শনিবার, ১৬ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অধ্যাপক আনিসুজ্জামান

না-ফেরার দেশে চলে গেলেন জ্ঞানতাপস

জাতীয় অধ্যাপক মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের সামনের কাতারের সৈনিক অধ্যাপক আনিসুজ্জামান বৃহস্পতিবার বিকালে চলে গেছেন না-ফেরার দেশে। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের এই জ্ঞানতাপস শিক্ষকের বয়স হয়েছিল ৮৩। বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। আনিসুজ্জামানের পুরো নাম আবু তৈয়ব মোহাম্মদ আনিসুজ্জামান। জন্ম ১৯৩৭ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায়। তাঁর পৈতৃক বাড়ি অবিভক্ত ভারতের চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটে। শিক্ষাজীবনের প্রথম ভাগ তাঁর কলকাতাতেই কাটে। দেশভাগের সময় তিনি কলকাতার এক স্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। এরপর আরও অনেকের মতো আনিসুজ্জামানদের পরিবারও চলে আসে এপারে। ঢাকার প্রিয়নাথ হাইস্কুল থেকে ১৯৫১ সালে ম্যাট্রিক ও জগন্নাথ কলেজ থেকে ১৯৫৩ সালে আইএ পাস করা আনিসুজ্জামান কৈশোরেই জড়িয়ে পড়েন রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে। সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ ভাষার দাবিতে মানুষকে সচেতন করার জন্য প্রথম যে পুস্তিকা প্রকাশ করেছিল, তা লেখার ভার পড়েছিল তাঁর ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগ থেকে ১৯৫৬ সালে স্নাতক এবং পরের বছর স্নাতকোত্তর শেষ করে মাত্র ২২ বছর বয়সে সেখানেই শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন আনিসুজ্জামান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি করে ’৬৫ সালে তিনি শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পোস্ট ডক্টরাল ডিগ্রি অর্জন করেন। সেখানে তাঁর অভিসন্দর্ভের বিষয় ছিল ‘উনিশ শতকের বাংলার সাংস্কৃতিক ইতিহাস : ইয়ং বেঙ্গল ও সমকাল’। তিনি স্ত্রী, দুই কন্যা, এক পুত্রসহ অসংখ্য আত্মীয়স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আজীবন সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে নিজেকে পরিচালিত করেছেন। সুচিন্তা ও সুবিবেচনার প্রতীক বলে বিবেচিত হতেন এই শিক্ষাবিদ। ধর্মান্ধতা, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে তিনি ছিলেন আপসহীন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের ইমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের মৃত্যুতে দেশের বুদ্ধিবৃত্তির জগতে এক অসীম শূন্যতার সৃষ্টি হলো। পরিণত বয়সে জীবনের পরপারে পাড়ি দেওয়া এই জ্ঞানতাপস ন্যায়ের পক্ষে আজীবন যে সুদৃঢ় ভূমিকা রেখেছেন তা সবার জন্য অনুসরণীয়। দেশের এই অন্যতম শ্রেষ্ঠ সন্তানের প্রতি আমাদের শেষ শ্রদ্ধা। অভিবাদন।

মহান স্রষ্টা তাঁকে জান্নাতের সুশীতল ছায়ায় স্থান দিন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর