শুক্রবার, ৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বন্ধ হচ্ছে না মানব পাচার

সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে

মানব পাচার বাংলাদেশের ভাবমূর্তির জন্য সাক্ষাৎ বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এক যুগের বেশি সময় ধরে মানব পাচারের শীর্ষস্থানীয় অভয়ারণ্যের তকমা লটকানো রয়েছে বাংলাদেশের কপালে। পাচারকারীরা তাদের উদ্দেশ্য পূরণে বেছে নিয়েছে প্রধানত সাগরপথকে। মালয়েশিয়ায় পাচার হওয়া কয়েক হাজার মানুষের সলিলসমাধির ঘটনা অনেকেরই জানা। লোভনীয় চাকরির স্বপ্ন দেখিয়ে সাগরপথে থাইল্যান্ডের বনভূমিতে নিয়ে জিম্মি করে স্বজনদের কাছ থেকে অর্থ আদায়ের ঘটনা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও তোলপাড় তুলেছে। দাস হিসেবে হতভাগ্য বাংলাদেশিদের বিক্রি করে দেওয়ার ঘটনাও কম নয়। মানব পাচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে বেশি তৎপর। তার পরও বন্ধ হচ্ছে না এ জঘন্য ব্যবসা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মূল্যায়ন- পাচারকারী চক্রের প্রলোভনে পড়ে রোহিঙ্গাসহ বাংলাদেশিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাগরপথে মালয়েশিয়া যাচ্ছে। বিভিন্ন সময়ে তাদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেওয়া হলেও স্তব্ধ করা যাচ্ছে না এই দুর্বৃত্তদের। গত মাসেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন মানব পাচারকারী। এর পরও বন্ধ হয়নি পাচার। বিশ্লেষকদের মতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারি শিথিল হলে পাচার আবারও বেড়ে যায়। জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা-ইউএনএইচসিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে দেড় হাজারের বেশি আশ্রয়প্রার্থী বঙ্গোপসাগর ও আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়েছেন; যা ২০১৩ থেকে ২০১৫ সালে সাগর পাড়ি দেওয়াদের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বেশি। ২০১৫ সালের সাগরযাত্রীর বেশির ভাগই ছিল পুরুষ, কিন্তু ২০১৮ সালের যাত্রীর শতকরা ৫৯ ভাগই নারী ও শিশু। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, পুরনো রুটেই আবারও পাচারকাজ শুরু হয়েছে। মানব পাচার বন্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতাই যথেষ্ট নয়। এ পাপ ব্যবসার টুঁটি চেপে ধরতে সামাজিক প্রতিরোধ বা জনসচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়টি খুবই প্রাসঙ্গিক। প্রতিটি এলাকায় কারা মানব পাচারে জড়িত তা এলাকাবাসীর অজানা নয়। সামাজিকভাবে প্রতিরোধ গড়লে দেশ মানব পাচারের অভিশাপ থেকে রেহাই পাবে- এমনটিই আশা করা যায়।

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর