মানুষের জীবনের সবচেয়ে বাস্তব সত্য মৃত্যু। আজ হোক কাল হোক যার জন্ম হয়েছে তার মৃত্যু
সুনিশ্চিত। কিন্তু কার কোথায় মৃত্যু হবে তা কেউ জানে না। কারণ এগুলো অদৃশ্য বা গায়েবি বিষয়। এর জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছে রয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কিয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং তিনিই জানেন নারীদের জরায়ুতে বা গর্ভাশয়ে যা থাকে। কেউ জানে না আগামীকাল সে কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না সে কোন স্থানে বা জায়গায় বা দেশে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ব বিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।’ সুরা লুকমান, আয়াত ৩৪।
আল্লাহ আরও ইরশাদ করছেন, ‘প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করবে। সুরা আলে ইমরান, আয়াত ১৮৫।পথেঘাটে চলাফেরায় বিভিন্ন সময় মানুষ দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হয়। কেউ মৃত্যুবরণ করে আবার কেউ হায়াত থাকলে বেঁচেও যায়। এই যে বুড়িগঙ্গায় ঘটে গেল মর্মান্তিক লঞ্চ দুর্ঘটনা। যাতে অনেক মানুষ হতাহত হয়েছেন। কেউ কেউ সাঁতরে উঠতে পেরেছেন, আর কেউ কেউ পানিতে ডুবে মারা গেছেন। মৃত্যু তো একদিন মানুষের হবেই। পৃথিবী ছেড়ে তো সবাইকে একদিন চলে যেতে হবে। কিন্তু এ ধরনের দুর্ঘটনায় যারা মারা যান তাদের জন্য রয়েছে শহীদি মর্যাদা। সম্মানজনক মৃত্যু। হজরত জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘আল্লাহর রাস্তায় নিহত হওয়া ব্যক্তিরা ছাড়াও শহীদ সাতজন- ১. প্লেগে মৃত্যুবরণকারী। (বর্তমানে করোনাভাইরাসে অনেক মানুষ মারা যাচ্ছে। এ অংশের ভাষ্যমতে তারাও শহীদ।) ২. পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী। (এ অংশের ভাষ্যমতে পানিতে ডুবে যারা মারা যাবে তারাও শহীদ। সুতরাং বুড়িগঙ্গায় যারা পানিতে ডুবে মারা গেছেন, তারা শহীদ।) ৩. আঘাতে মৃত্যুবরণকারী। ৪. পেটের পীড়ায় মৃত্যুবরণকারী। ৫. আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী। ৬. কূপে পড়ে মৃত্যুবরণকারী। ৭. সন্তান প্রসব যন্ত্রণায় মৃত্যুবরণকারী।’ ইবনে মাজাহ।
যেভাবে হোক মানুষের মৃত্যু একদিন হবেই। কিন্তু সাধারণ মৃত্যুর চেয়ে উত্তম মৃত্যু হলো শহীদি মৃত্যু। একজন মুমিনের কামনা-বাসনা সেই মৃত্যুই হওয়া চাই। কেননা রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মৃত্যুবরণ করল অথচ জিহাদ করেনি এমনকি মনে জিহাদের তথা শহীদি মৃত্যুর চিন্তাও করেনি, সে যেন মুনাফিকির অবস্থায় মৃত্যুবরণ করল।’ মুসলিম।
ফিকাহর কিতাবে এসেছে, শহীদি মৃত্যু দুই প্রকার। প্রথম ধরনের মৃত্যু হলো প্রকৃত বা আসল শহীদ। যারা আল্লাহর দীন কায়েমের জন্য কাফিরদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে জীবন দেয়। এসব শহীদের মর্যাদা অনেক বেশি। কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘আর যারা আল্লাহর রাস্তায় নিহত হয়, তাদের তোমরা মৃত বোলো না; বরং তারা জীবিত, কিন্তু তোমরা তা বুঝো না।’ সুরা বাকারা, আয়াত ১৫৪।
আরেক ধরনের শহীদ হলো হুকুমি শহীদ। অর্থাৎ যারা যুদ্ধ করে শহীদ হয়নি, তার পরও শহীদের সওয়াবপ্রাপ্ত হবেন। তারা হলেন মহামারীতে মৃত্যুবরণকারী, আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণকারী, পানিতে ডুবে মৃত্যুবরণকারী ইত্যাদি। এরাও শহীদের মর্যাদা লাভ করবেন। আল্লাহ পানিতে ডুবে ও করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের শহীদি মর্যাদা দান করুন।
লেখক : মুহাদ্দিস, খাদিমুল ইসলাম মাদ্রাসা, ঢাকা।