মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

ঈদ মোবারক

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

ঈদ মোবারক

ঈদের আগে আর লেখার সুযোগ পাব না। তাই সবাইকে ঈদ মোবারক জানাচ্ছি। মনে হয় সারা পৃথিবী এর আগে কখনো এমন নিরস ঈদ দেখেনি। বড় ঈদও যে কেমন হবে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনই জানেন। তবু সমগ্র মুসলিম জাহানের সঙ্গে বাংলাদেশের মুসলমান ভাইদের পবিত্র রোজার ঈদের আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানাচ্ছি। সবাইকে ঈদ মোবারক।

বহু দিন পর বসুন্ধরা গ্রুপ করোনাভাইরাসের চিকিৎসায় আধুনিক হাসপাতালের ব্যবস্থা করে সরকারের হাতে তুলে দেওয়ায় তাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই। ইদানীংকালে বিত্তশালীদের চিত্ত বড়ই দুর্বল, অন্যের ভালোমন্দ নিয়ে তারা খুব একটা ভাবে না। এরকম অবস্থায় বসুন্ধরা গ্রুপের এই উদ্যোগ সমস্ত জাতির পক্ষ থেকে অভিনন্দন পাওয়ার যোগ্য। একদিকে বসুন্ধরা গ্রুপ শত কোটি টাকা খরচ করে আর্তের সেবায় সরকারের হাতে হাসপাতাল তুলে দেয়, অন্যদিকে ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কোথাকার নজরুল ইসলাম মজুমদার প্রায় সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে ১০-২০ কোটির চেক দিয়ে ছবি তুলে হাজার হাজার কোটি লুটপাট করে বলার কেউ নেই। আড়াই হাত দাড়ির নিচে এমন দুর্নীতি ভাবী আর হাসি! ’৯৪ সাল থেকে ২০০৭ সাল ওয়ান-ইলেভেনের অবৈধ সরকার আসার আগ পর্যন্ত অগ্রণী ব্যাংক থেকে দুই কোটি ৯৪ লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। অবৈধ ওয়ান-ইলেভেনের আগ পর্যন্ত ঋণটি ছিল শ্রেষ্ঠ নিয়মিত ঋণের মধ্যে অন্যতম। ওয়ান-ইলেভেনের পর ব্যাংকের পাওনা ব্লক্ড রেখে নতুন ঋণ চেয়েছিলাম। দেয়নি। পরে সমুদয় সুদ মওকুফ করলে একবারে টাকা শোধ করব বলেছি। ব্যবসা চলাকালীন ৭ কোটি লাভ দিয়েছি। তারপরও ৮ বা ৯ কোটি পায়। মাঝে মাঝে ২৩-২৪ কোটি দেখায়। বিচারের কোনো জায়গা নেই। হলমার্ক, ডেসটিনি, বিসমিল্লাহ গ্রুপ তাদের হাজার হাজার কোটি, ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি, তিনি তো প্রায় আড়াই হাজার কোটি শুধু আমদানি-রপ্তানিতেই নয়-ছয় করেছেন। ছেলেবেলায় শুনেছিলাম গরু মেরে জুতা দান। একেই বলে গরু মেরে জুতা দান। গত মঙ্গলবার লেখা হাতে আসতেই মাননীয় মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ফোন। কারণ শুরুটাই ছিল ৮-১০ বার মাননীয় মন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে ফোন করেছি, কিন্তু পাইনি। মঙ্গলবার ১০টার দিকে মন্ত্রীর ফোন পাই। বলেন, ‘ভাই আমি দুঃখিত। ফোনটার ত্রুটি ছিল বলে ঠিক বুঝতে পারিনি, ধরতেও পারিনি। নেতা, আপনাকে আমি খুব সম্মানের চোখে দেখি, সম্মান করি।’ আদতে গোপালগঞ্জের শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ভালো মানুষ, নিবেদিত আওয়ামী লীগার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী এলাকা অনেকদিন দেখাশোনা করেছেন। ’৯০-এর আগে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে জানতাম না। ’৯০-এর শেষে দেশে ফিরে ১৮ ডিসেম্বর রাত ১টায় টুঙ্গিপাড়া গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিল ৩-৪শ কর্মী। সে যাত্রায় কবি নির্মলেন্দু গুণও ছিলেন। পিতার কবর জিয়ারত করে সুস্থির ছিলাম না। আমার ছোটমোটো বউ বঙ্গবন্ধুর কবর থেকে আমাকে তুলে আনতে পারছিল না। জীবনে অমন বোধশক্তিহীন অচল আর কখনো হয়েছি বলে মনে পড়ে না। কেমন যেন সবকিছু অসার ঠেকছিল। কোনো কিছুই বুঝতে পারছিলাম না। মানুষের যে অমন লাগতে পারে কোনো দিন ভাবিনি। ১টা থেকে ২-আড়াইটা পর্যন্ত টুঙ্গিপাড়ার মানুষ সে যে কী আগ্রহে আমাদের যতœ করেছিল সে বলার মতো না। এ কাজে শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ছিলেন অগ্রগামী। পরদিন সকাল ১০টা-সাড়ে ১০টার দিকে ফিরতি পথে রওনা হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ছায়ার মতো ছিলেন। মধ্য রাতে খাওয়া, সকালের নাশতা মনে হচ্ছিল যেন মামার বাড়ির আদর। বড় ভালো লেগেছিল। এরপর মৃত্যুবার্ষিকী পালন করতে তিন-চারবার গেছি। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ তার গোপালগঞ্জের বাড়িতে আমাকে খাইয়েছে। তার স্ত্রীর রান্না অসাধারণ। আর একজন মানুষ যখন পরম আগ্রহ নিয়ে কাউকে খাওয়ায় তখন রান্না আপনা-আপনিই সুস্বাদু হয়ে যায়। সেই শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ এখন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী। আমাকে যেমন সম্মান করে, ভালোবাসে, আমিও তেমনি তাকে গভীরভাবে স্নেহ করি, ভালোবাসি। তার ফোন পেয়ে সত্যিই খুশি হয়েছি। বেশ কবছর আগে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মাহবুবুল আলমকে এক সকালে ফোন করেছিলাম। দুই-তিনবার রিং করে ছেড়ে দিয়েছিলাম। ঘণ্টাখানিক পর ফিরতি ফোন। ধরতেই বললেন, ‘কেমন আছেন? আপনার ফোন ধরতে পারিনি। তাই ফোন করলাম।’ বলেছিলাম, নিজেই ফোন করেছেন? তিনি বললেন, ‘হায় হায়, বলেন কী! আপনি ফোন করেছেন, আপনাকে নিজে ফোন না করে পিএ, পিএস দিয়ে করাব-এও কি হয়? স্বাধীনতার পর বঙ্গবন্ধুর হাতে যেদিন অস্ত্র দেন সেদিন একজন রিপোর্টার হিসেবে ছিলাম। সে দিন কোথায় আপনি আর কোথায় আমি। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আপনি কোথায় থাকতেন আর আমি কোথায় থাকতাম।’ কেউ ফোন করলে দায়িত্বশীল সব মানুষের উচিত ফিরতি ফোন করা। যারা করে না, সেটা তাদের ব্যাপার। কিন্তু আদব-কায়দা বলে যেই ফোন করুক, তার ফোন ধরা দরকার এবং ধরতে না পারলে পরে ফোন করা উচিত। শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহর ফোন পেয়ে সত্যিই খুশি হয়েছি। মসজিদের দরজা খুলে দেওয়ায় আরও খুশি হয়েছি। কত সুন্দর দূরে দূরে জায়নামাজ বিছিয়ে নামাজ আদায় করছে। মহান আল্লাহ সর্বশক্তিমান। আল্লাহই ধ্বংস করেন, আল্লাহই সৃষ্টি করেন। মসজিদ বন্ধ থাকায় আমি খুবই কষ্ট পেয়েছি। হুমড়ি খেয়ে নামাজ আদায় করতে পারুক আর না পারুক শৃঙ্খলার সঙ্গে সীমিত মানুষের নামাজ আদায় কোনো দোষের নয়। কিন্তু নামাজই পড়া যাবে না, পাঁচজনের জায়গায় ১০ জন হলে আইনানুগ ব্যবস্থা-এসব ভালো কথা না। আল্লাহর এবাদতে কোনো বাধা এলে সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। তাই নামাজের বাধা-নিষেধ প্রত্যাহার করে মসজিদের দরজা খুলে দেওয়ায় খুবই ভালো হয়েছে। এটা অত্যন্ত প্রশংসনীয় কাজ।

ছোটখাটো সমালোচনায় জ্বলে ওঠা উচিত না। বড় কাজের সমালোচনা হবেই। যে সমালোচনা সইতে পারে না সে বড়ও হতে পারে না। বড় হওয়া মহান হওয়ার প্রধান শর্তই অন্যের সমালোচনা সহ্য করার ক্ষমতা অর্জন করা। আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ডালপালা, শাখা-প্রশাখার অনেক কাজ পছন্দ করি না। তারা পছন্দ করার মতো কাজও করেন না, করতেও জানেন না। তবে নিরাসক্তভাবে বলতে পারি, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশকে যেভাবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সেটা যথার্থ। যে যাই বলুন এর চাইতে খুব একটা ভালো কেউ চালাতেন কেন যেন বিশ্বাস করতে মন সায় দেয় না। তবে এটা সত্য, সবকিছুতেই কমবেশি ত্রুটি আছে। রেশন কার্ড অথবা টাকা দেওয়ার জন্য যে তালিকা করা হয়েছে তা সার্বজনীন হয়নি। একপেশে হয়েছে। প্রতি উপজেলায় ইউএনওর নেতৃত্বে সরকারি কর্মচারীরা আদাজল খেয়ে তালিকা তৈরি করেছে। তালিকার উৎস চেয়ারম্যান-মেম্বার। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের খুব একটা ভূমিকা নেই। শুধু আওয়ামী লীগের লোক নিয়ে তালিকা হয়েছে সেটাও সত্য না। কারণ আওয়ামী লীগের কোনো ভূমিকা নেই, আওয়ামী লীগ নেতাদেরও ভূমিকা নেই। সবকিছু আমলা নির্ভর। আমার বিবেচনায় এখানেই বড় ত্রুটি। দল শক্তিশালী না হলে, শক্তিশালী না থাকলে অফিসাররা কখনো ধরা দেয় না। শুধু সরকারি কর্মচারী দিয়ে যদি রাষ্ট্র চলত বা চালানো যেত তাহলে আইয়ুব খানের ক্ষমতা ত্যাগের কোনো প্রশ্ন ছিল না। পাকিস্তানের কথা ছেড়েই দিলাম, বাংলাদেশেও হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ক্ষমতা ছাড়ার দরকার হলো কেন? সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের সময়ের চাইতে বেশি সুবিধা আর কখনো ভোগ করেনি এবং এরশাদের পেছনে যেভাবে সরকারি কর্মচারীরা ছিল আর কোনো রাষ্ট্রপতি বা সরকারের পেছনে ছিল না। সেনাপ্রধান জেনারেল নুরুদ্দিন হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে বাবা ডাকতেন। যদিও এ সমস্ত ক্ষমতার বাবারা ক্ষমতার সন্তানদের ভালোভাবে চিনতে পারেন না। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ যখন ’৯০-এর ডিসেম্বরে নুরুদ্দিনকে সেনাবাহিনী নামাতে বলেছিলেন তখন ভদ্রলোক বলেছিলেন, ‘আমি জনগণের মুখোমুখি সেনাবাহিনী নামাতে পারব না।’ জনগণ রাস্তায় নামলে সব জেনারেলই অমনটা করেন বা বলেন। সে জন্য গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে রাজনীতিকে হেয়প্রতিপন্ন করে বিত্তশালী বা কর্মচারী দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা কখনো খুব একটা সুখকর নয়। তাই ব্যাপারটা যতেœর সঙ্গে দেখতে বলছি। করোনা মোকাবিলায় রাজনৈতিক, সামাজিকভাবে মানুষকে উৎসাহিত করতে হবে। সে দিন আমার বাড়ির পশ্চিমে বিএনপির একটি ত্রাণ বিতরণ দেখলাম। খুব একটা খুশি হতে পারলাম না। হলুদ-সবুজ প্রিন্ট করা ব্যাগে ৮-১০ কেজি ত্রাণ সামগ্রীর ৫৬ প্যাকেট শুধু মেয়েদের দেওয়া হলো। কিছু মেয়ে না পেয়ে সে কী দীর্ঘশ্বাস অভিসম্পাত! ত্রাণ দিতে গিয়ে নিজেদের মধ্যেও কথা কাটাকাটি হয়। যারা ১৫-১৬ জন পায়নি তাদের জ্বলন ভাবিয়ে তোলার মতো। মনে হলো হৃদয়ের টানে এ ত্রাণ বিতরণ নয়, তালিকাভুক্তি এবং ছবি তোলার জন্য এটা এক মহড়া। অন্তরের আকুতির লেশমাত্র খুঁজে পাওয়া যাবে না তাতে। যদি এসব থেকে দূরে সরে অন্তরের স্পর্শ পাওয়া যেত তাহলে আল্লাহর রহমত হতো। হয়তো বালা-মুছিবতের হাত থেকে অব্যাহতি বা মুক্তি পেতাম। আমরা প্রচারে যতটা এগিয়ে আন্তরিকতায়, স্বতঃস্ফূর্ততায় ততটা এগোতে পারিনি। কত শত শত হাজার হাজার কোটি টাকার বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থা। কিন্তু করোনায় তারা অধিকাংশ মুখ লুকিয়েছে। বড় বড় ক্লিনিক-হাসপাতাল তালাবদ্ধ, কেউ নেই। অথচ সারা বছর তারা হাজার হাজার কোটি টাকার স্বাস্থ্য ব্যবসা করে। এতকাল চিকিৎসা ছিল সেবা, এখন সেটা হয়েছে ব্যবসা। আগে শুনতাম, পৃথিবীতে সব থেকে বড় ব্যবসা অস্ত্র, নারী, খেলনা। এখন দেখছি শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবসার ক্ষেত্রে সবকিছু ছাড়িয়ে গেছে। এটা মোটেই শুভ নয়। এ এক অশুভ পাঁয়তারা। সারা পৃথিবী কাঁপিয়ে দেওয়া করোনাতেও যদি আমাদের হুঁশ না ফেরে আল্লাহ রাব্বুল আল আমিন এ জগৎ সংসার ধ্বংস করার আগে মনে হয় কারও নজর ফিরবে না।

গত বুধবার ছিল বাবার মৃত্যুবার্ষিকী। ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী। কবরের পাশের মসজিদে জোহরের নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম। আগের দিন মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্রতিদিনে বাবার মৃত্যুবার্ষিকী নিয়ে দুকথা লিখেছিলাম। সেখানে ভুলে শাহানা-দুলালের কথা বাদ পড়েছিল। অন্যদিকে শুশু কানাডায় থাকার পরও ওর কথা এসে গিয়েছিল। কেন যেন মসজিদে বসে নামাজের আগে বারবার রহিমা-শুশু-শাহানা ছোটবোনগুলোর কথা মনে পড়ছিল। খুব বেশি ভাইয়েরা এমন বোনভাগ্য নিয়ে জন্মায় না। আমাদের পরিবার বারেবারে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। মায়ের জন্যই বোধহয় ভেঙে খান খান হয়ে যায়নি। মুক্তিযুদ্ধের মাঝামাঝি আগস্টে কাদেরিয়া বাহিনী যখন তছনছ হয়ে গিয়েছিল তখন আমাদের পরিবার দুই ভাগে ভাগ হয়েছিল। মায়ের সঙ্গে রহিমা-শুশু-শাহানা-আজাদ-মুরাদ-মুন্নু ঢাকায়। বাবুল-বেলাল আমার সঙ্গে মেঘালয়ে। আল্লাহর অশেষ দয়ায় স্বাধীনতার পর আবার আমরা একত্রিত হয়েছিলাম। ’৭৫-এও একই রকম। মুন্নু আমেরিকায়, রহিমা ঢাকায়, বড় ভাইসহ বাকি সবাই কয়েক মাস পর ভারতে গিয়ে একত্র হয়। সেজন্য মা আমাকে সব সময় তার সন্তানদের আশ্রয় ভাবতেন। আমিও সাধ্যমতো ভাইবোনকে নিয়ে দুঃখ-কষ্ট আনন্দে কাটাতাম। এখন ভাইবোনগুলোর কথা বড় বেশি করে মনে পড়ে। রহিমার কথা কেন যে এত বারবার মনে পড়ছে ভেবে পাচ্ছি না। ছেলেবেলায় একবার বাড়ির বাইরে পুকুরপাড়ে রহিমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিয়েছিলাম। সেখানে এক মস্ত খাসি রহিমাকে ডিপ মেরেছিল। খাসিটির মস্তবড় শিং রহিমার গালে বিঁধে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল। যে দাগ ওর সারা জীবনের সাথী হয়ে আছে। শুশু-শাহানা তো এখন দেশেই। তাই রহিমার কথা খুব করে মনে পড়ছে। রহিমার ছেলে রোমেল ছিল আমাদের পরিবারে প্রথম সন্তান। তারপর বড় ভাইর মেয়ে রিয়া। রহিমার ছেলে গালিব, শুশুর ছেলে- জ্বীত, মেয়ে- রীম, শাহানার ছেলে- অনিক, মেয়ে- ইয়া, বাবুলের ছেলে- মুক্তাদির, মেয়ে- মৌমিত, বেল্লালের ছেলে- স্যামশান, মেয়ে- শারলিন, সানিয়া, মুরাদের ছেলে- দর্শন, মেয়ে- মঞ্জিলা, দ্রুপদি ও আজাদের ছেলে- আদর্শ, মেয়ে- ঝুনঝুন সিদ্দিকী একে একে সবাই এসেছে। এক সময় বাড়ি ভরে গেছে। আবার একইভাবে খালি হয়ে গেছে। কিন্তু সবার আগে ঘর আলো করে এসেছিল রহিমার ছেলে রোমেল। রহিমার স্বামী আশরাফুজ্জামান খান পাশা কী যে করেছে আমার জন্য। বঙ্গবন্ধুর নির্মম হত্যার পর সবাই যখন আগরতলা হয়ে শিলিগুড়িতে তখন রোমেলকে নিয়ে পাশা ও রহিমা ভারতে পাড়ি জমাতে গিয়েছিল। চৌদ্দগ্রামের কাছে কোথাও ওরা ধরা পড়ে। প্রায় ছয় মাস ডিজিএফআইর মেজর কামরুলের বাড়িতে ছিল। মেজর কামরুলের মা-বাবা রহিমা এবং পাশাকে নিজের সন্তানের মতো দেখাশোনা করেছেন। কেন যেন পুরনো কথা আজ বড় বেশি করে মনে পড়ছে। বয়স হলে মনে হয় এমনই।

বঙ্গবন্ধুর কথা বড় বেশি করে মনে পড়ছে। রহিমা শুশু যখন ঢাকায় তখন রহিমা চিঠিতে লিখেছিল, ‘ছোটভাই, আমি স্বপ্নে দেখেছি বঙ্গবন্ধুর কাছে আপনি অস্ত্র দিচ্ছেন।’ পরবর্র্তীতে তাই হয়েছিল। বিন্দুবাসিনী স্কুল মাঠে তাঁর পায়ের কাছে আমরা অস্ত্র বিছিয়ে দিয়েছিলাম। যে অস্ত্র তিনি পরিদর্শন করছিলেন। এটা তারই একটি অংশ।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর