বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

সুন্নাহর আলোকে তারাবি নামাজ

মুফতি মুহাম্মাদ এহছানুল হক মুজাদ্দেদি

সুন্নাহর আলোকে তারাবি নামাজ

করোনাভাইরাসের মহামারীতে লকডাউনের কারণে এ বছর মসজিদে গিয়ে তারাবি নামাজ পড়া অনেকের পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বিশেষত অসুস্থ ও বৃদ্ধ মুসল্লিরা ঘরেই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ, তারাবিসহ নেক আমল আদায় করছেন। কিন্তু সবারই মনটা কাঁদে... আহারে... কোরআনের সুর কতই না মধুর! মাহে রমজানে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নাতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই রাকাত করে ১০ সালামে যে ২০ রাকাত নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। এ নামাজ সুন্নাতে মুয়াক্কাদাহ।

তারাবি নামাজ সম্পর্কে হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় তারাবি নামাজ আদায় করবে, আল্লাহ তার পূর্ববর্তী গুনাহসমূহ মাফ করে দেবেন।’ নাসায়ি।

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেন, ‘একদিন গভীর রাতে রসুলুল্লাহ মসজিদে গেলেন এবং নামাজ পড়লেন, কিছু লোকও তাঁর পেছনে নামাজ পড়লেন। ভোর হওয়ার পর লোকজন পরস্পরের সঙ্গে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করায় দ্বিতীয় রাতে লোকসংখ্যা আরও বেড়ে গেল এবং তারা রসুলুল্লাহর সঙ্গে নামাজ পড়লেন। এদিন ভোর হওয়ার পর লোকদের মাঝে আরও বেশি আলোচনা হলো এবং তৃতীয় রাতে মসজিদের লোকসমাগম আরও বেশি হলো, রসুলুল্লাহ বাইরে বের হয়ে নামাজ পড়লেন আর তারাও তাঁর সঙ্গে নামাজ পড়লেন। যখন চতুর্থ রাত এলো তখন এত লোকসমাগম হলো যে, মসজিদে স্থানসংকুলান হলো না। কিন্তু তিনি এ রাতে তারাবির নামাজের জন্য বের হলেন না, ভোর হলে ফজরের নামাজের জন্য বের হলেন এবং ফজরের নামাজ শেষে লোকদের দিকে মুখ ফিরিয়ে বললেন, তোমাদের বিষয়টি আমার কাছে গোপন ছিল না। কিন্তু আমি আশঙ্কা করছিলাম, এ নামাজ না আবার তোমাদের ওপর ফরজ করে দেওয়া হয় আর তোমরা তা পালনে ব্যর্থ হও। রসুলুল্লাহ ওফাত করলেন এবং এ নামাজের বিষয়টি আমাদের ওপরে তেমনই রইল।’ বুখারি।

হজরত আবদুর রহমান বিন আবদিল কারি (রা.) বর্ণনা করেছেন, ‘রমজানের এক রাতে আমি হজরত ওমর বিন খাত্তাব (রা.)-এর সঙ্গে মসজিদের উদ্দেশে বের হলাম এবং দেখলাম, লোকেরা পৃথক দলে বিভক্ত হয়ে আছে। কেউ একা একা নামাজ পড়ছিল, আবার কেউ কেউ এভাবে নামাজ পড়ছিল যে, তার পেছনে কিছু লোক নামাজ পড়ছিল। এ অবস্থা দেখে হজরত ওমর (রা.) বললেন, আমার মনে হয় সবাইকে একজন কারির পেছনে একত্রিত করে দিলে ভালো হয়। অতঃপর তিনি দৃঢ় প্রত্যয় করলেন এবং হজরত উবাই বিন কাবের পেছনে তাদের সবাইকে মুক্তাদি হিসেবে একত্রিত করে দিলেন। বুখারি।

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেই ২০ রাকাত তারাবি নামাজ পড়েছেন এবং সাহাবায়ে কিরামকে পড়ার জন্য আদেশ দিয়েছেন। তারাবি নামাজের ফজিলত সম্পর্কে হাদিসে উল্লেখ আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের আশায় রমজানে তারাবি নামাজ আদায় করে তার পূর্ববর্তী সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।’ বুখারি, মুসলিম। এর থেকে স্পষ্টভাবে বোঝা যায় তারাবি নামাজ মানবজীবনে কতটা গুরুত্ববহ। বিভিন্ন মসজিদে খতমে তারাবির ব্যবস্থা রয়েছে, আমরা যদি অন্যদিকে অযথা সময় নষ্ট না করে তারাবি নামাজে যোগদান করে পুরো রমজান অতিবাহিত করি তাহলে আল্লাহ আমাদের আগের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন এবং আমরা তাঁর নৈকট্য লাভ করে জান্নাতের মেহমান হব। এ ছাড়া খতমে তারাবিতে  যোগদানের ফলে বিশেষ যে কল্যাণ আমরা লাভ করব তা হলো পুরো কোরআন একবার শোনা হয়ে যাবে।

তারাবি নামাজ কত রাকাত?

উত্তর : তারাবি  নামাজ ২০ রাকাত। এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করার সুযোগ নেই। সহি হাদিসে রসুলে কারিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজ সুন্নাতের পাশাপাশি খোলাফায়ে রাশেদিনের সুন্নাতকে অনুসরণ করা এবং তা মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার নির্দেশ দিয়েছেন।

লেখক : খতিব, মণিপুর বাইতুল আশরাফ জামে মসজিদ, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর