সোমবার, ১৩ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

রোগীর সেবায় এগিয়ে আসুন

মো. আবু তালহা তারীফ

রোগীর সেবায় এগিয়ে আসুন

‘হাশরের দিন বলিবেন খোদা হে আদম সন্তান, তুমি মোরে সেবা কর নাই যাবে ছিনু রোগে অজ্ঞান/ মানুষ বলিবে তুমি প্রভু করতার, আমরা কেমনে লইব তোমার পরিচর্যার ভার?/বলিবেন খোদা দেখনি মানুষ কেঁদেছে রোগের ঘরে, তারই শুশ্রুষা করিলে তুমি যে সেথায় পাইতে মোরে।’ কবিতাটি কবি আবদুল কাদিরের ‘মানুষের সেবা’ কবিতার প্রথমে উল্লেখ করছে। কবির ভাষায় যে ব্যক্তি রোগীর সেবা করল তারা আল্লাহর সেবা করল। যারা রোগীকে অবহেলা করল তারা আল্লাহর প্রতি অবহেলা করল। এ জন্য শেষ বিচারের দিন আল্লাহ তাদের আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করাবেন। সেবা করা শ্রেষ্ঠ ইবাদত। সেটি সহজেই অনুমেয়। হাদিসের মাধ্যমে আমরা দেখতে পাই, একজন মুসলমানের আরেক মুসলমানের কাছে ছয়টি হক রয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হলো, কেউ অসুস্থ হলে তাকে দেখতে যাওয়া। হজরত আলী (রা.) বলেন, আমি রসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, ‘যে ব্যক্তি সকালে কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায়, সত্তর হাজার ফেরেশতা তার জন্য সন্ধ্যা পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকে। যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় কোনো মুসলমান রোগীকে দেখতে যায় পরদিন সকাল পর্যন্ত নেক দোয়া করতে থাকেন। আর তাকে জান্নাতের একটি বাগান দান করা হয়’ (তিরমিজি)।

রোগীকে দেখতে যাওয়া উত্তম একটি কাজ। সবসময় মনে ধারণা রাখতে হবে সে অসুস্থ হয়েছে এক দিন আমিও অসুস্থ হতে পারি। আমি যদি রোগীকে দেখতে যাই আমি অসুস্থ হলে আমাকেও দেখতে আসবে। রোগীকে দেখতে যাওয়া হলো, জান্নাতে স্থান করে নেওয়া। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত রসুল (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো অসুস্থ ব্যক্তিকে দেখতে যায় তখন আকাশ থেকে এক ফেরেশতা তাকে লক্ষ্য করে বলতে থাকে মোবারক হও তুমি এবং মোবারক হোক তোমার এই পথচলা এবং তুমি জান্নাতে একটি স্থান করে নিলে’ (ইবনে মাজাহ)। মুসলিম শরিফে আরও বর্ণিত রয়েছে, যে রোগীকে দেখতে গিয়ে যতক্ষণ সেখানে অবস্থান করে ততক্ষণ সে জান্নাতের বাগিচায় অবস্থান করে। হজরত সওবান (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেন, মুমিন বান্দা যখন অসুস্থ মুমিন ভাইকে দেখতে যায় যতক্ষণ পর্যন্ত সে অবস্থান করে সে যেন জান্নাতের বাগিচায় থাকে’ (মুসলিম)।

রোগীর কাছে গিয়ে প্রথমেই রোগীর কপালে হাত রেখে তার অবস্থা সম্পর্কে জানতে হবে। রোগীর সঙ্গে কম কথা বলাটাই ভালো। রোগী কিংবা রোগীর পরিবারের সঙ্গে মধুর ভাষায় কথা বলতে হবে। এমন কথাবার্তা বলা উচিত নয়, যাতে তারা রোগীর হায়াতের ব্যাপারে নিরাশ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। সবাইকে সান্ত্বনার কথা বলতে হবে, কোনোভাবেই মন ভাঙা কথা বলা উচিত নয় (আদাবুল মু‘আশারাত)।

রোগীকে দেখতে যাওয়ার পর তার সঙ্গে নম্র-ভদ্রভাবে কথা বলতে হবে। আপনি ধৈর্য ধারণ করুন, আমি আপনার জন্য দোয়া করি, অতি নিকটেই সুস্থ হয়ে যাবেন, এই সমস্ত মঙ্গলজনক কথা বলে তাকে সাহস দিতে হবে। রসুল (সা.) বলেন, ‘যখন তুমি কোনো রোগীর কাছে যাবে কিংবা মরণোন্মুখ ব্যক্তির কাছে যাবে তখন তার সঙ্গে মঙ্গলজনক কথাবার্তা বল। কেননা, তুমি যা বল ফেরেশতাগণ তার ওপর আমিন আমিন বলে’ (মুসলিম ও মিশকাত)।

লেখক : ইসলাম বিষয়ক গবেষক।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর