বুধবার, ২০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

বন্দীদের প্রতি দয়া

সম্রাট অশোক তাঁর রাজত্বের ত্রয়োদশ বছরে পঞ্চম প্রস্তরলিপির মাধ্যমে ধম্ম-এর আদর্শের প্রচার শুরু করেন। এ লিপিতে অশোক বন্দীদের প্রতি দয়া প্রদর্শনের জন্য রাজকর্মচারীদের নির্দেশ দেন। যেসব বন্দীর সন্তান-সন্ততি আছে, যারা বৃদ্ধ, দুর্বল ও অসুস্থ তাদের তিনি মুক্ত করে দেন। তিনি তাঁর একাধিক লিপিতে মানবজাতির কল্যাণের ও সুখ শান্তি প্রতিষ্ঠার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন এবং সে লক্ষ্যে পৌঁছবার উপায় তিনি তাঁর ষষ্ঠ প্রস্তরলিপিতে বর্ণনা করেন। তাঁর ধম্ম-এর চিন্তার মূলে ছিল প্রত্যেক ধর্ম এবং ধর্মাচরণের প্রতি সহনশীলতা ও ভালোবাসা। তিনি তাঁর দ্বিতীয় লিপির মাধ্যমে শুধু মানুষ, পশু এবং পাখির প্রতি দয়া প্রদর্শন নয়, বরং উদ্ভিজ্জগতের প্রতিও সহনশীল হওয়ার নির্দেশনা দেন। তিনি ফলদায়ক বৃক্ষ, ঔষধি লতাগুল্ম, ও জ্বালানির জন্য বৃক্ষ রোপণের এবং উদ্ভিদকুলের স্বাভাবিক বর্ধন ব্যাহত না করার নির্দেশ দেন।

রাজুক বা সাম্রাজ্যের আঞ্চলিক কর্মচারীদের সমন্বয়ে গঠিত সংঘ ছিল ধম্ম-এর প্রচারের আরেকটি সাংগঠনিক উপায়। রাজুক ঢাক পিটিয়ে জনগণের মধ্যে সমন জারি করত এবং ঘোষণা করত যে, ‘বাবা-মাকে এবং শিক্ষককে অবশ্যই মান্য করতে হবে, জীবিত সকল প্রাণীর প্রতি সদয় হতে হবে এবং সব সময় সত্যি কথা বলতে হবে।’[Minor Rock Inscriptions, tr. R. Thapar, Ashoka and the Decline of the Maurya.

রাষ্ট্র ও রাষ্ট্রব্যবস্থা সম্পর্কে অশোকের দর্শন কয়েক শতকব্যাপী যৌক্তিক অনুসন্ধান ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করে। প্রাথমিক পর্যায়ের আর্যদের যাযাবর গ্রামীণ সংস্কৃতি থেকে মৌর্যদের অধীনে স্থায়ী ও নগরকেন্দ্রিক সংস্কৃতিতে উত্তরণ মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধন করে। জৈন ও বৌদ্ধ চিন্তাধারা ব্রাহ্মণ সংস্কৃতির বিসর্জনমূলক ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানের ঐতিহ্য থেকে মৌর্যযুগের গভীর ও বিমূর্ত চিন্তাধারা রূপায়ণে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এটি নিঃসন্দেহে সামাজিক ও রাজনৈতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, ধর্মীয় বিসর্জন থেকে সম্প্রীতি এবং সহনশীলতা প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এক অসাধারণ মহতী উত্তরণ।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর