মঙ্গলবার, ৩০ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল বন্ধের প্রস্তুতি

সিদ্ধান্তটি সঠিক হলেও সময়োচিত নয়

লাগাতার লোকসানের দায়ে সরকার মালিকানাধীন ২২টি পাটকল বন্ধ করে দেওয়ার পথে হাঁটছে সরকার। এ প্রতিষ্ঠানগুলোয় কর্মরত প্রায় ২৫ হাজার শ্রমিককে গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় অবসরে পাঠানোর প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। দুই মাসের মধ্যে জারি হবে এ-সংক্রান্ত আদেশ। এ সময়ের মধ্যে শ্রমিকদের প্রাপ্য পরিশোধ করা হবে। এজন্য বাজেট থেকে ব্যয় হবে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা। রাষ্ট্রের মালিকানায় প্রতিষ্ঠান পোষা আর শ্বেতহস্তী পোষার মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। আমরা প্রথম থেকে সরকারি মালিকানাধীনে শিল্প পরিচালনার বিরোধিতা করে আসছি এবং এসব প্রতিষ্ঠানের পেছনে দেশবাসীর ট্যাক্সের টাকার অপচয়ের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করে চলেছি। সেদিক থেকে রাষ্ট্র মালিকানাধীন ২২টি পাটকল বন্ধের সিদ্ধান্তে আপত্তি করার কিছু নেই। তবে করোনাকালে এমন একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া এবং বন্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর ভবিষ্যৎ নিয়ে আমলাতন্ত্রের কুশীলবরা যে পরিকল্পনা নিয়েছেন তার যথার্থতা আরও ভালোভাবে খতিয়ে দেখার অবকাশ রয়েছে। প্রথমত করোনাভাইরাসের কারণে দেশে যখন ১ কোটির বেশি মানুষ বেকারত্বের হুমকির মুখে, তখন আরও ২৫ হাজার মানুষকে সেদিকে ঠেলে দেওয়া কতটা যৌক্তিক- ভেবে দেখার বিষয়। অর্থনৈতিক দিক থেকেও এ সিদ্ধান্তটি লাভজনক নয়। গোল্ডেন হ্যান্ডশেক প্রক্রিয়ায় যে ৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে তা ব্যাংকে রাখলে সে মুনাফার একাংশ দিয়েই শ্রমিকদের সারা বছরের বেতন-ভাতার টাকা পরিশোধ করা সম্ভব। অবসায়নের পর মিলগুলো সরকারি নিয়ন্ত্রণে পিপিপি, যৌথ উদ্যোগ, জিটুজি ও লিজ মডেলে পরিচালনের যে স্বপ্নকল্প আঁকা হয়েছে তা কতটা বাস্তবসম্মত প্রশ্নের ঊর্ধ্বে নয়। অতীতের তিক্ত অভিজ্ঞতা বলে, এগুলো প্রকারান্তরে মিলের সম্পদ লুটপাটে সহায়তা করবে। আমাদের মতে, করোনার ধকল কেটে যাওয়ার পর ২২টি পাটকল বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে সেটিই হবে উত্তম। শুধু পাটকল নয়, জনগণের ট্যাক্সের টাকার শ্রাদ্ধ করছে যেসব লোকসানি প্রতিষ্ঠান সেগুলোর ক্ষেত্রেও একই ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে লোকসানের জন্য আমলাতান্ত্রিকতার ভূতই মূলত দায়ী। মিলগুলো বন্ধের পর পিপিপি বা অন্য পদ্ধতির নামে তাদের দৌরাত্ম্যের সুযোগ যাতে না থাকে সে বিষয়ে সাবধান থাকা জরুরি।

সর্বশেষ খবর