করেছিলেন তার বাবার অক্সিজেন দরকার। তিনি ওই দিন একের পর এক হাসপাতালে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে অক্সিজেনের জন্য শেষ পর্যন্ত করোনার চিকিৎসা হয় এমন হাসপাতালে তার বাবাকে ভর্তি করতে বাধ্য হন। কিন্তু সেখানেও কার্যত চিকিৎসা পাননি তার বাবা। একজন অতিরিক্ত সচিব নয়, যে কোনো নাগরিকের এমন মৃত্যু দুর্ভাগ্যজনক। এটি সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলোর নৈতিকতাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। যা কোনোভাবেই কাক্সিক্ষত হওয়া উচিত নয়। আমরা আশা করব আর কারোর ক্ষেত্রে যাতে এ ধরনের অবহেলার ঘটনা না ঘটে সে বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা সবাই সতর্ক হবেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর