সোমবার, ১৮ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

মানবিক কষ্ট অনুভব করতে শেখায় রোজা

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

মানবিক কষ্ট অনুভব করতে শেখায় রোজা

মহামারী দিয়ে খোদা করছ এ দিল সাদা দেখতে আমরা মানুষ তবে মন ভর্তি কাদা।

হে আল্লাহ! আমাদের রোজাগুলো আপনি কবুল করে নিন। আমাদের দিলকে সাফ করে দিন। ভুলভ্রান্তিগুলো আপনার হাবিবের উসিলায় মাফ করে দিন। আমাদের করোনার আজাব থেকে মুক্তি দিন। এ বিশ্বকে আবার শান্ত স্বাভাবিক সুখময় করে দিন।

পৃথিবীতে সবচেয়ে বড় কষ্ট হলো ক্ষুধার কষ্ট। এই ক্ষুধার জন্যই আমাদের এত পরিশ্রম এত ছুটোছুটি। পেটপুরে দুটো খাওয়ার জন্য কি না করে মানুষ। এমনো শোনা যায়, পেটের জ¦ালা নিভাতে পেটের সন্তানকেই বিক্রি করে দিয়েছে মানুষ। রোজার আগে একটি সংবাদে দেখলাম, খেতে না পেয়ে দরিদ্র বাবার এক হতভাগ্য সন্তান গলায় ফাঁস দিয়েছে।

একজন মানুষ যতক্ষণ না ক্ষুধায় কষ্ট পাবে ততক্ষণ পর্যন্ত তাকে কোনোভাবেই ক্ষুধার জ¦ালা কেমন তা বোঝানো যাবে না। মানুষের ক্ষুধার কষ্ট কী তা বোঝার জন্যও নবীজি অনেক সময় না খেয়ে থাকতেন। বেশির ভাগ সময় তিনি নিজের খাবার অন্যকে দিয়ে অনাহারে কাটাতেন। হাদিস শরিফে পাওয়া যায়, গরিব সাহাবিরা ক্ষুধার কষ্ট সইতে না পেরে পেটে পাথর বাঁধত, নবীজি তাদের কষ্ট অনুভব করার জন্য না খেয়ে পেটে পাথর বেঁধে দিনের পর দিন মাসের পর মাস কাটিয়ে দিতেন।

হে আমার রোজাদার ভাইয়েরা! আমরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত না খেয়ে থাকি। দুপুরের পর থেকে ক্ষুধার মাত্রা বাড়তে থাকে। এক সময় মনে হয় আর যেন পারছি না। মাঝে মাঝে এমনও হয়, কাজকর্ম সব বাদ দিয়ে অপেক্ষা করতে হয় ইফতারের জন্য। আমাদের এই কষ্ট তখনই সার্থক হবে যখন ভাবব, আমাদের আশপাশে যারা না খেয়ে আছে তাদেরও ঠিক এমনই কিংবা এর চেয়েও বেশি কষ্ট হচ্ছে এ অনুভব করা। ওইসব ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানো, তাদের মুখে দু’মুঠো খাবার নিশ্চিত করা একজন রোজাদারের কর্তব্য ও রমজানের অন্যতম শিক্ষা। আর এ জন্যই আল্লাহ সামর্থ্যবানদের ওপর জাকাত-সদকাতুল ফিতরসহ দান-খয়রাত ফরজ করে দিয়েছেন।

আমরা যদি দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়তে না পারি, করোনাভাইরাসের এই দুঃসময়ে ক্ষুধার্ত মানুষের মুখে হাসি ফুটাতে না পারি, তাহলে ব্যক্তিগত পর্যায়ে যত বড় মুত্তাকিই হই না কেন, জাহান্নাম থেকে আমরা কেউ বাঁচতে পারব না। সূরা দাহারে আল্লাহ বলেন, ‘ফেরেশতারা জাহান্নামিদের জিজ্ঞেস করবে, ‘কেন তোমরা জাহান্নামি হলে? জাহান্নামিরা বলবে, আমরা ধার্মিক ছিলাম না। আর ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ার কর্মসূচি আমাদের অর্থ ব্যবস্থায় ছিল না।’ তখন সব পাপীর ধর্মকর্ম বিফলে যাবে, আসুন আমরা ক্ষুধামুক্ত সমাজ গড়ি, রোজার অভ্যাস করি।

মনে রাখতে হবে, সারা দিন না খেয়ে থাকা, সারা রাত নামাজ পড়া অনেক সহজ, নিজের কষ্টার্জিত একটি পয়সা খোদার রাস্তায় অন্যের কল্যাণে বিলিয়ে দেওয়া সত্যিই বড় কষ্টের। তো এই কষ্ট সয়ে আমরা যদি সঠিক রোজা করতে পারি এবং দারিদ্র্যমুক্ত সমাজ গড়ার কর্মসূচি নিতে পারি, আশা করা যায় এই ক্ষণস্থায়ী দুনিয়া থেকে বিদায় নেওয়ার পরপরই অপরূপ জান্নাত আল্লাহ আমাদের দান করবেন।

 

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ মুফাসসির সোসাইটি।

সর্বশেষ খবর