শুক্রবার, ২২ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

রোজার শুদ্ধিতে ফিতরা

যুবায়ের আহমাদ

রোজার শুদ্ধিতে ফিতরা

ইসলামী অর্থনীতিতে দারিদ্র্য বিমোচনের চূড়ান্ত ব্যবস্থা হলো জাকাত। আর ঈদকেন্দ্রিক গরিবদের সাময়িক খাবার ও নিত্যপ্রয়োজন পূরণের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে ফিতরার। ফিতরার মাধ্যমে গরিব মানুষগুলো সাময়িকভাবে অভাব পূরণের ব্যবস্থা হবে আবার ধনীরা তাদের রোজায় অনাকাক্সিক্ষতভাবে ঘটে যাওয়া ভুলত্রুটি ক্ষমা পাবেন এর মাধ্যমে। সদকাতুল ফিতরের দুটি উদ্দেশ্য। ১. রোজাদারের রোজাকে পবিত্র করা। ২. মিসকিন ও অভাবীদের ঈদ আনন্দের দিনে হাত পাতা থেকে বিরত রাখা। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘অশ্লীল ও অনর্থক কথাবার্তার কারণে সিয়ামে ঘটে যাওয়া ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো দূর ও মিসকিনদের খাবারের ব্যবস্থা করার জন্য রসুলে কারিম (সা.) সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। আবু দাউদ।

সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হওয়ার জন্য শর্ত হলো নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হওয়া। জাকাতের জন্যও নিসাব পরিমাণ মাল থাকতে হয় আবার সদকাতুল ফিতরের জন্য নিসাব পরিমাণ মালের মালিক হতে হয়। তবে জাকাতের জন্য বছরপূর্তি অর্থাৎ নিত্যপ্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদের এক বছর পূর্তি হওয়া শর্ত কিন্তু সদকাতুল ফিতরের জন্য বছরপূর্তি শর্ত নয়। ঈদুল ফিতরের দিন ভোরবেলায় যার কাছে নিসাব পরিমাণ মাল থাকবে তার ওপরই সদকাতুল ফিতর ওয়াজিব হবে। এমনকি ওই ব্যক্তি যদি এর আগের দিন কিংবা পরের দিনও সম্পদহীন থাকে কিন্তু ঘটনাক্রমে ঈদুল ফিতরের দিন ভোরবেলায় তার পরিবারের প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ মাল থাকে তাহলেই তার এবং তার অধীনস্থদের সবার পক্ষ থেকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। নিসাব হলো নিত্যপ্রয়োজন ও ঋণের অতিরিক্ত কারও কাছে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপা অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার সমপরিমাণ নগদ অর্থ থাকা।

সদকাতুল ফিতরের পরিমাণ হলো অর্ধ সা’ (১ কেজি ৬৫০ গ্রাম) গম অথবা এক সা (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্যদ্রব্য, খেজুর, জব, কিশমিশ অথবা পনির। হজরত আবু সাঈদ খুদরি (রা.) বলেন, আমরা এক সা’ (৩ কেজি ৩০০ গ্রাম) খাদ্য অথবা এক সা’ খেজুর অথবা জব অথবা কিশমিশ অথবা পনির দ্বারা সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। সহিহ বুখারি। আরেকটি হাদিসে এসেছে, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যুগে আমরা দুই মদ্দ গম দিয়ে সদকাতুল ফিতর আদায় করতাম। মুসনাদে আহমাদ। সামর্থ্য অনুযায়ী সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। বেশি বিত্তশালীদের খেজুর দিয়ে আদায় করা উচিত।

গম দিয়ে দিলে আধা সা বা এক কেজি ৬৫০ গ্রাম। আর খেজুর, জব, পনির বা কিশমিশ দিয়ে আদায় করলে জনপ্রতি এক সা’ বা তিন কেজি ৩০০ গ্রাম দিতে হবে। গমের পরিমাণটা কম কারণ তখন অধা সা গমের দাম ১ সা খেজুর, কিশমিশ যব কিংবা পনিরের চেয়েও বেশি ছিল। বর্তমানে এই পাঁচটি পণ্যের মধ্যে গমের দামই সবচেয়ে কম। সাহাবায়ে কেরাম যেই জিনিসের দাম বেশি সেই জিনিস দিয়ে ফিতরা দিতেন। বাংলাদেশের বর্তমান বাজারের মূল্য অনুযায়ী আধা সা গমের দাম ৭০ টাকা। তাই ইসলামিক ফাউন্ডেশন সর্বনিম্ন ফিতরা নির্ধারণ করেছে ৭০ টাকা। তাছাড়া এক সা’ যবের মূল্য ২৭০ টাকা, ১ সা’ কিশমিশের দাম ১ হাজার ৫০০ টাকা, এক সা খেজুরের দাম ১ হাজার ৬৫০ টাকা আর সর্বোচ্চ ১ সা’ পনিরের দাম ২ হাজার ২০০ টাকা। ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের সময় ফিতরা ওয়াজিব হয়। সুতরাং যে সন্তান ঈদুল ফিতরের দিন সুবহে সাদিকের আগে জন্মগ্রহণ করবে তার সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে। কিন্তু যে শিশু সুবহে সাদিকের পর জন্মগ্রহণ করবে তার পক্ষ থেকে বাবাকে সদকাতুল ফিতর আদায় করতে হবে না। বাদায়েউস সানায়ে। ঈদুল ফিতরের দু-এক দিন আগে অথবা ঈদের দিন নামাজের জন্য বের হওয়ার আগে তা আদায় করাই উত্তম।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর