বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

ঈসা খান-মানসিংহ যুদ্ধ

ঈসা খান-মানসিংহ যুদ্ধ

১৫৯৭ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে মানসিংহ স্থল ও জলপথে ঈসা খানের বিরুদ্ধে দুটি বিরাট বাহিনী পাঠান। দুর্জন সিংহের অধিনায়কত্বে মুঘল সেনাবাহিনী প্রথম দিকে কিছুটা সাফল্য লাভ করে, এমনকি তারা ঈসা খানের রাজধানী কাত্রাবোও আক্রমণ করে। কিন্তু শেষে ৫ সেপ্টেম্বর বিক্রমপুর থেকে ২০ কিমি দূরে এক নৌযুদ্ধে দুর্জন সিংহ নিহত হন এবং মুঘল বাহিনী বিধ্বস্ত হয়। এভাবে ঈসা খানের বিরুদ্ধে মানসিংহের অভিযান ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় এবং হতোদ্যম সুবাদার ১৫৯৮ খ্রিস্টাব্দে আজমিরের উদ্দেশে বাংলা ত্যাগ করেন।

১৬০১ খ্রিস্টাব্দের প্রথম দিকে মানসিংহ দ্বিতীয়বার সুবাদার হিসেবে বাংলায় আসেন এবং ১২ ফেব্রুয়ারি শেরপুর আতাইয়ের যুদ্ধে আফগান বিদ্রোহীদের পরাজিত করেন। পরের বছর তিনি ঢাকা অভিমুখে অগ্রসর হন এবং শ্রীপুরের জমিদার কেদার রায়কে মুঘলদের পক্ষে আনার চেষ্টা করেন। উত্তরবঙ্গের মালদহ পর্যন্ত এলাকায় হামলাকারী জালাল খান ও কাজী মুমিনের মতো আফগান দলপতিদের বিরুদ্ধে মানসিংহ ঘোড়াঘাট থেকে তাঁর পৌত্র মহাসিংহের অধীনে এক বাহিনী প্রেরণ করেন। মহাসিংহ সে অঞ্চল থেকে আফগান দলপতিদের বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। ইতোমধ্যে বোকাইনগরের খাজা উসমান খান নুহানি ময়মনসিংহের মুঘল থানাদার বজ বাহাদুর কলমাককে ভাওয়ালে বিতাড়িত করেন। ঘটনার এ গতি পরিবর্তনে মানসিংহ দ্রুত ঢাকা থেকে ভাওয়াল অভিমুখে অগ্রসর হয়ে উসমান খানকে পরাজিত করেন। এর অল্পকাল পরই ইছামতি নদীর তীরে মানসিংহের সঙ্গে মুসা খান ও তার ভাই দাউদ খান, উসমান খান ও কেদার রায়ের সম্মিলিত বাহিনীর আরেকটি যুদ্ধ হয়। ১৬০৩ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহ বহু কষ্টে ত্রিমোহিনীর মুঘল দুর্গে মগ জলদস্যুদের আক্রমণ প্রতিহত করেন। মগদের সহায়তায় কেদার রায় শ্রীনগরে মুঘল ঘাঁটি আক্রমণ করেন। মানসিংহ উসমান খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ভাওয়ালে ফিরে এলে উসমান খান পালিয়ে যান। ১৬০৫ খ্রিস্টাব্দের ফেব্রুয়ারিতে মানসিংহ আগ্রার উদ্দেশে বাংলা ত্যাগ করেন।

আকবরের শেষ দিনগুলোয় মানসিংহ আগ্রায় অবস্থান করেন এবং তাঁর ভাগ্নে খসরুকে সিংহাসনে বসানোর ব্যর্থ চেষ্টা করেন। সিংহাসনে আরোহণের পর জাহাঙ্গীর মানসিংহকে তৃতীয়বারের মতো সুবাদাররূপে বাংলায় পাঠান। তবে তৃতীয়বারে তাঁর সুবাদারি ছিল স্বল্পস্থায়ী এবং এ সময় কোনো উল্লেখযোগ্য ঘটনা ঘটেনি। শেষ পর্যন্ত ১৬০৬ খ্রিস্টাব্দের সেপ্টেম্বরে তাঁকে বাংলা থেকে প্রত্যাহার করে বিহারে বদলি করা হয়। দাক্ষিণাত্যে অবস্থানকালে ১৬১৪ খ্রিস্টাব্দে মানসিংহের মৃত্যু হয়। [এ এ শেখ মো. আসরারুল হক চিশতি]

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর