বুধবার, ২৪ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করুন

পীর হাবিবুর রহমান

ব্যর্থ স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বরখাস্ত করুন

করোনার ভয়াবহ থাবায় এখন আক্রান্ত প্রিয় স্বদেশ। জীবন-মরণের লড়াই, জীবিকা ও অর্থনীতির বিপর্যয়ে লাশের মিছিল ক্রমে দীর্ঘ হচ্ছে। আক্রান্তের হিসাব বেড়েই চলেছে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী যা-ই বলুন মানুষ কান দিচ্ছে না। ভয়-আতঙ্ক-অসহায়ত্ব গ্রাস করেছে দেশের মানুষকে। যারা অসচেতন, বেপরোয়া তাদের কথা আলাদা। করোনার পরীক্ষা ও ল্যাব ব্যাপক বাড়ানো হলে, দ্রুত রিপোর্ট এলে, আক্রান্তের মিছিল ভয়াবহ রূপ নিত। আমরা পরীক্ষা থেকে চিকিৎসাÑ দুটিতেই অনেক পিছিয়ে। করোনা জয় করে যারা ফিরছেন তারা কাহিল। বেশির ভাগ মানুষ ঘরেই চিকিৎসা নিচ্ছেন। যারা জ্বর, মাথাব্যথা, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্টের মতো উপসর্গের শুরুতেই চিকিৎসকের পরামর্শ নিচ্ছেন, টেস্ট করাচ্ছেন তারা অনেকেই বেঁচে গেছেন। ঘরেই আইসোলেশনে চিকিৎসায় ভালো হচ্ছেন। যাদের হাসপাতালে যেতে হচ্ছে তাদের বড় দুর্দিন।

এখনো সাধারণ মানুষের জন্য করোনার চিকিৎসা সোনার হরিণ। করোনার প্রলয়ে সব চিকিৎসাই এলোমেলো। কার্যত দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা যে ভেঙে পড়েছিল তা ঘুরে দাঁড়াতেই পারেনি। স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্বের এবার দক্ষতার ক্যারিশমা দেখানোর চ্যালেঞ্জ নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নেতৃত্ব শুরু থেকেই ব্যর্থতার কলঙ্ক নিয়ে সমালোচনার তীরে ক্ষতবিক্ষত হয়ে মুখ থুবড়ে পড়েছে। সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালের সমন্বয়ে করোনার বিরুদ্ধে লড়াই করার শক্তিশালী প্রস্তুতি এখনো গড়ে তুলতে পারেনি। পারেনি অনিয়ম-দুর্নীতি রুখতে। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকসহ ঊর্ধ্বতনরা যখন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা নেন করোনার, মন্ত্রীরা যখন বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি হন, তখন নিশ্চিত হওয়া যায় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা বলে কিছু নেই।

সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে তো সবার যাওয়ার সুযোগ নেই। ব্যয়বহুল হলেও এভার কেয়ার, স্কয়ারে উন্নত চিকিৎসা মিলছে। নারায়ণগঞ্জের করোনা বীর কাউন্সিলর খোরশেদকে শামীম ওসমান ভর্তি করালেও বিলের হিসাব দেখে ছয় দিনে চলে গেছে। তাও সেখানে কজনের চিকিৎসা নেওয়ার ক্ষমতা। জীবনের মায়ায় কেউ ঋণ করবে, ঘটিবাটি বেচবে, কেউ নিঃস্ব হবে। তবু চিকিৎসা করাবে। জীবন সবার আগে।

রবিবার ভোর ৬টায় ঘুমালেও আমার মেয়ে চন্দ্রস্মিতা সকাল ৯টায় ঘুম থেকে তুলে ফেলে। তার মায়ের জন্য অস্থিরতা। তাকে বলি, মা, তোর মাকে দেশের সর্বোত্তম চিকিৎসা দিতে আমি কৃপণতা করব না। ছেলেকে বলি, মন খারাপ করবে না একদম। সে নির্ঘুম। মায়ের জন্য কাঁদে। করোনা আক্রান্ত হলে ল্যাবএইডের ডা. আবু শামিম তাকে ভর্তি করান। তার শ্বাসকষ্ট, অক্সিজেন কমে নামে আশিতে। বৃহস্পতিবার থেকে কষ্ট। শুক্রবার ভর্তি। অক্সিজেন শুরু হয়। তাদের আইসিইউ তৈরি হয়নি। শনিবার রাতে ডাক্তাররা বলেন কোথাও আইসিইউ জোগাড় করতে হবে। অক্সিজেন ওঠানামা করছে। ভালো নয়। কি দুঃসহ রাত নামে!

যারা বড় হন এমনি এমনি বড় হন না, বড়র মতোন অনেককে দেখায় কিন্তু প্রকৃত বড় হতে যোগ্যতা ও শক্তি লাগে। মনটা লাগে শরীরের চেয়েও অনেক বড়। অনেক বেশি দরদ লাগে। পরোপকারী মহৎ হৃদয় লাগে। অনেকে বলে আসছেন, আমার আবেগ আমার শত্রু, আমার মাথা নির্ভর নয়, হৃদয় নির্ভর জীবন ভুল। জবাবে আমি বলতাম সেটাই আমার শক্তি। ভুল হোক আর শত্রু হোক। আমার হৃদয়নির্ভর আবেগের শক্তি বিফলে যায়নি। আমাদের রাজনীতির ইতিহাসের নায়ক তোফায়েল আহমেদ আমার সন্তানদের করোনা আক্রান্ত মায়ের জন্য গভীর রাত পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেন উন্নত চিকিৎসার আইসিইউ জোগাড় করতে। এমপি ডা. হাবিবে মিল্লাতকেও তিনি বলেন। রাতে কোথাও আইসিইউ জোটেনি। তবু হাল ছাড়েননি। ঘুমাননি পর্যন্ত। আমি তাকে বলি, আপনি টাকার কথা ভাববেন না, আমার সন্তানদের মনে কোনো আক্ষেপ আমি দেব না। রাতটি ছিল দুঃস্বপ্নের মতোন। ভয়ঙ্কর অনিশ্চয়তার। কিন্তু মানবিক হৃদয়ে তিনি বুঝিয়ে দিলেন এটাই তোফায়েল আহমেদ। যারা বলেন কেন তার কথা এত বলি? সেটিও হৃদয় থেকে আসে। আমার ছোট ভাই মিসবাহও কার্ডিওলজিস্ট সার্জন এমপি মিল্লাতকে বলে। সোনার হরিণ আইসিইউ! এদিকে রাত গভীরে প্রখ্যাত মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ গ্রিনলাইফে আইসিইউ জোগাড় করে সাময়িক নিয়ে আসেন। রাত আড়াইটা পর্যন্ত তিনি জেগে থাকেন। মনিটর করেন। মানুষের চিকিৎসকই নন, এরাই মানবতাবাদী। সকালে অধ্যাপক প্রাণগোপাল দত্তও আরেক মানবতাবাদী চিকিৎসক কল করেন।

পরদিন রবিবার সকালে ঘুম থেকে উঠেই তোফায়েল ভাই ‘এভার কেয়ার’ যেটি আগে এ্যাপোলো হসপিটাল ছিল সেটিতে আইসিইউ বেড জোগাড় করেন। হাবিবে মিল্লাত মুন্নাও স্কয়ারে আইসিইউ বেড ঠিক করেন। মিল্লাত আমার জন্য এতটা করেছেন ভাবলেই আমি বিস্মিত হই। ভালো মানুষ এখনো আছে বলে মানুষ বুকভরে শ্বাস নেয়।

সবার পরামর্শে শেষ পর্যন্ত ডায়নাকে বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার এভার কেয়ারেই ভর্তি করা হয়। এখন তিনি উন্নত চিকিৎসা পাচ্ছেন। এই যে সহযোগিতা, এই যে বিপদের ঋণ, এটা কখনো শোধ হয় না। আজন্ম বুকের গভীরে থাকে কৃতজ্ঞচিত্তে। অর্থ ক্ষমতায় আমাকে বাঁধা যায় না, ভালোবাসায়ই আটকে রাখা যায়।

তোফায়েল আহমেদ আমার ছেলেমেয়েকেও কল করে সান্ত্বনা দেন। মাঝে মাঝে মনে হয় আমার জীবন তো প্রায় শেষই। জীবনের স্বপ্ন চাওয়া-পাওয়াও শেষ। সন্তানদের প্রতি আমি কষ্ট ও সংগ্রামের জীবনে কখনো দায়িত্ব পালনে কৃপণ ছিলাম না। এমনকি যে কোনো প্রিয়জন স্বজন অচেনা মানুষের বিপদেও হৃদয় দিয়েই দাঁড়িয়েছি। জীবনে দুঃসময়ে প্রকৃত বন্ধু চেনা যায়। বসুন্ধরার এমডি সায়েম সোবহান আনভীর আমাকে বলেছেন, ‘চিন্তা করবেন না সঙ্গে আছি’। বন্ধু নঈম নিজাম তো হৃদয় দিয়েই দফায় দফায় কথা বলছেন। করোনা আক্রান্ত ছোট ভাই শাবান মাহমুদসহ অগ্রজ-অনুজ সাংবাদিকরা খবর নিচ্ছেন। বন্ধু ডা. ফারহানা নীলা, ভাবি ডা. জাহানারা আরজু মানসিক শক্তি জুগিয়েছেন। ভিন্ন হাসপাতালে থেকেও মনিটর করছেন।

আমার দেশ-বিদেশের বন্ধুরা, ডায়নার বন্ধুরা কি যে দরদের টানে খোঁজ নিচ্ছেন, দোয়া করছেন। আমার পৃথিবীজুড়ে আপনজনদের কি উদ্বেগ! আমার সারা দেশের স্বজন-ভক্তরা কি গভীর মমতায় খবর নিচ্ছেন। সুনামগঞ্জের মানুষের ভালোবাসা! কোরআন খতম, দোয়া-দরুদ চলে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রছাত্রী অগ্রজ-অনুজ। দেশের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী! আমি কখনো ভুলতে পারি? কতজনের নাম বলব? সবটাই তো আমার অন্তরে জমা হয়েছে।

আমি সবার ফোন মেসেজের জবাব দিতেও পারিনি কেবল বলছি, দোয়া করবেন। আমি অকৃতজ্ঞ নই। অর্থবিত্তহীন হলেও আমারও দরদে মহব্বতে ভরা হৃদয়। সবার ঋণ সেখানেই লেখা থাক। আমি মানুষের জন্যই ছিলাম। আছি। অনেকে বলছেন যাদের তোফায়েল, মিল্লাত নেই তারা কই যাবেন? তারা সবার জন্যই করেন। আইসিইউ উন্নত চিকিৎসা সেবারই তো আকাল!

দেশে সৎ দক্ষ নেতৃত্বের এমন আকাল যে স্বাস্থ্য বিভাগের নেতৃত্ব যতই ব্যর্থ অথর্ব বা দুর্নীতিগ্রস্ত হোক তাদের সরানো যাবে না। চীনা চিকিৎসক বিশেষজ্ঞ দল যা বলে গেছেন তা সুখকর নয়। তারা কি বলবেন দেশের সবাই এখন নিয়ত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন। আমাদের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পদত্যাগ করবেন না। পদত্যাগ করার নীতিবোধ, সততা ও ব্যক্তিত্ব এ দেশের রাজনীতিতে জহির উদ্দিন খানের পর আর কারও মধ্যে দেখা যায়নি। মন্ত্রিত্বে পদবিতে এখন মধু মেলে। প্রধানমন্ত্রীকেই এই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পদত্যাগ করাতে হবে, নয় বরখাস্ত করতে হবে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের যেসব দুর্নীতিবাজ অথর্ব আছে তাদের একটা অংশকে না সরালে চিকিৎসাসেবায় পরিবর্তন আসবে না। সরকারের ৪৩ মন্ত্রী নিজেদের এলাকায় দ্রুত আইসিইউ প্রতিষ্ঠার কোনো সক্রিয় উদ্যোগ নেন না কেন?

সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব হাসপাতালই আসলে করোনাকালে গা বাঁচিয়ে চলছে। রোগী ভর্তিতে বড় অনীহা। সরকারি হাসপাতালে ভর্তি হলেও ডাক্তার-নার্সের দর্শন কম। মূলত ওয়ার্ডবয়রাই দিনে দু-একবার দেখেন। বেসরকারি হাসপাতালের অধিকাংশেই সেবা নেই, আছে বাণিজ্য। আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালে ৩০ মিনিটের অক্সিজেন বিল ৮৬ হাজার টাকা! এ কোন মগের মুল্লুক? চিকিৎসাসেবার মনিটরিং নেই, বেসরকারি হাসপাতালে কোনটার চার্জ কী হবে সরকার এ দুর্যোগে নির্ধারণ করে তদারকি বাড়ায় না কেন? ওষুধের দাম সরকার কেন নির্ধারণ করবে না? এ দুঃসময়ে অসহায় মানুষ চিকিৎসায় নিঃস্ব হবে? মানুষেরও সহ্যক্ষমতা বলে একটা সীমা আছে। সবার বাড়িতে বা পকেটে লুটের ভাগ যায় না।

বেসরকারি হাসপাতালে সাধারণ রোগের ক্ষেত্রে কভিড সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তির কোনো উপায় নেই। সেটা যত জরুরিই হোক। জরুরি সিজারের রোগীও করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট ছাড়া ভর্তি নেয় না। চিকিৎসক স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদেরও মৃত্যুর পরিমাণ কম নয়। তাদের ভয় দূর করা যায়নি। তাদের নিরাপত্তা বীমা নিশ্চিত হয়নি। সরকারের স্বাস্থ্য বিভাগ দুর্নীতিতে যত দুর্নাম কুড়িয়েছে সেখানে করোনার দুর্যোগ মোকাবিলা, দক্ষতা-সফলতা-সুনামের লক্ষণ নেই। নকল মাস্ক এন৯৫ কেলেঙ্কারি ধরা হয় না, ভুল বলে ধামাচাপা। রাজ্জাকের জেএমআই ধরাছোঁয়ার বাইরে। স্বাস্থ্য খাতের লুটপাটের এক দশকের মাফিয়া ডন মিঠু সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেই। পুরনো লুটেরা ধরা যায় না নতুন লুটেরাদের বাজারে আধিপত্য বিস্তারের লড়াই চলছে জালিয়াতি করে লুটবার। নির্মাণ ঠিকাদারও মাস্ক জালিয়াতিতে ধরা পড়ে! মাস্ক কেলেঙ্কারিতে নব্যরা ধরা পড়ছে। পুরনোরা কালো তালিকাভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু কার্যত স্বাস্থ্য খাতের লুটপাটের পৃষ্ঠপোষক বা ঊর্ধ্বতনদের ধরার কোনো আলামতই নেই। কাদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে এত বড় দাগের লুট চলছে বছরের পর বছর? লুটপাটের বাজারে ছাগল দৃশ্যমান, খুঁটিই কেবল অদৃশ্যে। সংবিধান-আইন সবার জন্য সমান না হলে, দুর্নীতি দমন কমিশন স্বাধীন-শক্তিশালী না হলে দুর্নীতিবাজরা আরও বেপরোয়া হবে। সিস্টেমে পরিবর্তন আনতে হবে। সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।

দুদকের হাঁকডাক তলিয়ে গেছে ফাঁকা আওয়াজে। একজন রাঘববোয়াল আটকানোর নজির নেই, কোন খাতের দুর্নীতির! প্ুঁটি মাছ যাও তদন্তে আনে তাও নানা প্রভাবে সাদা করে বের করে দেয়। যেন ক্রিমিনালদের পরিষ্কারের ছাড়পত্রদানের জায়গা।

করোনা রোগীদের জন্য অক্সিজেন সোনার হরিণ। আইসিইউ চাঁদের মতোন দুর্লভ। হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে মানুষের মর্মান্তিক মৃত্যুর খবর বাসি হয়েছে। আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগের অবস্থা মুমূর্ষু। সরকারি হাসপাতাল যেন বিনা চিকিৎসায় মানুষের মরণযন্ত্রণার নরক। চিকিৎসক-নার্সদের অবহেলা।

বিএনপি-জামায়াত আমলের স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দুর্নীতির অর্থ লন্ডনে পাচারের মামলা আছে। বিএনপি খারাপ শাসন দিয়েছে, অপশাসন দিয়েছে, দুর্নীতি-অপরাধ করছে, তার পাপের ফলও ভোগ করেছে। জনগণও প্রত্যাখ্যান করে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা দিয়েছিল। কিন্তু টানা ১১ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে কি জবাবদিহিমূলক সুশাসন দিয়েছে? দুর্নীতির লাগাম কি টেনে ধরেছে? করোনাকালের মহাবিপর্যয়কালেও কি একটি মহলের দুর্নীতির মহোৎসব থেমেছে? এসব প্রশ্ন আসছে। কেন পারেনি! রহস্যময় সব মিলিয়ন ডলার মূল্যের প্রশ্নের?

এক দশকে শেখ হাসিনার সরকারের দৃশ্যমান বিশাল উন্নয়ন কর্মযজ্ঞের বিপরীতে দুর্নীতির ভয়াবহ চিত্র দেখেছে বাংলাদেশ। চিত্রটা দেশজুড়ে। সৎ দক্ষ মন্ত্রীও দেখেছে। অনেকে ভালো করেছেন, অনেকে এখনো ভালো করছেন। তবু ক্ষমতার করুণা আশ্রিত লুটেরাদের দাপটে দুর্নীতির ভয়াবহতা এসেছে। হঠাৎ উড়ে এসে জুড়ে বসা ব্যাংক লুটেরাদের উল্লাস সয়েছে প্রিয় স্বদেশ। দুর্নীতিবাজদের দাম্ভিক দাপুটে বিচরণ দেখেছে সমাজ। অর্থ পাচারকারীদের নিরাপদ জীবন, দেশ-বিদেশের অঢেল সম্পদ ভোগ দেখেছে। ব্যাংক লুটেরা, অর্থ পাচারকারীদের নিয়ে বললে তারা আরও রাগে-আক্রোশে ক্ষমতা দেখায়। রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে ব্যাংকের হিসাব তলব করে নাকি বিতর্কিত করার ঔদ্ধত্য দেখায়। বিকৃত ঈর্ষাপরায়ণদের আনন্দ দেয়। আরে বাবা! আমাদের ব্যাংকে কী আছে জাতির সামনে দিয়ে দাও। এসবে নত হতে আসিনি। ঘাটে ঘাটে খাজনা দিয়ে চলার পাঠ নিইনি, নেব না। কিন্তু তোমাদের আইনের আওতায় জবাব দিতে হবে। মানুষ তোমাদের ধর্মের লেবাসের আড়ালে আগ্রাসী লুটপাট, অর্থ পাচার জানে। দেশ দেখেছে কীভাবে শেয়ারবাজার লুটে নিয়ে তারা বহাল। কীভাবে ঋণখেলাপিরা দেশ-বিদেশে ভোগের জীবনেও প্রশ্রয় পায়। শেয়ালের কাছে মুরগি রাখা বা শুঁটকির বাজারে বিড়াল চৌকিদার রাখার মতোন আর্থিক খাত। এক দশকে খালি এরাই লুটেনি প্রিয় স্বদেশ। সরকারি দলের যেসব নেতার টানাটানির জীবন ছিল ১১ বছর আগেও, তারা ব্যবসা-বাণিজ্য ছাড়াই অনেকে অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক। কেন্দ্র থেকে জেলা, অনেকের চেহারায় চর্বি, শানশওকত। কিছু এমপি, কিছু নেতা আফ্রিকান মাগুর একেকটা। যা পায় তাই খায়। আহারে গরিবের দল আওয়ামী লীগের একদল এমপি নেতা মন্ত্রী ১১ বছরে যে লুটপাট করেছে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের একাংশ ও আশ্রিত সুবিধাবাদীদের নিয়ে তাতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের, শেখ হাসিনার দর্শনের ন্যূনতম লালন করেনি। করেছে বিশ্বাসঘাতকতা। এরা দল ক্ষমতায় না থাকলে কোথায় পালাবে? ব্যাংক লুটেরা, অর্থ পাচারকারী, শেয়ার লুটেরা, দুর্নীতিবাজদের কখনো ধরা হয় না। একাদশীর শাসনে উড়ে এসে জামায়াতি বিনিয়োগে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের টিভি করেন, কত ব্যাংকের মালিক হন। ক্ষমতার আওয়ামী লীগ সুসময়ের বন্ধুদের আলাদিনের চেরাগ। ক্ষমতার ঘরে প্রবেশ করে বঙ্গবন্ধু হত্যার ষড়যন্ত্রকারীর বংশধর। জামায়াত-বিএনপির অনুপ্রবেশ ঘটে। বঙ্গবন্ধুর খুনির শ্যালক ডিএসই থেকে বিসিবির পরিচালক হয়। হাওয়া ভবনের বারান্দায় ঘুরে ফেরা এতিমরা এখন রমরমা ঠিকাদারিসহ নানা বাণিজ্য করে! এ তাদের দলের লজ্জার ব্যাপার। আমরা সুশাসন চাই। দুর্নীতি-লুটপাট নয়। অপরাধীদের বিচার চাই। ৫৭ ধারার বিরোধিতা করেছি প্রবল। তুমুল প্রতিবাদ করেছি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের। এখন দুর্নীতিবাজ লুটেরা অর্থ পাচারকারী ক্ষমতাবান, আর গণমাধ্যম কর্মীরা নিপীড়নের শিকার। দলকানা সুবিধাভোগী গণমাধ্যমের নেতারা ব্যর্থ। ক্ষমতা হারালে জানা যায় আইন কোনটা কত কালো। যেমন ’৭৫-এর পরে আওয়ামী লীগ জেনে ছিল বিশেষ ক্ষমতা আইনের যন্ত্রণা কী ভয়াবহ।

পদত্যাগী জামায়াত নেতা ব্যারিস্টার রাজ্জাকের চেহারার অবয়ব নিয়ে নিউজপোর্টালের এক বিতর্কিত মতলববাজের মানি লন্ডারিং, চাঁদাবাজি ধামাচাপা পড়ে যায়। এমন ডাকাত গণমাধ্যমের অভিশাপ। সিন্ডিকেট এদের রক্ষা করে। অর্থ পাচারকারী দুর্নীতিবাজ, চোর, ঘুষখোর, লুটেরা, অর্থ পাচারকারীদের কেন ধরা হবে না? যে পেশার হোক, যে দলের হোক। আসলে সংবিধান ও আইনের নিরপেক্ষ কার্যকর প্রয়োগ, সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান স্বাধীন শক্তিশালী না হলে কীভাবে সম্ভব? অনেকে জনগণের লুটের, দুর্নীতির সম্পদ অর্থের ওপর কুৎসিত চেহারায় দাঁড়িয়ে দম্ভ করে! অনেকে বলেন পরকালে আল্লাহ তাদের বিচার করবে। নামাজ পড়ে কপালে কালো দাগ, কথায় কথায় আল্লাহর শুকরিয়া, যখন তখন ওমরাহ ও হজ, আর সারাক্ষণ ব্যাংকের টাকা চুরি, বিদেশে অর্থ পাচার, ঘুষ-দুর্নীতি লোভ যাদের ধর্ম শেষ বিচারে তাদের কী হবে তা আল্লাহই জানেন। কিন্তু একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জনগণ কেন ইহকালেই অপরাধীদের বিচার দেখবে না? পরকালের বিচার আল্লাহ করবেন, ইহকালে এদের বিচার জনগণই করবে। ক্ষমতা গেলে বুঝবে কোন দোজখে পড়েছে। ক্ষমতার স্বর্গ থেকে দোজখের অভিজ্ঞতা অতীতে ভোগ করেও শিক্ষা নেয়নি। তাই বলা হয়, ইতিহাসের শিক্ষাই হচ্ছে ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না।

               

                লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন।

সর্বশেষ খবর