মঙ্গলবার, ২৮ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

আল্লাহ যেন সবাইকে ভালো রাখেন

বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম

আল্লাহ যেন সবাইকে ভালো রাখেন

ঈদ মোবারক।

শেষ পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মহাপরিচালক পদত্যাগ করলেন। ভালো কথা। শুধু মহাপরিচালক নিয়েই জট নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জট আরও অনেক গভীরে। যে যা-ই বলুন, জটের মূল, দুর্নীতির মূল মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তার অদক্ষতা, অযোগ্যতা এ দুঃসময়ে অনেকটাই দায়ী। এ করোনাকালে দেশের যে অবস্থা, সেখানে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ভূমিকা হওয়া উচিত ছিল সব থেকে শক্তিশালী, উৎসাহব্যঞ্জক। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আমাদের বুকে বল জাগাবে তেমনটাই ছিল সবার আশা। তার কিছুই হয়নি। বরং বর্তমান স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সব থেকে ব্যর্থ, অপদার্থ। সেদিন পীর হাবিবের লেখা পড়লাম। লেখাটি খুবই ভালো লেগেছে। কতটা কষ্ট থাকলে পীর হাবিবের মতো পোড় খাওয়া মানুষ স্বাস্থ্যমন্ত্রীর এত গভীর অনুরক্ত-ভক্ত হতে পারেন। চেষ্টা করি, কিন্তু বুঝতে পারি না মাননীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের খুঁটির জোর কোথায়! তার বাবা কর্নেল মালেক ছিলেন আগাগোড়া আওয়ামী লীগবিরোধী। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মেয়র, মন্ত্রী। পাকিস্তান-ফেরত কর্নেলকে হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ দেখবেন না তো কে দেখবেন! তবে সাধারণ মানুষের জন্য হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের যে মায়া যে দরদ ছিল কর্নেল মালেকদের তার লেশমাত্রও ছিল না। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কতটা সফল ব্যবসায়ী জানি না। আসলে মন্ত্রী হওয়ার আগে কখনো তার নাম শুনিনি। তাই তাকে নিয়ে তেমন কিছু বলতে খুব একটা ভালো লাগে না। একটা মন্ত্রণালয়ে যে কত দায়িত্ব, কত কাজ, মানুষের জীবন-মরণ যার ওপর অনেকটাই নির্ভর তার লাগামহীন কথাবার্তা-কাজকর্ম দেশের মারাত্মক ক্ষতি করছে। এখন তো দেখছি সব টাউট-বাটপাড়েরই মাননীয় মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ বা লাইন। রিজেন্ট হাসপাতালের সাহেদ, জেকেজির সাবরিনা ও আরিফ চৌধুরী, সেদিন আবার দেখলাম সাহাবুদ্দিন হাসপাতালের পরিচালক ফয়সাল আল ইসলাম। ভাবতে অবাক লাগে, মানুষের যেখানে জীবন-মরণ সমস্যা কত চোর-চোট্টা আল্লাহর কাছে দয়া ভিক্ষায় কাতর আর এই নব্য বাটপাড়েরা করোনার জাল সার্টিফিকেট, করোনার পরীক্ষা জালিয়াতি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে- এগুলো ভাবলেও কেমন লাগে। এসব আমাদের একেবারে চিন্তার বাইরে।

সেদিন শাজাহান সিরাজকে নিয়ে দুই কথা লিখেছিলাম। শাজাহান সিরাজ একসময় বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর অনুরক্ত-ভক্ত ছিলেন। তাঁর কাছে রাজনীতির এটাওটা শিখেছেন। কিন্তু পরে তাঁদের কোনো মিল ছিল না। রাজনৈতিকভাবে ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানের সময় থেকেই অথবা তারও এক-দুই বছর আগে থেকেই বিরোধ ছিল। করটিয়া সা’দত কলেজ তখন বাংলার আলিগড়। লেখাপড়ায় যেমন, আইয়ুব-বিরোধী আন্দোলনেও তেমন। শাজাহান সিরাজের আগে লতিফ সিদ্দিকী করটিয়া কলেজের ভিপি ছিলেন। শাজাহান সিরাজ দুবার ভিপি হয়েছেন। মোনায়েম খানের ছাত্র ফেডারেশন করটিয়া কলেজের ছাত্র সংসদ দখলের জন্য একসময় গুন্ডা পাঠিয়ে ছিল। সেই গুন্ডারা সা’দত কলেজের ভিপি শাজাহান সিরাজকে হেনস্তা করেছিল, অপমান-অপদস্থ করেছিল। ওয়াসিম, মেজবাহ, পাচপান্ডু এ ধরনের নামের গুন্ডারা গিয়েছিল সে অভিযানে। তারা টেবিলের ওপর চাকু রেখে হোস্টেলে খাবার খেত। সাধারণ ছাত্ররা শুধু অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখত। দিনের বেলায় ছাত্ররা ভয়ে থাকত জড়োসড়ো। কেউ কিছু বলতে সাহস পেত না। হঠাৎই একদিন শাজাহান সিরাজকে অপমান করলে সাধারণ ছাত্ররা তেড়ে আসে। যদিও কেউ তাদের কাছে যেতে সাহস পায় না, কিন্তু ৫০০-৭০০ ছাত্র গুন্ডাদের চারপাশে জটলা পাকাতে থাকে। একপর্যায়ে তারা কলেজের পাশের খাল পার হয়ে করটিয়া বাজারের মাঝখান দিয়ে আসতে গেলে বাজারের এক কুলি তাকে সাপটে ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। সে সময় সেই গুন্ডার পিছে পিছে ধাওয়া করে আসা কয়েক শ ছাত্র লাঠিসোঁটা ইট-পাটকেল ছুড়ে তাকে প্রায় মেরে ফেলার অবস্থা করে। এ সময় কোথা থেকে খবর পেয়ে লতিফ সিদ্দিকী ছুটে এসে তাকে বাঁচান এবং হসপিটালে পাঠিয়ে দেন। মনে হয় এটা ’৬৬ সালের ঘটনা। এ ঘটনার জের ’৭০-এর সাধারণ নির্বাচন পর্যন্ত ছিল। তখন একটা কলেজের ভিপি সাধারণ মানুষের কাছে, ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে এখনকার একজন মন্ত্রীর চাইতেও সম্মানিত, সমাদৃত। জনাব শাজাহান সিরাজের সঙ্গে দলীয়ভাবে একটা বিরোধ লেগেই ছিল। কিন্তু ব্যক্তিগত সম্মানবোধের অভাব ছিল না। লতিফ সিদ্দিকী এবং শাজাহান সিরাজকে যখনই পাশাপাশি দেখেছি তাঁদের মধ্যে এক সৌহার্দ্যপূর্ণ ভাব ফুটে উঠেছে। আমাকে ভীষণ সম্মান করতেন, যত্ন করতেন, গুরুত্ব দিতেন। আমার বদভ্যাস বড়কে সমীহ করা। হয়তো ক্ষমতাবানদের অতটা অন্তর থেকে করতে পারি না। কিন্তু বড়দের মান-মর্যাদা যাতে নষ্ট বা ক্ষুণœ না হয় তার জন্য সব সময় সজাগ থাকি। এখনো সেই বোধ আমার মধ্যে কাজ করে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম নির্বাচিত ভিপি স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলক আ স ম আবদুর রব, তাঁকে আমি খুবই সম্মান করি, ভালোবাসি। যদিও স্বাধীনতার পর তাঁর লোকজন আমাকে হত্যা পর্যন্ত করতে চেয়েছে। এ ক্ষেত্রে শাজাহান সিরাজের ভক্তরা ছিল অগ্রগামী। মুক্তিযুদ্ধের মধ্যেও সে চেষ্টা অব্যাহত ছিল। আসামের মহেন্দ্রগঞ্জের জিনজিরাম নদীর পাশে মামা-ভাগিনা টিলায় কী করে আমাকে হত্যা করা যায় তার চেষ্টা হয়েছিল, অনেক মন্ত্রণা হয়েছে। কিন্তু তারা পেরে ওঠেনি। এসব আমাকে স্পর্শ করত না, এখনো করে না। কারণ মুক্তিযুদ্ধের সময় পরম শত্রুরা স্বাধীনতার পর আমাদের হয়ে গেছে। ’৭৫-এ বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ-প্রতিরোধ যুদ্ধে অনেক অফিসার সামনাসামনি যুদ্ধ করেছেন, ’৯০-এ দেশে ফিরে তাদের অনেককেই সহযোগিতা করতে দেখেছি, অনেক বড় বড় পদে বসে থাকতে দেখেছি। সবই হলো সময় এবং পরিবেশ। এই যে মুক্তিযোদ্ধা সংসদের চেয়ারম্যান বঙ্গবন্ধুকে যখন হত্যা করা হয় ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ এলাকার ডিজিএফআইয়ের মেজর ছিলেন হেলাল মোর্শেদ। আওয়ামী ঘরানার অনেক লোক বীরউত্তম জিয়াউর রহমানকে পাকিস্তানের এজেন্ট বলে নিন্দা করেন। তাঁর সঙ্গে পাকিস্তানের প্রত্যক্ষ যোগাযোগ ছিল কিনা জানি না, কিন্তু এই হেলাল মোর্শেদ ’৭১-এর ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি পাকিস্তানে যান এবং পাকিস্তানিরা কানপড়া দিয়ে মার্চের ১৯-২০ তারিখে ঢাকা পাঠায়। তিনি জয়দেবপুরের ২ নম্বর বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগদান করেন। তাঁকে কিন্তু কেউ পাকিস্তানের এজেন্ট বলেনি। বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার পর ডিজিএফআইয়ের মেজর হিসেবে টাঙ্গাইল-ময়মনসিংহ-সিরাজগঞ্জ-পাবনা অঞ্চলের প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ওপর তিনি যে কি অমানুষিক অত্যাচার করেছেন যার কোনো তুলনা হয় না। বর্বরতারও একটা সীমা থাকে, সে সীমাও অতিক্রম করেছিল। আমার এক যোদ্ধা বীরপ্রতীক পাহাড়ীকে যে নির্যাতন করেছেন আমি লিখে বোঝাতে পারব না। সেই হেলাল মোর্শেদ কিন্তু এখন মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সরকারি সহায়তায় চেয়ারম্যান আর আনোয়ার হোসেন পাহাড়ী তাঁর চরম সহযোগী- এসবই হচ্ছে সময়ের ব্যাপার। তাই চিরশত্রু চিরবন্ধু কেউ নয়। কিন্তু যুগে যুগে ঐতিহাসিক ভূমিকা যারা পালন করেন তাদের সেই ভূমিকা সেই অবদান অস্বীকার করা এক চরম মূর্খতা। তাই এই জাতীয় দিকপালদের অবদান কখনো খাটো করে দেখতে পারি না, দেখার চেষ্টাও করি না। তাই একসময়ের শত্রুকেও ছোট করতে বুকে বাঁধে। হয়তো আমার জ্ঞানের অভাবে অনেকের অনেক কৃতিত্বই তুলে ধরতে পারি না, কিন্তু কাউকে ইচ্ছা করে কখনো ছোট করার চেষ্টা করি না।

আমার মেয়ে কুঁড়ি লন্ডনে ছিল। এই কিছুক্ষণ আগে এসেছে। তাই শুধু কুঁড়িকে নিয়েই মন-মস্তিষ্ক নাড়াচাড়া করছে। এখন আর লিখতে ভালো লাগছে না। তাই কুঁড়ির কথাই লিখি। ১০-১২ তারিখ ও লন্ডন থেকে ফোন করেছিল, ‘আব্বু, ২৬ তারিখ আমার টিকিট।’ আগে ৪০০-৪৫০ পাউন্ডে লন্ডন থেকে এসেছে। এবার নাকি ৯০০ পাউন্ড ভাড়া। তা যাই হোক বলেছিল, ‘অনেকদিন পরে আসছি। আমার ব্যাগ তিনটা। তুমি বলে দিও।’ এখন এয়ারলাইনসের নিয়ম-কানুন অনেক কিছুই জানি না। আগে অনেক নাহক সম্মান পেতাম। ১ কেজির জায়গায় ১০ কেজি বেশি হলেও কেউ কিছু বলত না। এয়ারপোর্টেই ইকোনমি থেকে এক্সিকিউটিভে আপগ্রেড করে দিত। তাই বিমানের এমডি মোকাব্বির হোসেনকে ফোন করেছিলাম। তিনি অল্প কদিন বিমানে এসেছেন। তাঁর আসার পরপরই সবকিছু বন্ধ। তাই হয়তো অনেক কিছু রপ্ত করে উঠতে পারেননি। কিন্তু লোকটি খুব নিবেদিত, কর্মঠ। একসময় সখীপুরে ইউএনও ছিলেন। ফোন করে তাঁকে ব্যাগের কথা বলেছিলাম। সঙ্গে প্লেন যখন খালি আসে তাই আপগ্রেড করে দিতে বলেছিলাম। তিনি বলেছিলেন, ‘স্যার! ইদানীং আপগ্রেড করার খুব একটা নিয়ম নেই। তবে প্লেন একেবারেই খালি। তাই তাকে যাতে আলাদা বসিয়ে আনা হয়, কোনো অসুবিধা না হয় সে ব্যবস্থা করব।’ অনেকটাই নিশ্চিন্ত হয়ে ছিলাম। তার পরও কেন যেন তোফায়েল ভাইকে ফোন করেছিলাম। আসলে সন্তান যে কী জিনিস বাবা-মা হওয়ার আগে কেউ বুঝতে পারে না। বুকের ভিতর কোথা থেকে সন্তানের জন্য নাড়া দেয় বোঝা যায় না। সন্তানের চিন্তা বাবা-মায়ের অন্তরজুড়ে, দেহমনে; কোনো জায়গা খালি থাকে না। তোফায়েল আহমেদকে বলতেই তিনি বলেছিলেন, ‘কোনো কন্টাক্ট নম্বর আছে? কাকে বলতে হবে?’ আমি অবাক! যে তোফায়েল আহমেদ একসময় আইয়ুব খানকে গদিছাড়া করেছেন, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্ব দিয়েছেন, আমাদের অনেকেরই নেতা- বাংলাদেশ বিমানে লন্ডন থেকে আমার মেয়ে আসবে ‘কাকে বলতে হবে?’ বলেছিলাম, হ্যাঁ, এমডির নম্বর আছে। নম্বরটা দিয়েছিলাম। ফোন করে তাঁকে পাননি। একটু পরই তোফায়েল ভাইয়ের ফোন, ‘কাদের! এমডিকে পাচ্ছি না। তবে বিমানমন্ত্রীকে বলে আমি তোমাকে জানাচ্ছি।’ মনে হয় ঘণ্টাখানেক পর দুবার ফোন করেছিলেন। আমি নামাজে ছিলাম, ফোনটা ছিল ড্রয়িংরুমে। আমি আর ঘর থেকে বেরোইনি। সন্ধ্যায় তোফায়েল ভাইকে ফোন করতেই বললেন, ‘ফোন ধর না কেন? চিন্তা হয় না! এমডি ফোন করেছিল, তোমার সঙ্গে নাকি তাঁর কথা হয়েছে। তোমাকে তিনি খুবই সম্মান করেন। খুব ভালো বললেন। সব ব্যবস্থা হবে কোনো চিন্তা কোরো না। বিমানমন্ত্রীকেও বলেছি, তিনিও বলেছেন কোনো অসুবিধা হবে না।’ তোফায়েল ভাই আগাগোড়াই একজন রাজনৈতিক মানুষ। তাঁর সঙ্গে জীবনের প্রথম ভোলা গিয়েছিলাম, চরফ্যাশনে গিয়েছিলাম। সভানেত্রীর সঙ্গে একবার ভোলা গেছি। তোফায়েল ভাই ও লতিফ ভাই দুজনই ছিলেন। ভোলা সার্কিট হাউসে দুই ভাইয়ের মাঝে বসেছিলাম। তাঁদের চুল কাঁচা, আমারটা পাকা। নেতৃবৃন্দ কথা বলছিলেন। একসময় তোফায়েল ভাইকে নেতৃবৃন্দ বললেন, ‘লিডার আপনাদের চাইতে বড় নাকি?’ তোফায়েল ভাই আমাকে ইঙ্গিত করে বললেন, ‘হ্যাঁ, কাদের আমাদের দুই ভাইয়ের চাইতে একটু বড়।’ কথা শুনে আমিও হেসেছিলাম। কারণ এর মধ্যেই দু-চারবার কথা হয়েছিল। আমার মনে হয় বড় ভাই বড় ভাই, তোফায়েল ভাই বলেই নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করছিলাম। তবু তাঁরা অমন প্রশ্ন করেছিলেন। তোফায়েল ভাই নাকি সব সময় আমার লেখা পড়েন। মাঝেমধ্যে উৎসাহ দেন। বড় ভালো লাগে। আগের চাইতে এখন আরও অনেক বেশি তাঁকে সম্মান করতে চেষ্টা করি। আর কদিনই বা বাঁচব, সম্মানি মানুষকে সম্মান না করলে নিজেরই ক্ষতি। তোফায়েল ভাইয়ের ফোন ছাড়তে না ছাড়তেই বিমানমন্ত্রীর ফোন। হ্যালো বলে মাননীয় মন্ত্রী কিনা জিজ্ঞাসা করতেই বললেন, ‘আপনার কাছে আবার আমরা মন্ত্রী! আমরা আপনার ভাই। আপনার মেয়ে আসছে তোফায়েল ভাই ফোন করেছিলেন। কোনো চিন্তা করবেন না, কোনো অসুবিধা হবে না।’ বড় ভালো লেগেছিল বিমানমন্ত্রীর কথাবার্তা শুনে। আমরা আর কী চাই, সামান্য একটু মর্যাদা, ছোটখাটো সহযোগিতা। মেয়ে আসার কথা বলার জন্য সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে বেশ কয়েকবার ফোন করে পাচ্ছিলাম না। সত্যিই একেবারে বুঝতে পারলাম না। এই একজন মন্ত্রী যাকে সব সময় আপন ভাইয়ের মতো ভালোবাসি। সময়-অসময় সব সময় একই রকম ব্যবহার পেয়েছি। একুশে আগস্ট নেত্রীর ওপর গ্রেনেড হামলার দিন আমি দিল্লি ছিলাম। কয়েকদিন পর দিল্লির এ্যাপোলো হস্পিটালে ওবায়দুল কাদেরকে দেখতে গিয়েছিলাম। ক্ষতবিক্ষত ওবায়দুল কাদের বিছানা থেকেই আমাকে জড়িয়ে ধরে বলেছিলেন, ‘কাদের ভাই! আমরা কি মারা যাব?’ তাঁর সেই আকুলতা আমার বুকের বোঁটা ছিঁড়ে গিয়েছিল। সেই ওবায়দুল কাদেরকে যতবার ফোন করেছি, না ধরলে বা ধরতে না পারলে পরক্ষণেই ফোন ব্যাক করেছেন। কিন্তু কেন যেন প্রায় দীর্ঘ দুই মাস ফোন করে কখনো পাইনি। রিং বাজতে বাজতে একসময় ‘Connection error’ সিগন্যাল আসত। আমার সঙ্গে ভালো মানুষ যেমন আছে, দু-চারটা পাজিও যে নেই, তা নয়। হঠাৎ একজন বলল, আপনার ফোনটা বোধহয় ব্লকড করে রেখেছেন। আমি তাকে বলেছিলাম, তোর অনেক বুদ্ধি থাকতে পারে। কিন্তু এটা ঠিক না। মন্ত্রিসভার কোনো সদস্য আমার ফোন ধরবেন না এমন চিন্তা মাথায় আসার আগে মৃত্যু হওয়া ভালো। বিশেষ করে ওবায়দুল কাদের অমন কাজ করবেন তা আমার ভাবনায় আসে না। তাঁর মতিন নামে এক সহকারী আছে, আমার পরিচিত এবং বেশ বিনয়ী। তাকে ফোন করেছিলাম। সে একটা নম্বর দিয়েছিল। মিলিয়ে দেখি আমি যে নম্বরে ফোন করি সেই একই নম্বর। আবার ফোন করে বললাম, আমি তো ওই নম্বরেই ফোন করি। বলল, ‘স্যার! মাগরিবের নামাজের পর ফোন করলেই পাবেন।’ সত্যিই তাঁকে পেয়েছিলাম। কেমন আছেন জিজ্ঞাসা করলে বললেন, ‘কাদের ভাই! এখনো ভালো আছি।’ বললাম, মেয়ে লন্ডন থেকে আসবে তার জন্য সাহায্য চাইতে বেশ কয়েকবার ফোন করেছি, কিন্তু পাইনি। তা ছাড়া প্রায় দুই মাসে কয়েকবার ফোন করেছি। কিন্তু কেন যেন পেলাম না। বললেন, ‘এমন তো হওয়ার কথা না। আমাকে না পেলে মতিনকে বলবেন অথবা অন্য কোনো সহকারীকে বলবেন আমি ফোন করব।’

কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকীর একনিষ্ঠ অনুরক্ত-ভক্ত। মুক্তিযুদ্ধেও ছিল। খুবই সহজ-সরল বিনয়ী। সব সময় অপরিসীম শ্রদ্ধা করেছে, এখনো করে। ওকে মেয়ের ব্যাপার নিয়ে ফোন করেছিলাম। বলল, ‘লন্ডনে স্টেশন ম্যানেজারকে বলছি, হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলছি।’ একটু পরই হাইকমিশনারকে দেওয়ার জন্য কুঁড়ির ফোন নম্বর চেয়েছিল। তাকে দিয়েছিলাম। মনে হয় সঙ্গে সঙ্গে হাইকমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছে, স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে কথা বলেছে। আমার খুব ভালো লেগেছে। কী আর চাই, এর চাইতে বেশি আর কী দরকার। রাজ্জাকও বলছিল, ‘স্যার! বয়স হয়ে গেছে কত কথা মনে পড়ে।’ আমারও অনেক কথা মনে পড়ে। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা হয়তো এমন হতাম না। এক পরিবারের সদস্যের মতো লতায়-পাতায় ছায়ায়-মায়ায় জড়িয়ে থাকতাম। যা হোক, ২৭ জুলাই যথাসময়ে কুঁড়ি লন্ডন থেকে ঢাকায় এসেছে। মোহাম্মদপুরের বাড়ির তৃতীয় তলায় তাকে হোম কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। ১৪ দিন সে সেখানে থাকবে। আমরা দূর থেকে তার তদারক করব, খাওয়া-দাওয়া যা কিছু প্রয়োজন। পাঠকদের কাছে দোয়া চাই, আল্লাহ যেন সবাইকে ভালো রাখেন।

লেখক : রাজনীতিক।

www.ksjleague.com

সর্বশেষ খবর