শনিবার, ১৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা
ইতিহাস

লক্ষ্মণ সেন

লক্ষ্মণ সেন (আনুমানিক ১১৭৮-১২০৬ খ্রিস্টাব্দ) সেন বংশের তৃতীয় শাসক। বল্লাল সেনের উত্তরসূরি লক্ষ্মণ সেন প্রায় ২৮ বছর রাজত্ব করেন। এ পর্যন্ত আবিষ্কৃত লক্ষ্মণ সেনের সময়কার লিপিসাক্ষ্য থেকে তাঁর ইতিহাস পুনর্গঠন করা হয়েছে। লক্ষ্মণ সেনের সময়ের সাক্ষ্য-প্রমাণ থেকে প্রতীয়মান হয়, তিনি ক্ষমতায় আরোহণের আগেই গৌড় ও বারাণসীর (কাশী) রাজাকে পরাজিত এবং কামরূপ ও কলিঙ্গের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করেন। এ বিজয়গুলো লক্ষ্মণ সেনের যুবা বয়সে অর্জিত বলে ধারণা করা হয় এবং সম্ভবত অভিযানগুলো ছিল তাঁর পিতামহ বিজয় সেনের সময়ের। কেননা বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, বিজয় সেন গৌড়, কলিঙ্গ, কামরূপের রাজা এবং খুব সম্ভবত কাশীর গাহাড়বাল বংশের রাজার বিরুদ্ধেও যুদ্ধে লিপ্ত ছিলেন। লক্ষ্মণ সেনের লিপি সাক্ষ্য থেকে দেখা যায়, তিনিই সেনদের মধ্যে প্রথম রাজা যিনি ‘গৌড়েশ্বর’ উপাধি ধারণ করেন। বিজয় সেন ও বল্লাল সেন কারও কোনো তাম্রশাসনেই এ উপাধি ধারণের উল্লেখ পাওয়া যায় না। এ কারণে যুক্তি দেওয়া হয় যে, লক্ষ্মণ সেনই শেষ পর্যন্ত গৌড় পদানত করেন এবং নিজে ‘গৌড়েশ্বর’ উপাধি গ্রহণ করেন। কিন্তু এ যুক্তি একান্তই দুর্বল, কারণ বিজয় সেনের শাসনকালেই সমগ্র বাংলার ওপর সেনদের আধিপত্য স্থাপিত হয়েছিল। তা ছাড়া সেনদের দলিলপত্রে এমন কোনো ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায় না যে, লক্ষ্মণ সেন গৌড় পুনর্দখলের প্রয়োজন অনুভব করেন। তার ওপর বিজয় সেন ও বল্লাল সেনের শাসনকালে সেনদের দ্বারা উত্তর বাংলা দখলের বিষয়টি প্রশ্নাতীতভাবেই প্রমাণিত। তাম্রশাসন সূত্রে জানা যায়, লক্ষ্মণ সেন পুরী, বারাণসী ও এলাহাবাদে তাঁর বিজয়ের চিহ্ন হিসেবে সৌধমালা নির্মাণ করেন। কিন্তু তাম্রশাসনে লক্ষ্মণ সেনের যে উচ্চ প্রশংসা করা হয়েছে তা থেকে এ সিদ্ধান্ত করা খুবই কঠিন যে, আলোচ্য সৌধমালা লক্ষ্মণ সেনের শাসনকালে উপরোল্লিখিত এলাকায় সেনদের ক্ষমতা সম্প্রসারণেরই প্রমাণ দেয়। লক্ষ্মণ সেনের সভাকবি উমাপতি ধর ও শরণ একজন বেনামি রাজার বিজয়াভিযানের উল্লেখ করেছেন যিনি প্রাগজ্যোতিষ, গৌড়, কলিঙ্গ, কাশী ও মগধ দখল এবং চেদি ও ম্লেচ্ছরাজকে পরাজিত করেছিলেন।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর