বৃহস্পতিবার, ১৪ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যাংকিং শৃঙ্খলা

ঋণখেলাপিদের প্রণোদনা নয়

বাংলাদেশের জন্য এখন প্রধান সমস্যা যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলা করা এ বিষয়ে সংশয়ের কোনো অবকাশ নেই। আর সে জন্যই চাই ব্যাংকিং খাতের শৃঙ্খলা। সরকার সংকট মোকাবিলায় যে বিপুল পরিমাণ আর্থিক প্রণোদনা দিয়েছে তা বিতরণ করা হবে ব্যাংকিং খাত থেকে। কিন্তু ব্যাংকগুলোতে যদি এলোমেলো করে দে মা লুটেপুটে খাইদের দৌরাত্ম্য থাকে তবে এ প্রণোদনা দেশের শিল্প কলকারখানা তথা উৎপাদন ব্যবস্থার কোনো কল্যাণে আসবে না। বরং তা চলে যাবে ঋণখেলাপি নামের ব্যাংক লুটেরাদের পকেটে। ঋণখেলাপি নামের আরব্য উপন্যাসের চোর মহা-চোররা ব্যাংকের কর্মকর্তা এবং পরিচালকদের অসৎ অংশকে ১৫-২০ ভাগ বখরা দিয়ে প্রণোদনার অর্থ নিয়ে লোপাট করবে। পরিণতিতে কয়েক লাখ কোটি খেলাপি ঋণের ভারে ন্যুব্জ ব্যাংকগুলো আবারও লুটেরা চক্রের লুটপাটে ফোকলা হয়ে পড়বে। এ প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সব কিছুর আগে ব্যাংকিং শৃঙ্খলা ফেরাতে হবে। ব্যাংকিং খাতে এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা খেলাপি ঋণ আদায়। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে ব্যাংকিং খাতে সুদূরপ্রসারী প্রভাব পড়বে এবং তারল্য সংকট বাড়বে। কারণ ঋণখেলাপিরা করোনাভাইরাসেও নতুন সুযোগ নিয়েছে। তাদের কাছ থেকে ঋণ আদায় চ্যালেঞ্জ হলেও অবশ্যই তা আদায় করতে হবে। করোনাভাইরাস ইউরোপ-আমেরিকায় যত শক্তিশালী, এর চেয়ে অনেক বেশি দুর্বল দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। তাই বিশ^ স্বাস্থ্য সংস্থা ও দেশীয় চিকিৎসাবিদদের সমন্বয়ে তৈরি স্বাস্থ্যবিধি মেনে সতর্কতার সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্য সচল করার উদ্যোগ নিতে হবে। এটি না করতে পারলে অর্থনীতি অচল হয়ে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, ঋণখেলাপিদের প্রতিনিধিরা আর্থিক খাতের নীতিনির্ধারণ করছেন। নীতিনির্ধারণের সঙ্গে জড়িতরা খেলাপি ঋণকে উৎসাহ দিচ্ছেন। তারাই আর্থিক খাতের সার্কুলার রচনা করছেন। যে কারণে আর্থিক খাতে খুবই খারাপ অবস্থা বিরাজ করছে। এ সমস্যা নিরসনে সরকার পরিচালনার সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সুচিন্তা খুবই প্রয়োজন। ঋণ নেওয়া কোনো খারাপ কাজ নয়, ঋণ নেওয়া তখনই খারাপ হয়ে দাঁড়ায়, যখন ঋণের অর্থ লুট হয়। করোনাভাইরাস সংক্রমণের কারণে সরকারি নির্দেশ ব্যাংক ঋণের কিস্তি আদায়ে ছাড় দেওয়া হয়েছে। এটি শুধু সৎ ঋণ গ্রহীতাদের জন্য দেওয়া উচিত, খেলাপিদের জন্য নয়। ঋণ খেলাপিদের প্রতিষ্ঠান যাতে প্রণোদনা না পায় সে বিষয়টিও নিশ্চিত করতে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর