বুধবার, ১৩ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখুন

টাকা ছাপার ক্ষেত্রে সতর্কতা কাম্য

করোনাভাইরাসের কারণে অনাকাক্সিক্ষত বিভিন্ন খাতে সরকারকে ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। অথচ বিশ্বজুড়ে করোনা মহামারীরূপে অবির্ভূত হওয়ায় অন্যসব দেশের মতো বাংলাদেশের অর্থনীতিও ভয়াবহভাবে চাপের মুখে পড়েছে। রেমিট্যান্স আয় ও রপ্তানি হ্রাসের আলামতও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গত দুই দশকে বারবার বিশ্ব অর্থনীতি মন্দার কবলে পড়লেও আমাদের অর্থনীতিতে তার চোট লাগেনি। বরং এই সময়ে বাংলাদেশের অর্থনীতি ফুলে-ফেঁপে আরও শ্রীবৃদ্ধি অর্জন করেছে। এবার মন্দার থাবা মোকাবিলা নয়, অস্তিত্বের সংগ্রামেও লড়তে হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে। যে কারণে পরিস্থিতি মোকাবিলায় চলতি সপ্তাহেই নতুন ২৫ হাজার কোটি টাকা বাজারে ছাড়া শুরু করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। তবে এটাকে তারা নিয়মিত কর্মসূচি বলে অভিহিত করেছে। কেননা প্রতি বছরই ঈদের আগে নতুন টাকা বাজারে ছাড়া হয়। গত বছর ঈদেও ছাড়া হয়েছে ১৮ হাজার কোটি টাকা। কেন্দ্রীয় ব্যাংক রিজার্ভ মানি থেকে দেশের তফসিলি ব্যাংকগুলোকে আরও ৩৮ হাজার কোটি টাকার জোগান দেবে; যা একেবারেই নতুন টাকা। এর বাইরে বিপর্যস্ত অর্থনীতিকে টেনে তুলতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা-ঘোষিত প্রায় ১ লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজের বাস্তবায়নও শুরু হয়েছে; যার প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকাই সরবরাহ করবে ব্যাংকগুলো। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, এর ফলে মানুষের হাতে নগদ টাকার প্রবাহ বাড়বে। কভিড-১৯-এর প্রভাবে বিপর্যস্ত অর্থনীতি সামলাতে এ মুহূর্তে নতুন টাকা ছেপে বাজারে ছাড়লে মূল্যস্ফীতি ও জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি পাবে এমন আশঙ্কাও জোরদার হয়ে উঠছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ধারণা, নতুন টাকায় মূল্যস্ফীতি বাড়বে না। কারণ মানুষের হাতে এখন টাকা নেই। এ ছাড়া যে টাকা ছাড়া হবে তা পর্যায়ক্রমে তিন বা চার বছরে আবার বাজার থেকে তুলেও নেওয়া হবে। ফলে নতুন টাকা মূল্যস্ফীতিতে খুব একটা প্রভাব ফেলবে না। করোনাভাইরাসজনিত সংকট মোকাবিলায় আমাদের সরকারপ্রধান অসীম সাহসিকতায় যে লড়াই চালাচ্ছেন তা প্রশংসার দাবিদার। এ ক্ষেত্রে নতুন টাকা ছেপে পরিস্থিতি মোকাবিলার সিদ্ধান্ত অপ্রিয় হলেও বাস্তবতার নিরিখে বিবেচনাযোগ্য। তবে সরকারকে লক্ষ্য রাখতে হবে, অর্থনীতির লাটাই যেন তাদের হাতে থাকে। বাজারে অতিরিক্ত টাকার প্রবাহ যেন মুদ্রাস্ফীতির কারণ হয়ে না দাঁড়ায়। এ বিষয়ে সর্বাধিক সতর্কতা কাম্য।

সর্বশেষ খবর