বুধবার, ৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

জীবন-জীবিকায় কশাঘাত

সাহস নিয়ে প্রতিকূলতা কাটাতে হবে

গত এক দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে গেছে জোরকদমে। বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ, জাতিসংঘ সর্বত্র উচ্চারিত হয়েছে বাংলাদেশের প্রশংসা। দুনিয়ার শীর্ষস্থানীয় প্রবৃদ্ধির দেশ হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার সৌভাগ্যও অর্জিত হয়েছে কয়েক বছর ধরে। কিন্তু করোনাভাইরাস নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবের থাবা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের অর্থনীতি তছনছ করে দিয়েছে। বাংলাদেশের জোরকদমে এগিয়ে যাওয়ার পথেও সৃষ্টি করেছে প্রতিবন্ধকতা। করোনাকালে অর্থনৈতিকভাবে দুনিয়ার কোনো দেশ ভালো নেই। বাংলাদেশ নিম্নমধ্য আয়ের থেকে মধ্য আয় ও উন্নত দেশের কাতারে উন্নীত হওয়ার জন্য যে লড়াই চালাচ্ছিল তাতে ব্যাঘাত ঘটায় লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। করোনাঘাতে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য শিল্প এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে যে, এ নাজুক অবস্থা কাটাতে কয়েক বছর লেগে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থনীতিবিদদের মতে দেশের অন্তত ৭০ শতাংশ মানুষের উপার্জন হ্রাস পেয়েছে। বেকারত্বের পরিমাণ আকাশছোঁয়ার আশঙ্কা সৃষ্টি করেছে। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি। করোনাকালে অযৌক্তিকভাবে বাড়ছে চাল ডাল তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম। ডলারের মূল্যবৃদ্ধিও আমদানিকৃত নিত্যপণ্যের মূল্য বাড়াতে ইন্ধন জোগাচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অজুহাতে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে বাসসহ অন্যান্য গণপরিবহনের ভাড়া। মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে বিদ্যুৎ পানির মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা। দেশের শিল্প খাতকে পথে বসিয়েছে করোনাভাইরাস। সরকারি প্রণোদনা সত্ত্বেও বিপদ কাটাতে এ খাত কতটা সক্ষম হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত হতে পারছেন না উদ্যোক্তারা। ফলে ঘনীভূত হচ্ছে ছাঁটাইয়ের আশঙ্কা। বেকার হয়ে পড়ছে বিপুল জনগোষ্ঠী। অবস্থা এতটাই নাজুক যে, ঢাকা ও বড় শহরগুলো ছাড়তে শুরু করেছে হাজার হাজার মানুষ। গ্রামে এসব কর্মজীবী অথবা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর প্রত্যাবর্তন অন্যরকম সংকট সৃষ্টি করছে। এ অবস্থা মোকাবিলায় সরকারের সদিচ্ছার অভাব নেই। কিন্তু সংকট এত ভয়াবহ যে, তার আশু সমাধান অনিশ্চিত। আশা শুধু এতটুকু, বাঙালিরা লড়াকু জাতি। মুক্তিযুদ্ধ তার প্রকৃষ্ট  প্রমাণ। এ অবস্থা মোকাবিলায় ভেদাভেদ ভুলে জাতিকে সাহসে ভর করে এক হয়ে লড়তে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর