বুধবার, ১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

পানিতে ডুবে মৃত্যু শহীদের মর্যাদাধারী

যুবায়ের আহমাদ

পানিতে ডুবে মৃত্যু শহীদের মর্যাদাধারী

মৃত্যু আমাদের জীবনের অনিবার্য পরিণতি। মানুষকে মৃত্যুবরণ করতেই হয়। প্রত্যাবর্তন করতে হয় সেই মহান রবের দিকে, যিনি আমাদের সৃষ্টি করে সীমিত সময় দিয়ে পাঠিয়েছেন। তবে সেই মৃত্যু যেন হয় দুর্ঘটনামুক্ত, তা কামনা করা স্বাভাবিক। একজন মানুষের জন্য অন্য মানুষকে হত্যা যেমন জায়েজ নয়, তেমনি নিজেকে হত্যা করা বা নিজের মৃত্যু কামনা করাও জায়েজ নয়। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ কখনো মৃত্যু কামনা করবে না। কারণ সে নেককার হলে হয়তো আরও বেশি নেক আমলের সুযোগ পাবে। আর বদকার হলে হয়তো তওবার মাধ্যমে আল্লাহর ক্ষমা ও সন্তুষ্টিলাভের সুযোগ পাবে।’ বুখারি।

একজন মুমিনের জন্য দুর্ঘটনার মৃত্যু কামনার সুযোগ নেই। বেশি সময় বাঁচার সুযোগ পেলে আল্লাহকে সিজদা করে আল্লাহর নৈকট্যলাভে ধন্য হবে- এ স্বপ্ন মুমিনমাত্রই দেখে। তবু কখনো কখনো দুর্ঘটনার মৃত্যুই তাকে বরণ করে নিতে হয়। অনাকাক্সিক্ষতভাবেই কখনো অগ্নিদগ্ধ হয়ে, কখনো মহামারীতে, কখনো সন্তান প্রসব করতে গিয়ে গর্ভবতী মাকে নিজের প্রাণ বিলিয়ে দিতে হয়। আর কখনো সফরে গিয়ে হঠাৎ একজন মুমিনের ভালো কাজের স্বপ্নেরও সলিলসমাধি ঘটে। অপ্রত্যাশিতভাবে যখন একজন মুমিন এ ধরনের দুর্ঘটনার শিকার হয়ে মারা যায়, তখন আল্লাহ তাকে শাহাদাতের বিশেষ মর্যাদা দান করেন। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘পানিতে ডুবে, কলেরায়, প্লেগে ও ভূমিধসে বা চাপা পড়ে মৃত ব্যক্তিরা শহীদ।’ বুখারি।

শহীদি মৃত্যু দুই ধরনের। প্রথম প্রকার হলো সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠায় আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য আল্লাহর রাস্তায় জিহাদে জীবন দেওয়া। আর দ্বিতীয়ত হলো হুকমি শহীদ। অর্থাৎ যারা আল্লাহর রাস্তায় জীবন দেওয়া ছাড়াই শহীদ। তারা মূলত শহীদ না হয়েও শহীদের মর্যাদা বা সওয়াবপ্রাপ্ত। জাবির ইবনে আতিক (রা.) থেকে বর্ণিত, ‘একবার রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তোমরা তোমাদের মধ্যে কোন কোন ব্যক্তিকে শহীদ বলে গণ্য কর? তারা বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আল্লাহর পথে যারা নিহত হয়, তারাই তো শহীদ। তিনি বললেন, আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ছাড়া শহীদ সাতজন- ১. প্লেগে মৃত্যুবরণকারী ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী ৩. আঘাতে মৃত্যুবরণকারী ৪. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী ৫. আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী ৬. কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী ও ৭. সন্তান প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী নারী।’ ইবনে মাজাহ। তবে এ শাহাদাতের মর্যাদা লাভের শর্ত হলো ইমান থাকা। পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারীদের আল্লাহ শাহাদাতের মর্যাদা দান করুন!

নিহতদের পরিবার-পরিজন যদি এ সময় ধৈর্য ধারণ করে, তাদের জন্যও আল্লাহর দরবারে রয়েছে পুরস্কার। এ ধরনের বিপদে ধৈর্য ধারণকারীর জন্য আল্লাহ জান্নাতে প্রাসাদ নির্মাণের নির্দেশ দেন। আবু মুসা আশয়ারি (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কোনো বান্দার সন্তান মারা গেলে আল্লাহ ফেরেশতাদের বলেন, তোমরা আমার বান্দার রুহ কবজ করেছ? ... (এ ঘটনায়) আমার বান্দা কী বলেছে? তারা বলেন, সে আপনার প্রশংসা করেছে এবং ইসতিরজা (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন) পড়েছে। তখন আল্লাহ বলেন, আমার বান্দার জন্য জান্নাতে একটি ঘর তৈরি কর এবং এ ঘরটির নাম রাখো বায়তুল হামদ।’ তিরমিজি।

           

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর