শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ইতিকাফ : আল্লাহর ঘরে মুমিনরা অতিথি!

মুফতি আবদুল কাদির তমিযী

আত্মশুদ্ধি ও সংযমের মাস রমজান। মুসলিম নর-নারীর ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে এর প্রভাব ও গুরুত্ব অপরিসীম। মাহে রমজানের গুরুত্বপূর্ণ আমল হচ্ছে তারাবি, সাহরি, ইফতার, ইতিকাফ, শবেকদর, ঈদুল ফিতর ইত্যাদি। রমজানের শেষ দশকের অন্যতম আমল হচ্ছে কাফ; যা আরবি ‘আকাফুন’ শব্দমূল থেকে উৎকলিত। আভিধানিক অর্থ- স্থির থাকা, অবস্থান করা, পরিভাষায় রমজানের শেষ দশকে বা যে কোনো দিন জাগতিক কার্যকলাপ তথা পরিবার-পরিজন থেকে আলাদা হয়ে পুণ্যের আশায় পুরুষের মসজিদে আর নারীর ঘরের সুনির্দিষ্ট ও পবিত্র স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলে। ২০ রমজানে শুরু হয় রহমতের জোয়ার। আল্লাহর ঘরে তাশরিফ নেন মুমিন অতিথিরা, পার্থিব মায়াজাল ছিন্ন করে ফিরে যান আপন নীড়ে, ইতিকাফের নিয়তে মসজিদ ও ঘরে, যার ফলে রচিত হয় আল্লাহ ও বান্দার মাঝে গভীর সম্পর্ক, সুদৃঢ় সেতুবন্ধ। শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভি (রহ.) হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগায় লিখেন- ‘ইতিকাফ হচ্ছে আত্মিক প্রশান্তি, হৃদয়ের পবিত্রতা, চিন্তার বিশুদ্ধতা ও ফেরেশতার গুণাবলি অর্জন, শবেকদরের সৌভাগ্য, কল্যাণ লাভসহ সব ধরনের ইবাদতের সুবর্ণ সুযোগ লাভের শ্রেষ্ঠ উপায়।’ আল্লামা শামি (রহ.) বলেন, ‘রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া, অর্থাৎ বড় গ্রাম কিংবা শহরের প্রতিটি মহল্লা ও ছোট গ্রামের পূর্ণ বসতিতে কিছু মানুষ ইতিকাফ আদায় করলে সবাই দায়িত্বমুক্ত হয়ে যাবে। নতুবা সবাই সুন্নাত বর্জনের কারণে গুনাহগার হবে।’ তাই ২০ রমজানের সূর্যাস্তের আগ থেকে ঈদুল ফিতরের চাঁদ দেখা পর্যন্ত কাফ করতে হয়। সুরা বাকারার ১২৫ নম্বর আয়াতে ইরশাদ হচ্ছে, যখন আমি কাবাগরকে মানুষের সম্মিলনস্থল ও শান্তির আলয় করলাম, আর তোমরা ইবরাহিমের দাঁড়ানোর স্থানকে নামাজের জায়গা বানাও এবং আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার ঘরকে তাওয়াফকারী, অবস্থানকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ। কাফ মূলতই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি ইবাদত। তার পরও শবেকদরের ফজিলত লাভের জন্যই এ সময়ে কাফ-এর গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়। বুখারি ও মুসলিমের এক হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রসুলুল্লাহ সব সময় রমজানের শেষ ১০ দিন কাফ করতেন। তার মৃত্যু পর্যন্ত এ নিয়ম পালন করেছেন। অতঃপর তাঁর স্ত্রীরা কাফ-এর ধারাবাহিকতা চালু রেখেছিলেন।’ আমাদের উচিত কাফ-এর আমল বজায় রাখা। যদি পুরো ১০ দিনের কাফ সম্ভব না হয়, তাহলে অন্তত এক-দুই দিনের জন্য হলেও নফল-মুস্তাহাব হিসেবে কাফ করা দরকার।

কাফ-এর ফজিলত : হাদিসে কাফ-এর বিভিন্ন ফজিলত বর্ণিত আছে- ১. রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘যদি কেউ তার ভাইয়ের প্রয়োজন মেটাতে হাঁটে তবে তা তার জন্য ১০ বছর কাফ-এর চেয়েও উত্তম, আর যে ব্যক্তি এক দিন আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কাফ করবে আল্লাহ তার ও জাহান্নামের মধ্যে তিনটি পরিখার দূরত্ব সৃষ্টি করেন। প্রতি পরিখার প্রশস্ততা দুই দিগন্তের চেয়েও বেশি।’ মুস্তাদরাকে হাকিম। ২. ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘ইতিকাফকারী সব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে। তার জন্য পুণ্য অর্জনকারীর সমপরিমাণ পুণ্য লেখা হয়।’ ইবনে মাজাহ। ৩. হজরত হুসাইন ইবনে আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘রমজানের শেষ দশকের ইতিকাফ পুণ্যের দিক দিয়ে দুই হজ ও দুই ওমরাহর সমান।’ আস সিরাজুম মুনির।

লেখক : খতিব, বাইতুন নূর জামে মসজিদ ও সিনিয়র শিক্ষক, ছোলমাইদ ইমদাদুল উলুম মাদ্রাসা, ভাটারা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর