বুধবার, ২২ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ

মাওলানা মেরাজুল ইসলাম

হজ ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ

‘শোনো ইবরাহিম! তুমি এ কাবার পাশে বসবাস কোরো, আমার সঙ্গে আমার কুদরতের ইশারায় পৃথিবীতে আমারই সৃষ্ট কোনো কিছুর অংশীদার সাব্যস্ত করবে না। আর শোনো! আমার এ ঘর তুমি পবিত্র রাখবে। কাদের জন্য জানো? পৃথিবীর দূরদূরান্ত থেকে আগত তাওয়াফকারীদের জন্য, নামাজে দন্ডায়মানকারীদের জন্য এবং রুকু-সিজদাকারীদের জন্য। শোনো হে বন্ধু ইবরাহিম! তোমাকে আরেকটি দায়িত্ব দিচ্ছি, তা কী জানো? তুমি মানুষের মাঝে হজের ঘোষণা দাও।’ সাড়ে ৪ হাজার বছর আগের ইতিহাসের এ গল্প আল্লাহ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে শোনাচ্ছিলেন ওহি নাজিল করে; যা সুরা হজের ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে স্থান পেয়েছে। উত্তরে হজরত ইবরাহিম (আ.) কী বললেন, বিভিন্ন তাফসির ও হাদিসের বর্ণনায় যা পাওয়া যায় তা হলো, ইবরাহিম (আ.) বললেন, আমি কীভাবে ঘোষণা দেব! এ এলাকা তো জনমানবশূন্য। এখানে তো মানুষের আবাস নেই। আমার এ ঘোষণার আওয়াজ বসবাসকারী বস্তিতে কীভাবে পৌঁছবে। তখন আল্লাহ বললেন, ইবরাহিম! তোমার দায়িত্ব শুধু ঘোষণা দেওয়া আর আমার দায়িত্ব মানুষের কানে পৌঁছে দেওয়া। ইবরাহিম (আ.) তখন মাকামে ইবরাহিম বা একটি পাহাড়ে উঠে দুই কানে আঙ্গুল দিয়ে উত্তরে দক্ষিণে, পশ্চিমে ও পুবে সব দিকে ঘোষণা দিলেন, হে লোকসকল! আল্লাহ তোমাদের জন্য কাবা নির্মাণ করেছেন এবং তোমাদের জন্য বায়তুল্লাহর তাওয়াফ ফরজ করেছেন। অতএব তোমরা সবাই আল্লাহর আদেশ পালন কর। এ ঘোষণার পর আল্লাহ পৃথিবীতে বসবাসকারী সব মানুষের কানে সে বাণী পৌঁছে দিয়েছেন এমনকি কিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ দুনিয়ায় আগমন করবে সবার কানেই পৌঁছে দিয়েছেন। এখন কথা হলো এ ঘোষণা শোনার পর সব শ্রবণকারী চুপ ছিল নাকি কোনো উত্তর দিয়েছিল? উত্তর : আল্লাহ যাদের ভাগ্যে হজ লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন তারা তখন বলেছিল, ‘লাব্বায়িক! আল্লাহুম্মা লাব্বায়িক’। মাআরেফুল কোরআন। এজন্য সামর্থ্যবানদের উচিত লাব্বায়িকের উচ্চারণে সাড়া দেওয়া অর্থাৎ ফরজ হজ তাড়াতাড়ি সমাপ্ত করা। কারণ এটা আল্লাহর প্রাপ্য। যেমন কোরআন বলছেন, ‘আর এ ঘরের হজ করা হলো মানুষের ওপর আল্লাহর প্রাপ্য; যাদের সামর্থ্য বিদ্যমান এ পর্যন্ত পৌঁছার।’ সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৭। বোঝা গেল ধনীদের ওপর কাবা তাওয়াফ করা আল্লাহর হক আর তাওয়াফকারী বান্দার হক সম্পর্কে রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন যা হজরত আবুজর (রা.) থেকে বর্ণিত; ‘হজরত দাউদ (আ.) আল্লাহর কাছে বলেছেন, হে আল্লাহ! যারা তোমার এ কাবাঘর তাওয়াফ করবে তখন তাদের তুমি কী দেবে বা তারা কী পাবে। আল্লাহ বললেন, হে দাউদ! তুমি কি জানো তাদের ওপর আমার কী দায়িত্ব? শোনো! আমি তাদের দুনিয়ায় সুস্থতা দান করব। সম্পদ দান করব। আর হাশরের ময়দানে আমার সাক্ষাৎ দেব। শোনো যখন আমি তাদের ক্ষমা করে দেব অর্থাৎ আমার সন্তুষ্টি দান করব।’ তিবরানি। এজন্য সামর্থ্যবান প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর উচিত যাদের কাবা তাওয়াফ করা (এই সৌভাগ্যবান হওয়ার জন্য) তাদের হজ বিলম্ব না করা। কারণ রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি হজের সংকল্প করে; সে যেন তাড়াতাড়ি তা সম্পন্ন করে।’ আবু দাউদ। তাই যাদের সামর্থ্য রয়েছে তাদের বিলম্ব করা উচিত নয় এবং হজের সংকল্পে নিয়ত বিশুদ্ধ হওয়া চাই। কারণ হজ একটি গুরুত্বপূর্ণ আমল। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘শ্রেষ্ঠ আমল হচ্ছে হজে মাবরুর অর্থাৎ মকবুল হজ।’ বুখারি, মুসলিম। কারণ মকবুল হজই পারে মানুষকে জান্নাত পর্যন্ত পৌঁছে দিতে। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘মকবুল হজের বিনিময় জান্নাত ছাড়া আর কিছুই নয়।’ বুখারি, মুসলিম। তাই ধনীদের উচিত ইসলামের এই অন্যতম স্তম্ভটি আদায় করে নিজেকে পরিপূর্ণ মুসলমান করে তোলা। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হজ না করে থাকা ইসলামে তার কোনো বিধান নেই অর্থাৎ সামর্থ্যবান ব্যক্তি যদি হজ না করে তাহলে সে পূর্ণ মুসলমান নয়।’ আবু দাউদ। তাই আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরিপূর্ণ মুসলমান হয়ে দীনের যাত্রী বা আল্লাহর পথের যাত্রী হওয়ার তৌফিক দিন। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘তিন ব্যক্তি আল্লাহর যাত্রী- এক, হাজী দুই. গাজী ও তিন. ওমরাকারী।’ নাসায়ি। অন্যদিকে যাদের হজ করার সামর্থ্য নেই তাদের ওই তিন ব্যক্তির কাছে বেশি বেশি দোয়া চাওয়া উচিত। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘হজ ও ওমরাকারীরা হচ্ছে আল্লাহর দাওয়াতি যাত্রী, তারা যদি দোয়া করে আল্লাহ তা কবুল করেন, যদি আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করেন আল্লাহ ক্ষমা করে দেন।’ মনে রাখতে হবে, সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যারা হজ করেনি মৃত্যুর সময় ইমান নিয়ে মৃত্যুবরণ বাধা হয়ে দাঁড়ায়। যেমন রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তির বায়তুল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছার শক্তি রয়েছে; অথচ সে হজ করেনি, তাহলে সে ইহুদি বা নাসারা হয়ে মরুক তাতে আমার কিছু আসে যায় না।’ আল্লাহ আমাদের সবাইকে এ অভিশাপ থেকে হেফাজত করুন।

সর্বশেষ খবর