শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

আসুন ইস্তিগফারের মাধ্যমে প্রার্থনা করি

সৈয়দ নজরুল ইসলাম

হে চিরঞ্জীব চিরস্থায়ী আল্লাহ্! তুমি আদি-অন্ত প্রকাশমান ও অপ্রকাশমান সব বিষয়ে সম্যক পরিজ্ঞাত। তুমিই সর্বময় ক্ষমতার মালিক। আসমান-জমিন ও এতদুভয়ের তুমিই জ্যোতি এবং সবকিছুর নিয়ন্ত্রক ও অধিকর্তা। আমরা স্বীকার করছি, ‘তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোনো সত্য মাবুদ নেই। সিজদার স্থান একমাত্র তোমারই জন্য নির্ধারিত এবং সব প্রশংসা কেবলই তোমার। আমরা আরও স্বীকারোক্তি করছি, তুমি সত্য, তোমার বাণী ও অঙ্গীকার সত্য, তোমার দর্শনলাভ সত্য, জান্নাত সত্য, জাহান্নাম সত্য, নবীগণ সত্য, মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সত্য, কিয়ামত সত্য এবং তোমারই কাছে আমাদের ফিরে যেতে হবে। তুমি বিচার দিবসের মালিক। তোমাকেই বিচারক নির্ধারণ করছি।’

তাই তুমি তোমার রহমত ও করুণা বর্ষণ কর নবী মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ওপর, তাঁর পরিবার-পরিজনসহ সাহাবিদের ওপর। তোমার দীনের পথে ইয়াকিন থেকে যেসব মুমিন কবরবাসী হয়েছেন তাদের ওপর এবং আমরা যারা তোমার দীনকে আঁকড়ে থাকার সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের ওপর। তোমার করুণা ও ক্ষমাপ্রাপ্তির তীব্র আকাক্সক্ষা নিয়ে আমরা তওবা ও ইস্তিগফার করার নিমিত্ত পুনরায় স্বীকারোক্তি দিচ্ছি, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোনো সত্য মাবুদ নেই। আমরা প্রত্যেকেই তোমার কোনো না কোনো বান্দার সন্তান। তুমি আমাদের স্রষ্টা। সৃষ্টির সূচনালগ্নে আমরা সবাই তোমার সঙ্গে যে অঙ্গীকার করেছিলাম ওই অঙ্গীকার বাস্তবায়নে সাধ্যমতো চেষ্টা করেও আমরা পৃথিবীর মোহে, ক্ষমতার দাপটে প্রলুব্ধ হয়ে নানাবিধ অন্যায়-অনাচার ও পাপাচারে লিপ্ত হয়েছি। শুধু তাই নয়, অনেক সময় তোমাকে ভুলে গিয়ে সীমা লঙ্ঘন করে ফেলেছি। এখন আমাদের বোধোদয় হয়েছে। তুমিই তো বলেছ, আদমসন্তান মানেই পাপী, উত্তম পাপী সে বা তারা যারা তওবা করে তোমার দিকে ফিরে যায়। তাই তোমার ওই অমোঘ বাণীতে আশ্বস্ত হয়ে আমরা আমাদের দ্বারা কৃত সব ধরনের পাপের জন্য তোমারই কাছে নিঃশর্ত ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। তুমিই একমাত্র পাপ মার্জনা করার ক্ষমতাবান তাই তোমার নিজগুণে আমাদের ক্ষমা করে দাও। তুমি ক্ষমাশীল, ক্ষমা চাওয়া তোমার পছন্দনীয় তাই আমরা ক্ষমাপ্রার্থী, তুমি আমাদের ক্ষমা করে দাও।

হে আল্লাহ! আমরা জানি আমাদের সীমা লঙ্ঘনজনিত পাপে আমরা আজ কয়েক মাস যাবৎ তোমার আজাব দ্বারা নিগৃহীত হচ্ছি। বাঁচার তাগিদে কোনো উপায় না পেয়ে তোমারই কাছে আত্মসমর্পণ করছি। তোমার সৃষ্টির সেরা জীব আজ অসহায়। সৃষ্টিকুলের অধিকাংশ মানুষ আজ ক্ষুধার্ত, খাদ্য সংকটে পতিত। অনেকে মারা যাচ্ছে। চিকিৎসার অভাব, অনেকের অর্থ থাকতেও রোগ থেকে নিরাময়ের দাওয়া না থাকায় সে অর্থ ব্যয় করতে পারছে না। এসবই হচ্ছে আমাদের কর্মফলের কারণে। এক্ষণে আমাদের জ্ঞান ফিরে এসেছে, আমরা আমাদের ভুল সংশোধন করে তোমার কাছে ফিরে আসছি। প্রতিজ্ঞা করছি দুষ্কর্ম আর করব না। তাই সঠিক পথে চলতে এবং অসৎকর্ম থেকে বেঁচে থাকতে তোমার সাহায্য চাই। হালাল জীবিকা দিয়ে হারাম থেকে এবং ইবাদতের সামর্থ্য দিয়ে পাপাচার থেকে আমাদের বাঁচাও। আমরা তো তোমারই ইবাদত করি তাই তোমার কাছেই তো সাহায্য চাইব। তুমি তোমার অসীম জ্ঞানভান্ডার থেকে তোমার সৃষ্টির সেরা জীবকে সামান্যতম জ্ঞান দিয়ে এ মহামারীর প্রতিষেধক বের করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়ে তোমার আজাব উঠিয়ে নাও।

হে পরম দয়ালু আল্লাহ! আমরা তোমার বান্দা, আমাদের ওপর তোমার হুকুম কার্যকর, তোমার ফয়সালা ইনসাফপূর্ণ। তাই তোমার ওইসব নামের অসিলায় আরজি পেশ করছি, যেসব নাম তুমি নিজেই নিজের জন্য রেখেছ, আর যেসব নাম তুমি কিতাবের মাধ্যমে সৃষ্টিকুলকে শিখিয়েছ। আরও অনেক নাম তুমি সৃষ্টজীবের কাউকে না কাউকে শিখিয়েছ, তোমার আরও অনেক নাম আছে যা তুমি তোমার ইলমের গাইবে রেখেছ, ওইসব নামের অসিলায় এবং তোমার কোরআনের বাণীসমূহ দ্বারা আমাদের অন্তরে জ্যোতি সৃষ্টি করে দীনের পথে অটল থাকার, অধিকন্তু আমাদের সকল প্রকার রোগব্যাধি ও মহামারী থেকে মুক্তি দিয়ে বর্তমান ও ভবিষ্যতের উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা দূর করে দাও।

সর্বোপরি সুরা বাকারার শেষ দুটি আয়াত যা তুমি উম্মতে মুহাম্মাদীকে তোমার আরশের ভান্ডার থেকে দান করেছ তাঁর শেষ আয়াতের মাধ্যমে তোমার কাছে আবেদন করছি- ‘হে অসীম দয়ালু আল্লাহ! আমরা ভুল করেছি আমাদের ভুলত্রুটি ক্ষমা করে দাও। পূর্ববর্তী নবীদের উম্মতদের যেভাবে আজাব দিয়ে শাস্তি দিয়েছ তোমার হাবিব মুহাম্মাদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতদের সেভাবে শাস্তি দিও না। এ উম্মতদের অসিলায় সারা মাখলুকাতকে তুমি বাঁচাও। আমাদের ক্ষমা কর। আমাদের দয়া কর তুমি আমাদের অভিভাবক। তোমার সন্তুষ্টির মাধ্যমে তোমার অসন্তুষ্টি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তোমার নিরাপত্তার মাধ্যমে তোমার শাস্তি থেকে আশ্রয় চাচ্ছি। তোমার প্রশংসা করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তুমি যেভাবে তোমার প্রশংসা করেছ আমরা সেভাবেই তোমার প্রশংসা করছি। সর্ববিধ প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ তোমার। অজস্র দরুদ সালাত বর্ষিত হোক নবী মুহাম্মদুর রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবিদের ওপর।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিচালক (অব.) রাজউক।

সর্বশেষ খবর