শনিবার, ৩০ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

জীবনজুড়ে রমজানের শিক্ষা

যুবায়ের আহমাদ

জীবনজুড়ে রমজানের শিক্ষা

পবিত্র মাহে রমজান বিদায় নিয়েছে এই তো সেদিন। আমাদের খারাপ কাজ ও অভ্যাসগুলো থেকে মুক্ত করে পরিশুদ্ধ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার এক প্রশিক্ষণ কোর্স হিসেবে এসেছিল রমজান। রমজানের সে প্রশিক্ষণ জীবনভর ধরে রেখে সব ধরনের গুনাহের কাজ থেকে নিজেদের বিরত রেখে ভালো কাজগুলো চালু রাখলেই সে প্রশিক্ষণ হবে সার্থক।

রোজার সংজ্ঞায় বলা হয়, ‘পানাহার, সহবাস ও সব ধরনের গুনাহের কাজ ছেড়ে দেওয়াই রোজা’। শুধু পানাহার ত্যাগ করে গুনাহের কাজ না ছাড়লে তা রোজা হয় না। হজরত আবু হুরায়রা (ও থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘কেবল পানাহার বর্জনের নামই সিয়াম নয়; সিয়াম হলো অনর্থক ও অশ্লীল কথা এবং কাজ বর্জন করা।’ বায়হাকি। অর্থাৎ রোজার মাধ্যমে পবিত্র কোরআনে নিষিদ্ধ কাজগুলো ছেড়ে দেওয়ার প্রশিক্ষণ নিতে হয়। রমজানে সাহরি গ্রহণ করে রোজা শুরু করার পর একজন রোজাদারের কাছে মজাদার খাবার নিয়ে এসে যদি কেউ তা গ্রহণ করতে বলে নিশ্চয়ই রোজাদার বলবেন, ‘না, আমি রোজা রেখেছি’। এই ‘না’ শুধু পানাহারকেই নয়, বরং আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক নিষিদ্ধ সব বিষয়কেই বলতে হয়। এটিই রোজার মূল শিক্ষা। অর্থাৎ রোজাদার রোজার মাধ্যমে সব হারাম কাজকে ‘না’ বলার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন।

নিজেকে সব ধরনের মিথ্যা ও পাপাচার থেকে বিরত রাখার প্রশিক্ষণ নেন রোজাদার কোরআনের আলোয় আলোকিত শান্তির সমাজ গড়ার মতো যোগ্য ও তাকওয়াসম্পন্ন (মুত্তাকি) নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রয়াস পান। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি পাপ, মিথ্যা কথা, অন্যায় কাজ ও মূর্খতাসুলভ কাজ ত্যাগ করতে না পারবে তার পানাহার ত্যাগ করাতে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই। সহিহ বুখারি। তাকওয়ার রশি দিয়ে অপরাধের হাত-পা মজবুতভাবে বেঁধে দেয় রোজা। সেই বাঁধন সারা বছরই রাখতে হয়। রমজান শেষে পানাহার চালু হবে বটে কিন্তু অপরাধ থেকে বেঁচে থাকার, সব হারাম ও নিষিদ্ধ কাজকে ‘না’ বলার যে বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা হয়েছিল জীবনভর তা ধরে রাখাই রমজানের সবচেয়ে বড় শিক্ষা। চলে যাওয়া রমজান হতে পারে আমাদের যে কারও জীবনের শেষ রমজান। রমজানে আমরা হারাম কাজ ছেড়ে দেওয়ার যে প্রশিক্ষণ নিয়েছি তা যেন সারা জীবন ধরে রাখি। আর যেন অপরাধে জড়িয়ে না পড়ি। নিজের জন্য চিরতরে বন্ধ করে দিই অপরাধের দরজা।

রমজানে অনেক আমলের মাঝে ব্যস্ত থাকেন মুমিনরা। রমজান বিদায় নিয়েছে বলে আমলগুলোও বন্ধ হয়ে যাবে এটি রমজানের চাওয়া নয়। বরং প্রশিক্ষণ অনুযায়ী জীবনভর সে নেক আমলগুলো চালু রাখা উচিত। রমজানে রোজা রেখেছি। রমজান চলে যাওয়া মানেই আমাদের জীবন থেকে রোজার বিদায় নয়। শাওয়ালের ছয় রোজা, সোমবার-বৃহস্পতিবারের রোজা, আইয়ামে বিজের (প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখের) রোজা, জিলহজের প্রথম ৯ দিনের রোজা, আশুরার রোজাসহ বিভিন্ন প্রকারের নফল রোজা রয়েছে। সে রোজাগুলো রেখে জীবনভর রোজার চর্চা করা প্রতিটি মুমিনের উচিত। রমজানে আমাদের দৈনন্দিন রুটিনে যুক্ত ছিল তারাবি, তাহাজ্জুদসহ বিভিন্ন নফল রোজা। রমজানের পরও ইশরাক, চাশত, দোহা, আওয়াবিন, তাহাজ্জুদসহ বিভিন্ন প্রকারের নফল নামাজ জীবনভরই চর্চা থাকবে। পাশাপাশি দান-সদকাসহ যেসব নেক আমল আমরা চালু করেছিলাম, সেগুলোও জীবনভর ধরে রাখা উচিত। তবেই রমজানের আগমন আমাদের জন্য সাফল্যের কারণ হবে।

লেখক : জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত কারি ও খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ, বোর্ডবাজার, গাজীপুর।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর