করোনা চিকিৎসায় বিশৃঙ্খল অবস্থা চলছে দুনিয়াজুড়ে। দুনিয়ার সবচেয়ে উন্নত ও সমৃদ্ধ দেশ যুক্তরাষ্ট্রও এর ব্যতিক্রম নয়। যুক্তরাজ্য, স্পেন, ফ্রান্সের মতো দেশও হিমশিম খাচ্ছে চিকিৎসা দিতে গিয়ে। বাংলাদেশের মতো দেশে বিশৃঙ্খল অবস্থা যে আরও ঘোরতর হওয়ার কথা তাতে কোনো নতুনত্ব নেই। তবে দুনিয়ার অনেক উন্নত দেশের চেয়ে নিম্নমধ্য আয়ের দেশ বাংলাদেশে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সরকারের পক্ষ থেকে যেসব ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেনি দুর্নীতি আক্রান্ত স্বাস্থ্য প্রশাসন। স্বাস্থ্য অধিদফতরের কর্তাব্যক্তিরা নিজেদের আখের গোছানোর কাজে এতটাই ব্যস্ত ছিলেন যে, বহু ক্ষেত্রে তারা সরকারকে সঠিক তথ্য দেননি। তাদের কা-জ্ঞানহীন আচরণের কারণে করোনা চিকিৎসায় রোগী শনাক্ত, ল্যাব বাড়ানো, কিট ও সুরক্ষা উপাদান সংগ্রহ ইত্যাদি বিষয়ের প্রতি সময়মতো নজর দেওয়া সম্ভব হয়নি। ফলে করোনা মোকাবিলায় সরকারের অনেক কৃতিত্বই ধূলিসাৎ হয়ে গেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কারণে। করোনা চিকিৎসায় সবচেয়ে বেশি সংকট দেখা দিয়েছে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র বা আইসিইউ শয্যার ক্ষেত্রে। অক্সিজেনের অভাবেও শ্বাসকষ্টে ভোগা অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন। স্বাধীনতার পর থেকে দেশবাসীর অন্যতম প্রধান মৌলিক মানবাধিকার চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে প্রতিটি সরকার কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা ঢাললেও তা দেশের মানুষের কল্যাণে সর্বাংশে ব্যবহার করা সম্ভব হয়নি আরব্য উপন্যাসের থিপ অব বাগদাদের এ-দেশীয় বশংবদদের জন্য। বরাদ্দকৃত অর্থ সঠিকভাবে ব্যবহৃত হলে জেলা পর্যায়েও আইসিইউ শয্যার ব্যবস্থা গড়ে উঠত। হাসপাতালগুলোয় কেন্দ্রীয়ভাবে অক্সিজেনের ব্যবস্থা নিশ্চিত হতো। করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী যে কোনো মূল্যে মানুষের জীবন রক্ষায় একের পর এক ইতিবাচক পদক্ষেপ নিলেও তার সঙ্গে প্রশাসনের অনেকে তাল মিলিয়ে চলতে পারেননি। এ লজ্জা কাটিয়ে উঠতে দেশের ও জনগণের স্বার্থে আমলাতান্ত্রিক মানসিকতার ইতি ঘটাতে হবে। চোর ও সিন্ডিকেটবাজদের হাত থেকে শুধু স্বাস্থ্য দফতর নয়, পুরো প্রশাসনকে মুক্ত করতে হবে।