শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৯ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের করণীয়

এম এ হাসেম

করোনা থেকে রক্ষা পেতে বাংলাদেশের করণীয়

গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চীনের উহান শহর থেকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে মারণঘাতী করোনাভাইরাস। ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র এ ভাইরাস ইতিমধ্যে সৃষ্টি করেছে চরম বিপর্যয়, কেড়ে নিয়েছে কয়েক লাখ মানুষের প্রাণ, স্থবির করে দিয়েছে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক কর্মকান্ড। ইউরোপ-আমেরিকার মতো দেশগুলো যখন এই ভাইরাস মোকাবিলায় কোণঠাসা হয়ে পড়েছে, বিপর্যয় ঘটেছে অর্থনীতির, তখন অত্যন্ত সফলতার সঙ্গে করোনা মোকাবিলা করে চীনই হয়ে উঠেছে বিশ্বের অন্য দেশগুলোর জন্য অনুকরণীয় উদাহরণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও তাই আক্রান্ত দেশগুলোকে চীনের পদক্ষেপগুলো অনুসরণের তাগিদ দিয়েছে। ভাইরাস মোকাবিলায় এই সফলতার পেছনে রয়েছে দেশজুড়ে জরুরি অবস্থা জারি ও উৎসস্থলগুলো পুরোপুরি লকডাউন করে দেওয়া পর্যাপ্ত টেস্ট করানো এবং জরুরি হাসপাতাল তৈরি ও নিরবচ্ছিন্ন স্বাস্থ্যসেবা প্রদান। একটি স্বাধীন দেশে ব্যক্তিস্বাধীনতা খর্ব করার কোনো নিয়ম না থাকলেও, সবার কল্যাণের স্বার্থে ক্ষুদ্র ত্যাগ যে এক সময় বড় সাফল্য নিয়ে আসে, সে নজির রেখেছে চীন। আক্রান্তদের চিকিৎসা এবং দেশজুড়ে মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এই রোগের সংক্রমণ রোধ করতে পারে। আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রেখেই করোনাভাইরাসের মোকাবিলা করতে হবে। আমার এতদিনের অভিজ্ঞতা এবং একজন সাবেক সংসদ সদস্য হিসেবে আমি নিচের পদক্ষেপগুলো করোনা মোকাবিলায় আগামী দিনে করণীয় বলে মনে করি- ক. পর্যাপ্ত করোনা টেস্টের বাস্তবায়ন করা : করোনা প্রতিরোধের প্রথম ধাপ হলো রোগ নির্ণয় করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের আলাদা করে তাদের যথাযথ চিকিৎসা প্রদান করা। আমাদের দেশে এখনো প্রয়োজনের তুলনায় টেস্টের সংখ্যা অনেক কম। টেস্টের সংখ্যা বাড়াতে আমরা চীন থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি ও বেসরকারিভাবে টেস্ট কিট আমদানি ও প্রয়োজনীয় টেকনিক্যাল প্রশিক্ষণ আয়োজনের ব্যবস্থা করতে পারি। খ. চীন-বাংলাদেশ যৌথ করোনা হসপিটাল তৈরি করা : চীনের খুব দ্রুত জিনিসপত্র তৈরির রেকর্ড রয়েছে এমনকি বিভিন্ন ধরনের বিশাল প্রকল্পের ক্ষেত্রেও। বাংলাদেশে ক্রমবর্ধমান করোনা ভাইরাসে আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য উহান শহরে নির্মিত হাসপাতালের আদলে চীন এবং বাংলাদেশর যৌথ উদ্যোগে জরুরি হাসপাতাল তৈরি করতে হবে। গ. করোনা রোধে চীনের তৈরি ভ্যাকসিনের সুবিধা গ্রহণ করা : সম্প্রতি গণমাধ্যম থেকে জানতে পারলাম করোনা রোধে বেইজিংভিত্তিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিনেভা অতি দ্রুত কার্যকরী ভ্যাকসিন তৈরি ও সরবরাহ করবে। আমাদের উচিত হবে, চীনের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বৃদ্ধি করে সবার আগে এই ভ্যাকসিনের সুবিধা গ্রহণ করা।

ঘ. করোনা রোধে চীনের সহযোগিতা গ্রহণ : ইতিমধ্যে ইতালি, ফিলিপাইন, স্পেনসহ বেশ কয়েকটি দেশে বিশেষজ্ঞ দল ও সরঞ্জামসহ ওষুধ সরবরাহ করেছে চীন। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং করোনা রোধে বাংলাদেশকে সব ধরনের সহযোগিতা করার কথা বলেছেন। ইতিমধ্যে করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য মেডিকেল সামগ্রী ও বিশেষজ্ঞ দল পাঠিয়েছে চীন। এখন আমাদের করণীয় হবে চীনের কাছ থেকে এসব সুবিধা গ্রহণ করে করোনা রোধে এগিয়ে যাওয়া।

ঙ. যথাযথ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করা : আমাদের দেশের মানুষ স্বভাবতই কম সচেতন। তাই সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকরণ এবং জনসচেতনতা বাড়ানো-এর পাশাপাশি কঠোর আইন প্রণয়ন এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর শক্ত অবস্থান দরকার।

চ. হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ ও ভেন্টিলেটর সুবিধা বাড়ানো : করোনাভাইরাস মহামারীর মোকাবিলায় হাসপাতালগুলোতে যথেষ্টসংখ্যক ভেন্টিলেটর সুবিধাসহ আইসিইউ বেড বাড়াতে হবে। যেসব রোগীর সংক্রমণ খুবই মারাত্মক তাদের জীবনরক্ষায় ভেন্টিলেটর খুবই কার্যকর একটি যন্ত্র। আশার কথা হলো আমাদের দেশে কয়েকটি কোম্পানি ভেন্টিলেটর উৎপাদন শুরু করেছে। তবে আমি মনে করি এখনই জরুরিভিত্তিতে চীন থেকে দুই-আড়াই হাজার মানসম্মত ভেন্টিলেটর আমদানি করে করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত হাসপাতালগুলোতে দেওয়া যেতে পারে।

ছ. ওষুধশিল্পে কর মওকুফ : উপরের আলোচনার ধারাবাহিকতায় আমি বাংলাদেশ সরকারকে স্থানীয় ওষুধ কোম্পানিগুলোকে করোনার প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন তৈরিতে সব ধরনের কর মওকুফের মাধ্যমে অনুপ্রাণিত করতে আহ্বান জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে উৎপাদন এবং উৎপাদন-পরবর্তী সরকারের কঠোর নজরদারির আহ্বান জানাচ্ছি যাতে শুধু যে সব হাসপাতাল করোনা সেবা প্রদানে নিয়োজিত, সেসব হাসপাতালে এসব প্রতিষেধক ও ভ্যাকসিন সরবরাহ করা হয়।

পরিশেষে বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আমি ধন্যবাদ জানাব তার গতিশীল নেতৃত্বের জন্য। প্রধানমন্ত্রী দিন-রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে করোনা মোকাবিলায় বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ ও সঠিক দিক-নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের  মতোই প্রধানমন্ত্রী মানবকল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন এবং আগামী দিনেও রাখবেন এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।

                লেখক :  সাবেক সংসদ সদস্য।

সর্বশেষ খবর