মঙ্গলবার, ১৯ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্য ও আমল

মুফতি হেলাল উদ্দীন হাবিবী

লাইলাতুল কদরের মাহাত্ম্য ও আমল

নিশ্চয় আমি কদরের রজনীতে কোরআন নাজিল করেছি। কদরের রজনী সম্বন্ধে আপনি জানেন কি? কদরে রজনী হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। (সূরা কদর, আয়াত : ১-৩)। এভাবেই মহান আল্লাহ পবিত্র কোরআনে এ রাতের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আলোকপাত করেছেন। দয়াময় প্রভুর অগণন নেয়ামতের মধ্যে অন্যতম একটি নেয়ামত হলো সময়। যাকে তিনি (দিন-রাত) দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন এবং কিছু সময়কে কিছু সময়ের ওপর প্রাধান্য দান করেছেন। যেমন-সপ্তাহের মধ্যে জুমার দিন, মাসের মধ্যে রমজান মাস ইত্যাদি। তেমনিভাবে দয়াময় আল্লাহ স্বীয় বান্দাদের হেদায়াতপ্রাপ্তি, গুনাহ মোছন ও দোয়া কবুলের জন্য রাতসমূহের মধ্যে লাইলাতুল কদরকে সর্বোচ্চ শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছেন এবং এ রাতের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে স্বতন্ত্র একটি সূরা নাজিল করে এ রজনীকে করেছেন আরও মহিমান্বিত, মর্যাদাবান ও বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। লাইলাতুন শব্দের অর্থ রাত বা রজনী। আর কদর শব্দের অর্থ শ্রেষ্ঠত্ব, মর্যাদা ও পরিমাণ ইত্যাদি। সুতরাং ‘লাইলাতুল কদর’-এর অর্থ শ্রেষ্ঠ রজনী, মর্যাদাবান রাত্রি। হজরত আবু বকর ওয়াররাক (রহ.) এ রাতের নামকরণ সম্পর্কে বলেন, গুনাহের জালে জড়িয়ে পড়ার কারণে যে ব্যক্তি ছিল সবচেয়ে নিকৃষ্ট ও মর্যাদাহীন; এমন অপরাধীও যদি এ রাতে ইবাদত-বন্দেগি, তাসবিহ-তাহলীল, দোয়া-জিকিরে মশগুল হয়, খাস দিলে তওবা করে এবং অশ্রুসিক্ত নয়নে মহান স্রষ্টার দরবারে গুনাহ মাফের ফরিয়াদ করে, তখন সেও হয়ে যায় মহান আল্লাহর কাছে বিশেষ মর্যাদাবান।

প্রিয় পাঠক! মহান রাব্বুল আলামিন এ রাতের মর্যাদা সম্পর্কে বলেছেন, কদরের রজনী হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। (সূরা কদর, আয়াত : ৩) এখানে মহান আল্লাহ লাইলাতুল কদর বা শবেকদরকে হাজার মাসের সমান বলেননি; বরং হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম বলেছেন। তাই আমরা যদি কদরের রজনীকে এক হাজার মাসের সমানও ধরি, তাহলে এ রাতটি তিরাশি বছর চার মাসের সমপরিমাণ হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি লাইলাতুল কদর পেল এবং তাতে ইবাদত-বন্দেগি করল, সে যেন তিরাশি বছর চার মাস ইবাদত করার সমপরিমাণ সওয়াব লাভ করল। তারপরও এ রাত হাজার মাস অপেক্ষা কত গুণ উত্তম (?) একগুণ, দি¦গুণ না বহুগুণ, তা প্রজ্ঞাময় প্রভু-ই ভালো জানেন। মহান আল্লাহ এ সূরার মাঝে লাইলাতুল কদর বা শবেকদরের চারটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করেছেন : ১. এ রজনীতে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। ২. এ রাতে জিবরাইল (আ.)-এর নেতৃত্বে ফেরেশতারা দুনিয়াতে আগমন করেন। ৩. এ রাতটি হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। ৪. এ রাতে সুবহে সাদিক পর্যন্ত শান্তি ও নিরাপত্তার বারি বর্ষিত হতে থাকে। হজরত মুজাহিদ (রহ.) এই সূরা কদরের শানে নুজুল প্রসঙ্গে বলেন, প্রিয়নবী (সা.) একবার বনী ইসরাইলের এক ব্যক্তির আলোচনা প্রসঙ্গে বললেন, তিনি এক হাজার মাস পর্যন্ত আল্লাহর পথে জিহাদে অংশগ্রহণ করেছিলেন।

লেখক : খতিব, মাসজিদুল কোরআন জামে মসজিদ, কাজলা, যাত্রাবাড়ী, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর