ঘূর্ণিঝড় আম্ফান লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছে উপকূলের বেড়িবাঁধগুলো। বাঁধ ভেঙে হু হু করে পানি ঢুকে পড়েছে লোকালয়ে। তলিয়ে গেছে উপকূলীয় এলাকার ফসলি জমি। ভেসে গেছে হাজার হাজার মাছ ও চিংড়ি ঘের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ঝড়ের আঘাতে বরিশাল বিভাগের ছয় জেলার ৫৮টি স্থানের ৬৫০ মিটার বাঁধ পানির তোড়ে সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত এবং আংশিক ক্ষতি হয়েছে ১৬১টি স্থানে। আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধের পরিমাণ ১৬১ কিলোমিটার। নদীর পাড় ভেঙেছে ১০টি স্থানে। এর দৈর্ঘ্য দুই কিলোমিটারেরও বেশি। সাতক্ষীরার চার উপজেলার ২০টিরও বেশি পয়েন্টে নদ-নদীর গ্রাম রক্ষা বেড়িবাঁধ ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। শ্যামনগরের পদ্মপুকুর, গাবুরা ও আশাশুনির প্রতাপনগর ইউনিয়নের কয়েকটি স্পটে কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করছে। কক্সবাজারের কুতুবদিয়া ও মহেশখালীর বিভিন্ন এলাকায় সমুদ্র-তীরবর্তী বেড়িবাঁধ ভেঙে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বাগেরহাটের বেড়িবাঁধ। ঘূর্ণিঝড় আম্ফান দেশের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সবচেয়ে বড় ত্রুটিটি চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। বেড়িবাঁধ নির্মাণ ও মেরামতের ক্ষেত্রে আমাদের দেশে যে যাচ্ছেতাই ধরনের দুর্নীতি ঘটে তারই প্রমাণ মিলেছে উপকূলভাগের বিপুল পরিমাণ বাঁধ ভেঙে যাওয়ার ঘটনায়। ঘূর্ণিঝড় উপদ্রুত এলাকায় ত্রাণ কাজ করতে গিয়ে প্রশাসনের লোকজন যে গণদাবির সম্মুখীন হয়েছে সেটি হলো ‘আমাদের ত্রাণের দরকার নেই। ঠিকমতো বাঁধ বেঁধে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক।’ দেশের উপকূলীয় এবং হাওর এলাকায় বেড়িবাঁধ নির্মাণে শত শত কোটি টাকা ব্যয় হয়। এ অর্থের শতকরা ৭০ ভাগই চুরি এবং অপচয়ের শিকার হয়। আমরা এ কলামে বারবার লিখেছি, বেড়িবাঁধ নির্মাণে এলাকাবাসীকে সম্পৃক্ত করা হোক। সর্বস্তরের লোকজনকে নিয়ে গঠিত হোক গণকমিটি। তাদের দ্বারা বাঁধ নির্মাণ করা হলে এবং স্বেচ্ছাশ্রমের উদ্যোগ নেওয়া হলে মাত্র ২০ শতাংশ খরচে যে মজবুত বাঁধ গড়ে উঠবে, তাতে প্রতি বছর মেরামতের নামে সাংবাৎসরিক লুটপাটের অবকাশ থাকবে না। পানি উন্নয়ন বোর্ডের মধ্যে সক্রিয় আরব্য উপন্যাসের ‘থিপ অব বাগদাদ’ মহোদয়দের সর্বনাশা খাদক আচরণও বন্ধ হবে। দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকায় অপচয় রোধ করা সম্ভব হবে নিশ্চিতভাবে।