রবিবার, ৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

গজপতি রাজার রাজধানী

পুরী ছিল গজপতি রাজাদের রাজধানী। এটি ছিল পূর্ব ভারতে বৈষ্ণবদের সর্বশেষ প্রধান ঘাঁটি এবং ভাই বলরাম ও বোন সুবলাসহ দারুব্রহ্ম জগন্নাথ দেবের মহান দারুমূর্তির ধাম। নগরে প্রবেশের পরপরই চৈতন্যের কৃতিত্বপূর্ণ কাজ হলো মূলত নবদ্বীপে শিক্ষাপ্রাপ্ত নব্যন্যায় পণ্ডিত প্রখ্যাত বৈদান্তিক বাসুদেব সার্বভৌম ভট্টাচার্যকে বৈষ্ণবধর্মে ধর্মান্তরকরণ। এ সুকীর্তি চৈতন্য ও তাঁর অনুসারী ভক্ত দলের প্রতি সমর্থন নিশ্চিত করেছিল এবং সুস্পষ্টভাবে রাজার মনোযোগ আকর্ষণ করেছিল। এরপরে তাঁর আরও কৃতিত্ব হলো আরেক বড় পণ্ডিত প্রকাশানন্দকে ধর্মান্তরকরণ। একজন সঙ্গীকে নিয়ে চৈতন্য পুরী ত্যাগ করে দক্ষিণে কমরীণ অন্তরীপের শেষ মাথায়, তারপর পশ্চিম উপকূলে এবং মধ্য ও উত্তর ভারতে তীর্থভ্রমণে যান। কলিঙ্গে তিনি সাহচর্য লাভ করেন বিখ্যাত ভক্ত পুরুষ ও রাজমন্ত্রী রামানন্দ রায়ের, যিনি চৈতন্যের মধ্যে শুধু কৃষ্ণ হিসেবে দেবত্ব দেখতে চাননি, বরং চৈতন্যকে মিলনে-বিরহে রাধাকৃষ্ণের একক সত্তারূপে অনুভব করেছিলেন। এ ধর্মতাত্ত্বিক ব্যাখ্যাটিই আজ পর্যন্ত বৈষ্ণব ঐতিহ্যে প্রভাব বিস্তার করে আছে।

অনেক বছর তীর্থযাত্রার ফলরূপে চৈতন্য রঘুনাথ ভট্ট ও গোপাল ভট্টকে ভক্ত হিসেবে গ্রহণ করেন, তাঁদের পাঠিয়ে দেন ব্রজধামে, যেখানে আগেই লোকনাথ ও ভূগর্ভকে পাঠানো হয়েছিল। পুরীতে ফিরে এসে তিনি আবার বৃন্দাবনে যান। পথিমধ্যে দুই অনন্যসাধারণ ভক্ত রূপ ও সনাতনকে দীক্ষা দেন। রূপ ও সনাতন কিছুকাল আগেও বাংলার সুলতান হোসেন শাহের দরবারে কর্মচারী ছিলেন, কিন্তু চৈতন্যের ভক্ত দলে যোগদানের জন্য পালিয়ে আসেন। পরে তারাই চৈতন্যের দীক্ষামন্ত্রকে ব্রজকেন্দ্রিক গোস্বামী কুলের দ্বারা বিকশিত গৌড়ীয় ধর্মতত্ত্বের ভিত্তিতে রূপ দেন। ব্রজধামে থাকাকালে চৈতন্য কৃষ্ণাবতারে ধরাধামে আগমনের বিস্তৃত স্থানগুলো চিনতে পারেন। তীর্থকেন্দ্র হিসেবে ব্রজের পূর্ব গৌরব ফিরিয়ে আনতে এবং মন্দির স্থাপন করে এর পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে তিনি তাঁর অনুসারীদের নির্দেশ দেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর