বুধবার, ৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

শরিয়তসম্মত জীবনের পথ দেখিয়েছেন চার শুদ্ধচারী ইমাম

মুহাম্মদ ওমর ফারুক

শরিয়তসম্মত জীবনের পথ দেখিয়েছেন  চার শুদ্ধচারী ইমাম

মুসলিম উম্মাহর কোরআন-হাদিস তথা শরিয়তসম্মত জীবনযাপনকে নিশ্চিত করার মহান উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে অনেক মুজতাহিদ ইমামগণ গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন। যাদের মধ্যে চার ইমামের অবদান বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

ইসলামী ফিকহের মধ্যে সবচেয়ে বড় ইমাম হিসেবে গণ্য করা হয় ‘নুমান ইবনে সাবিত’ আবু হানিফা (রহ.)-কে। আবু হানিফা (রহ.) ছিলেন ইরানি বংশোদ্ভূত। হিজরি ৮০ সালে কুফা শহরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। আবু হানিফা তাঁর শিক্ষক হাম্মাদ বিন আবি সুলাইমানকে অনুসরণ করে নতুন একটি ফিকহি মাজহাব প্রতিষ্ঠা করেন। এই মাজহাব পরবর্তীকালে হানাফি মতাদর্শ নামে প্রসিদ্ধ লাভ করে। সমকালীন শাসন ব্যবস্থা বা হুকুমাত হানাফি মাজহাবকে গ্রহণ করার কারণে এবং এই মতাদর্শের অনুসারী বিচারকদের মুসলিম ভূখ-ের বিভিন্ন প্রান্তে প্রেরণ করার কারণে খুব দ্রুত এর প্রসার ঘটে। হানাফি ফিকাহ প্রথম ইরাকে, তারপর মিসরে, মধ্য এশিয়ায়, আনাতোলিয়া বা এশিয়া মাইনরে এবং উপমহাদেশ এমনকি চীনেও বিস্তৃতি লাভ করে। যদিও আবু হানিফা নিজেই তাঁর মতাদর্শের মূল ব্যাখ্যাকার ছিলেন, তারপরও তার ছাত্ররাও এই মতাদর্শ বিস্তারে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিল। অবশেষে ১৫০ হিজরিতে ইমাম আবু হানিফা (রহ.) ইন্তেকাল করেন।

ইসলামের মধ্যে প্রসিদ্ধ দ্বিতীয় ফিকহি মাজহাবের প্রতিষ্ঠাতা হলেন ‘মালেক ইবনে আনাস (রহ.)। তাঁর নামানুসারেই এই ফিকহি মাজহাবটিকে ‘মালেকি ফিকাহ’ বলে অভিহিত করা হয়। মদিনার উত্তরে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। সে সময় মদিনা ছিল ফিকাহ এবং হাদিস চর্চার মূল কেন্দ্র। ওই কেন্দ্রেই তিনি লেখাপড়া শুরু করেন। অল্প সময়ের মধ্যেই তিনি ফিকাহ শাস্ত্রে ব্যাপক ব্যুৎপত্তি অর্জন করেন। মদিনার মসজিদে নববীতে তিনি ছাত্রদের পড়ান এবং প্রয়োজনীয় বিভিন্ন ফতোয়া জারি করেন। মালেকি ফিকাহ প্রথমে হেজাজে বিস্তার লাভ করে। তারপর মিসরে এবং মিসর থেকে উত্তর আফ্রিকা এবং স্পেনে বিস্তৃতি পায়।

আহলে সুন্নাতের তৃতীয় ফিকহি মাজহাবের প্রবক্তা হলেন ‘আবু আবদুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইদ্রিস শাফেয়ি’। শাফেয়ি (রহ.) ১৫০ হিজরিতে গাজায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হানাফি এবং মালেকি-উভয় মাজহাবের সঙ্গেই পরিচিত ছিলেন। এ দুই মাজহাবের ওপর ভিত্তি করে তিনি নতুন আরেকটি মাজহাবের জন্ম দেন। তাঁর মাজহাবটি শাফেয়ি মাজহাব নাম খ্যাতি পায়। তাঁর মাজহাবটি সালাউদ্দিন আইয়্যুবির মাধ্যমে মিসরে প্রচলিত হয়। মক্কা এবং ইরাকেও তাঁর মাজহাবের ব্যাপক অনুসারী গড়ে ওঠে। অবশেষে ইমাম শাফেয়ি (রহ.) ২০৪ হিজরিতে ওফাত বরণ করেন।

ইমাম শাফেয়ি (রহ.)-এর পর ‘ইমাম আহমাদ ইবনে হাম্বল (রহ.)’ আরেকটি মাজহাবের গোড়াপত্তন করেন। তার মাজহাবটি ‘হাম্বলি’ নাম ধারণ করে। ১৬৪ হিজরিতে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইমাম শাফেয়ি (রহ)-এর কাছে ইলম অর্জন করেন। হেজাজ অঞ্চলে তাঁর মাজহাবটি ব্যাপকভাবে বিস্তৃতি পায়। অবশেষে ২৪১ হিজরিতে তিনি ইনন্তেকাল করেন।

মোটকথা, ইসলামে ফিকহ শাস্ত্রের গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ফিকহ ছাড়া ইসলাম অনুযায়ী জীবনযাপন করা এককথায় অসম্ভব। আর এ ফিকহ শাস্ত্রের গঠনে চার ইমামের অবদান অনস্বীকার্য। তাঁদের অবদানেই আমরা বর্তমানে ফিকহশাস্ত্রকেই এত সুবিন্যস্ত ও সহজবোধ্যরূপে পাচ্ছি। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের বোঝার তাওফিক দান করুন এবং আখেরাতে চার ইমামের মর্যাদা বহুগুণে বৃদ্ধি করে দিন। আমিন।

লেখক : ইসলামী গবেষক।

সর্বশেষ খবর