শনিবার, ১৩ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

বাজেটের সুফল পৌঁছে যাক প্রতি মানুষে

শাইখ সিরাজ

বাজেটের সুফল পৌঁছে যাক প্রতি মানুষে

পৃথিবীতে এমন দুঃসময় আর হয় না। একদিকে মহামারী আর অন্যদিকে লকডাউন। দীর্ঘদিন হয় মানুষকে মৃত্যু, রোগ-শোক আর ক্ষুধার এমন করুণ মুখোমুখি অবস্থানে পড়তে হয়নি। সারা বিশ্বেই চর্চা হয়ে আসছিল পারস্পরিক নির্ভরশীলতার। কিন্তু এমন দুর্যোগ মুহূর্তে আত্মনির্ভরশীলতার

 প্রযোজনীয়তাটিই আগে উপলব্ধি হয়েছে। আর স্বাস্থ্য খাতের পাশাপাশি কৃষির গুরুত্বটুকুও উপলব্ধি করতে পারছে প্রতিটি রাষ্ট্র। তাই প্রতিটি রাষ্ট্রই কৃষি খাতকে গুরুত্ব দিচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এ দুর্যোগকাল শুরুর মুহূর্ত থেকেই কৃষির প্রতি জোর দিয়ে আসছেন। তারই প্রতিফলন পাওয়া গেছে এবারের জাতীয় বাজেটে। বাজেটের আকার পাঁচ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকার। এর মধ্যে করোনা পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার বিবেচনা করা হয়েছে স্বাস্থ্য ও কৃষি খাতকে। বাজেট ঘোষণা থেকে কৃষির অংশটুকু আলাদা করে নিলে যা দাঁড়ায়, তা হলো: কৃষি মৎস্য প্রাণিসম্পদ ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা। এ পরিমাণ গত অর্থবছরের তুলনায় এক হাজার পাঁচ কোটি টাকা বেশি। মন্ত্রণালয় বিবেচনায় শুধু কৃষি মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ ১৫ হাজার ৪৪২ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় দুই হাজার ৪৮৫ কোটি টাকা বেশি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে এবারের বরাদ্দ তিন হাজার ১৯৩ কোটি টাকা, যা চলতি অর্থবছরের তুলনায় ৬৫৬ কোটি টাকা বেশি। কৃষি মৎস্য প্রাণিসম্পদ ও খাদ্য নিরাপত্তা খাতে ২২ হাজার ৪৮৯ কোটি টাকা বরাদ্দ প্রস্তাব করা হয়েছে। গত অর্থবছরে ছিল ২১ হাজার ৪৮৪ কোটি টাকা। কৃষিখামার যান্ত্রিকীকরণে তিন হাজার ১৯৮ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরে কৃষি ভর্তুকি নয় হাজার ৫০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে কৃষি পুনঃঅর্থায়ন স্কিমে পাঁচ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। আগামী অর্থবছরেও রাসায়নিক সারের মূল্য অপরিবর্তিত রাখা হবে ও কৃষি প্রণোদনা অব্যাহত থাকবে। মাননীয় অর্থমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই এবারের বাজেটে কয়েকটি দিকে বিশেষ দৃষ্টি দেওয়ার জন্য। বিশেষ করে যে খাতগুলোতে আমরা হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানের পক্ষ থেকে সরকারের কাছে সুপারিশমালা প্রদান করেছিলাম। করোনা পরিস্থিতিতে বেকার হয়ে যাওয়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক, বিদেশ ফেরত প্রবাসী শ্রমিক, প্রশিক্ষিত তরুণ ও বেকার যুবদের কৃষিতে কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিতে বিশেষ প্রকল্প ও বরাদ্দ রাখা হয়েছে। কৃষি অকৃষিপণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য ১৯৫টি গ্রোথ সেন্টার ও হাটবাজার গড়ে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জাতীয় বাজেটে বরাবরই কৃষি ও এর উপ-খাতগুলোর সঙ্গে সঙ্গেই থাকে পানি সম্পদবিষয়ক বাজেট। এবার পানিসম্পদ খাতে বরাদ্দ রয়েছে আট হাজার ৮৯ কোটি টাকা। এ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দের পরিমাণ চলতি অর্থবছরের তুলনায় কিছুটা কমেছে। চলতি অর্থবছরে এ খাতে বরাদ্দ ছিল ৮ হাজার ৭৭০ কোটি টাকা। পিয়াজ আমদানিতে শুল্কারোপ পিয়াজ চাষিদের দীর্ঘদিনের দাবি। এতে পিয়াজ চাষিরা লাভবান হবে আশা করি।

বাজেটের বরাদ্দ ও ভর্তুকি প্রতিটি প্রান্তিক কৃষকের কাছে পৌঁছালে এর সুফল আমরা পাবই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, এ সময়টা আমাদের কৃচ্ছ্রতা সাধনের সময়। তাই আমাদের উচিত হবে কোনোভাবেই যেন অপচয় না হয় সেদিকটিতে বিশেষ নজর রাখা। অপচয় রোধ করতে হলে সুপরিকল্পনা প্রয়োজন। আমরা কি জানি আমাদের প্রতি বছর কী পরিমাণ গম প্রয়োজন, কী পরিমাণ সবজি প্রয়োজন, কী পরিমাণ মাংস, ডাল বা মাছ প্রয়োজন? এটা বের করা খুব কঠিন কাজ নয়। সরকারের খাদ্য বিভাগের কাছে এ হিসাব আছে। আমাদের উচিত হবে সারা দেশটাকে কৃষিপণ্যের উৎপাদনের খাত হিসেবে ভাগ করে নিয়ে একটা টার্গেট ফিক্সড করে নেওয়া। কোন অঞ্চলের কৃষক কী ধরনের ফসল কী পরিমাণ উৎপাদন করবে সেটাও যদি নিশ্চিত করে, কৃষকদের সেভাবে তৈরি করা যায় তবে উৎপাদন যেমন বাড়বে, বাজারে ফসলের ভারসাম্যও ঠিক থাকবে। কৃষি অর্থনীতিবিদরা বলে আসছেন, কৃষি উন্নয়নে সমবায়ভিত্তিক কৃষির গুরুত্বের কথা। আমরাও বিভিন্ন দেশের কৃষি সাফল্যে এ বিষয়টি দেখে এসেছি। ঠিক এ সময়ে এসে যেখানে প্রচুর মানুষ কর্মহীন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। তখন সরকারের যে খাস জমিগুলো আছে তাতে সরকারি ব্যবস্থাপনায় সমবায় ভিত্তিতে কোনো কৃষিখামার করা যায় কিনা সেটা ভেবে দেখা যেতে পারে।

মহাজনের হাত থেকে কৃষককে রক্ষা করতে হবে। কৃষি ঋণের যে দুষ্টচক্রে কৃষক আটকে আছে তা থেকে কৃষককে বের করে আনতে কৃষকের সহজ শর্তে ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। যেহেতু আমাদের কৃষির লক্ষ্য শুধু অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোই নয়, আন্তর্জাতিক খাদ্যের বাজারে প্রবেশ করা, তাই কৃষিপণ্যের উৎপাদন, সংরক্ষণ ও বিপণনের আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখার বিষয়টিতে কৃষককে সচেতন করে তুলতে হবে। পাশাপাশি সরকারি ব্যবস্থাপনায় কৃষিপণ্য সংরক্ষণ ও বাজারজাতকরণের শিল্প গড়ে তোলা যায় কিনা তারও ভাবনা-চিন্তার অবকাশ আছে। বাজেটে পিয়াজ আমদানির সিদ্ধান্তটি প্রশংসনীয়। তবে বাজার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে হয়তো সরকারই বাধ্য হবে এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে। যেমন পিয়াজের বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে আমদানি শুল্কের পরিমাণ কমাতে বাধ্য করবে। তাই উৎপাদন থেকে বাজারজাতকরণ পর্যন্ত সরকারের সতর্ক মনিটরিংয়ের প্রয়োজন আছে। কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার দীর্ঘদিনের দাবির প্রতিফলন বাজেটে তেমনভাবে স্পষ্ট হয়নি। সরকার নিজেই কৃষকের কাছ থেকে কৃষিপণ্য কেনার একটা সিস্টেম দাঁড় করাতে পারলে কৃষকের ন্যায্যমূল্য পাওয়ার বিষয়টি সহজ হতো। দেশে যে পরিমাণ হাসপাতাল, জেলখানা, আবাসিক প্রতিষ্ঠান আছে সেসব প্রতিষ্ঠানে খাদ্যে সাপ্লাইয়ের প্রয়োজনে প্রচুর পরিমাণ কৃষিপণ্য মধ্যস্বত্বভোগীদের মাধ্যমে কেনা হয়। সেটা যদি সরকার কোনো প্রক্রিয়ায় সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে কিনতে পারত তবে কৃষক বেশি লাভবান হতে পারত।

মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপের প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। অর্থমন্ত্রী বাজেট বক্তৃতায় বলেছেন, ‘মৎস্য, পোল্ট্রি ও ডেইরি খাতের টেকসই উন্নয়ন ও বিকাশের লক্ষ্যে উক্ত খাতের খাদ্যসামগ্রী ও নানাবিধ উপকরণ আমদানিতে বিগত সময়ে প্রদত্ত রেয়াতি সুবিধা অব্যাহত রেখে নতুন দুটি উপকরণ সয়াবিন অয়েল কেক (Soyabean oil cake) ও সয়া প্রোটিন কনসেনট্রেট (Soya protein concentrate)-কে রেয়াতি সুবিধার অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব করছি। এর ফলে, পোল্ট্রি খাদ্যসামগ্রী কাঁচামালের আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে। এছাড়া, পোল্ট্রি খাতের প্রতিরক্ষণে প্রক্রিয়াজাত মুরগির অংশ বিশেষ (chicken in cut piece form) আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক হার বৃদ্ধির প্রস্তাব করছি।’ তার এ প্রস্তাবনা সময়োপযোগী ও পোল্ট্রি খামারিদের মাঝে আশার সঞ্চার করবে। তবে ক্ষুদ্র পোল্ট্রি খামারিদের রক্ষা করতে বড় পোল্ট্রি খামারি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

বাজেটে অ্যাগ্রো ইন্স্যুরেন্স বা কৃষিবীমার বিষয়টি স্পষ্ট হতে পারত কৃষির উপ-খাত গবাদিপশু লালন-পালন বা উচ্চমূল্যের ফল-ফসলের আবাদ যেমন, ড্রাগন ফ্রুটস, চাইনিজ সবজি ইত্যাদি যারা চাষ করেন, তারা বড় ধরনের টাকা বিনিয়োগ করেন। তাদের কৃষিবীমার অন্তর্ভুক্ত করা গেলে এ ধরনের কৃষিক্ষেত্র আরও প্রসার লাভ করত। কৃষি যান্ত্রিকীকরণের ক্ষেত্রে এবারের বাজেটে গৃহীত সিদ্ধান্ত অত্যন্ত সময়োপযোগী। দেশীয় কৃষিযন্ত্র উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রণোদনা বা উৎসাহ প্রদান করে এ শিল্পকে প্রতিষ্ঠা করা গেলে কৃষক যেমন উপকার পাবে, রাষ্ট্রেরও ব্যয় কমে আসবে। তবে কৃষি যান্ত্রিকীকরণের পাশাপাশি কৃষি প্রযুক্তির উন্নয়ন ও ব্যবহার বাড়াতে হবে। যেমন ইন্টারনেট অব থিংস- আইওটি, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন প্রযুক্তিগুলোতে উন্নত দেশগুলো যতটা এগিয়েছে আমরা সেপথে এক কদমও এগুতে পারিনি। প্রযুক্তির কৃষিতে উৎপাদন যেমন, বাড়বে তরুণদের অংশগ্রহণও। তরুণদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণ ছাড়া পরিবর্তন প্রত্যাশা করা যায় না। বাজেটে এ বিষয়গুলো সম্পর্কে স্পষ্ট দিক-নির্দেশনার উপস্থিতি প্রত্যাশা করেছিলাম।  

ব্লু-ইকোনমির অমিত সম্ভাবনার কথা বলে আসছি প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় ধরে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর চীনের ওশান ইউনিভার্সিটিতে ব্লু-ইকোনমি নিয়ে যে বিশাল গবেষণা ও কর্মযজ্ঞ চলছে তা তুলে ধরেছি হৃদয়ে মাটি ও মানুষ অনুষ্ঠানে। এ বছরের কৃষি বাজেট কৃষকের বাজেট সুপারিশমালায়ও এর অন্তর্ভুক্তি ছিল। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশের নিয়ন্ত্রিত এক লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার এলাকাজুড়ে হতে পারে অর্থনীতির এক বিশাল ক্ষেত্র। এবারের বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী সমুদ্র সম্পদের সম্ভাবনাময় খাত নিয়ে কথা বলেছেন। সুস্পষ্ট বক্তব্য তুলে ধরেছেন। তিনি জানিয়েছেন, রূপকল্প ২০৪১তে বঙ্গোপসাগরের সম্পদ অনুসন্ধান, আহরণ এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। গভীর সমুদ্রে মৎস্য ও অন্যান্য সম্পদের তথ্য সংগ্রহে আধুনিক জরিপ পরিচালনা করা হচ্ছে। বেসরকারি খাতেও গভীর সমুদ্রে মৎস্য আহরণের সক্ষমতা তৈরির জন্য সরকার পৃষ্ঠপোষকতা করবে। ফলে আশা করি এ খাতে বেসরকারি উদ্যোক্তা যেমন তৈরি হবে, বাড়বে কর্মসংস্থানের সুযোগ। 

করোনার এ মহামারীতে নিশ্চয়ই আমরা বুঝতে পেরেছি, কৃষিই এ দেশের অর্থনীতির রক্ষাকবচ। আমাদের দেশের মানুষের ভাগ্য বদল হতে পারে কেবল কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে। টেকসই অর্থনীতি গড়তে হলে কৃষিনির্ভর অর্থনীতির বিকল্প নেই। এ কথা অনুধাবন করেই বোধ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিপ্লবের ডাক দিয়েছিলেন। কেননা তিনি ১৯৫২ সালে প্রথমবারের মতো চীন দেখে এসে লিখছিলেন, “কৃষক যে জিনিস উৎপাদন করে তার দাম (চীনে) আমাদের দেশের মতো কম হতে পারে না। আমাদের দেশে যখন ধান পাট চাষির ঘরে থাকে, তখন দাম অল্প হয়। যখন মহাজনদের ঘরে থাকে তখন দাম বাড়তে থাকে। চাষি উৎপাদন খরচও পায় না। আর অন্যান্য জিনিস যা কৃষকের কিনতে হয়, যেমন নুন, তেল, কাপড়, এগুলোর দাম এত বেশি থাকে আমাদের দেশে, যে কৃষক যা উৎপাদন করে তা দিয়ে তাদের সংসার চলে না। কিন্তু নয়াচীনে একটা সামঞ্জস্য বিধান করেছে, কৃষক যা বিক্রি করে তার দাম দিয়ে ভালোভাবে অল্প দামে তেল, নুন, কাপড় কিনতে পারে। এতে তাদের ফসলের দাম দিয়েই সংসার চালানো সহজ হয়েছে। গরিবদের পাঁচ টাকায় এক মণ পাট বিক্রি করে চার টাকায় এক সের ডাল তেল কিনতে হয় না তাদের দেশে। প্রত্যেক এলাকায় সরকারি দোকান আছে সেখানে সস্তায় সমস্ত জিনিস পাওয়া যায়। কোনো দোকানদার ইচ্ছে করলেই বেশি দাম নিতে পারে না। কারণ যদি লোকে জানতে পায় যে কোনো দোকানদার বেশি দাম নিচ্ছে তখন তারা সরকারি কর্মচারীদের খবর দিয়ে নিজেরাই ধরাইয়া দেয় এবং মিটিং করে ঠিক করে ঐ দোকানদারের দোকানে কেউই জিনিসপত্র কিনতে পারবে না। এতে চাষিদের যথেষ্ট উপকার হয়েছে। দেশের ভিতর গণজাগরণ এসেছে বলে এটা সম্ভবপর হয়েছে।” (আমার দেখা নয়াচীন।। শেখ মুজিবুর রহমান)।

আমরা প্রতি বছরই দেখে আসছি, যারা খাদ্য উৎপাদন করে তারা ঠিকমতো খেতে পারে না। প্রতি বছর সরকার বাজেট বাড়াচ্ছে, সরকার বলছে এবারের বাজেট মানুষ বাঁচানোর বাজেট, কিন্তু বাজেটের সুফল প্রান্তিক মানুষ পর্যন্ত কি পৌঁছাচ্ছে? সম্প্রতি একটি স্পেনিশ সিনেমা দেখার সুযোগ হয়েছিল। সিনেমার নাম দ্য প্লাটফর্ম। নির্মাতা গালদার গেজেতেলু-উরুতিয়া। সিনেমায় দেখানো হয়েছে বিশাল এক ভার্টিক্যাল সেলফ-ম্যানেজমেন্ট সেন্টার বা কয়েদখানা। প্রত্যেকটা ফ্লোরে একটা করে ছোট রুমে থাকে যেখানে দুজন করে কয়েদি। প্রত্যেকটা রুমের মাঝখান বরাবর বিশাল এক আয়তাকার গর্ত, যা পুরো ভবনটির উপর থেকে নিচ পর্যন্ত চলে গেছে। সেই গর্ত হয়ে উপরে থেকে লিফটের মতো একটা পাটাতনে করে প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাদ্য নামে। খাদ্যে ভরা পাটাতনটি প্রতিটি প্লাটফর্মে দুই মিনিট করে থামে। সব কয়েদির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যই সরবরাহ করা হয়। কিন্তু সিস্টেমটা এমন যে উপরের লেভেলের কয়েদিরা প্রথমে খাওয়ার সুযোগ পায়। তারপর পরের লেভেল, তাদের পরে আরও নিচের লেভেল, এভাবে দুই মিনিট থেমে থেমে খাদ্য নিয়ে পাটাতন নামতে থাকে। সমস্যা হচ্ছে, উপরের লেভেলগুলাতে যারা থাকে তারা প্রয়োজনের চেয়ে বেশি খায় এবং খাবার নষ্টও করে। ফলে নিচের লেভেল কয়েদিরা খাবার পায় না। উপরের লেভেলে খাদ্যপ্রাপ্তির ফলে, যেমন আভিজাত্য ভাব থাকে নিচের লেভেলগুলোতে খাদ্যাভাবের কারণে থাকে সহিংসতা। সিনেমাটা মূলত আমাদের সমাজ বা রাষ্ট্র ব্যবস্থার কাঠামোটাকে ইঙ্গিত করে। সুষম বণ্টনের অভাবেই প্রচুর খাদ্য থাকার পরও খাদ্যাভাব দেখা দেয়। প্রতি বছর বাজেটে বিভিন্ন খাতে বরাদ্দ দেওয়া হয়, ভর্তুকি দেওয়া হয়। কিন্তু সেগুলোর ফল আর প্রান্তিক সাধারণ মানুষ পর্যন্ত পৌঁছায় না। তবে আশা করছি এ দুর্যোগকালীন সরকার বাজেট বরাদ্দের সুফল প্রতিটি মানুষ পর্যন্ত পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে যত্নবান হবে।

লেখক : মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।  

[email protected]

সর্বশেষ খবর