শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

লড়তে হবে একসঙ্গে

মাজহারুল ইসলাম

লড়তে হবে একসঙ্গে

বন্যার ধকল এ বছর দেশবাসীর জন্য মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দিয়েছে। এমনিতেই করোনায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে দেশের অর্থনীতি। লাখ লাখ মানুষ বেকার। বন্যার কারণে তারা আরও নাজুক অবস্থার শিকার। একদিকে ভারি বৃষ্টিপাত, অন্যদিকে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে পদ্মা, মেঘনা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, তিস্তা, ধরলা, মেঘনা অববাহিকার প্রধান নদ-নদীগুলোর পানি বেড়েছে। উজান থেকে আসা ঢলে ইতোমধ্যে তলিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ এলাকা। বন্যার কারণে বৃদ্ধি পেয়েছে নিত্যপণ্যের দাম। বিশেষ করে সবজির দাম আকাশচুম্বী। গরিব মানুষের জন্য যা বিড়ম্বনা হয়ে দেখা দিয়েছে। এমনিতেই করোনার কারণে সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অবস্থা ভেঙে পড়েছে। সবজির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় তারা ত্রিশঙ্কু অবস্থার শিকার। সবজির খেত তলিয়ে যাওয়ায় কৃষকও চোখে শর্ষে ফুল দেখছে। প্রধানমন্ত্রী ইতোমধ্যে বন্যা-কবলিতদের ত্রাণকাজে জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। বন্যা একটি সাংবৎসরিক সমস্যা। এ বছর করোনাকালে বন্যা আঘাত হেনেছে। জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন এ সমস্যার মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস চালাবেন- এমনটিই প্রত্যাশিত।

সবার জানা, করোনা সারা দুনিয়ার অর্থনীতিতে যে ধস নামিয়েছে তা দুটি মহাযুদ্ধের সময়ও অনুভূত হয়নি। ইতিহাসে বারবার একাধিক দেশ বা এলাকায় মহামারীতে লাখ লাখ মানুষের প্রাণ সংহার হলেও কখনো বিশ্বজুড়ে তার বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়নি। এবার সারা দুনিয়া করোনা নামের ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অণুজীবের ভয়াল আগ্রাসনের শিকার। বিশেষ করে দ্রুত অগ্রসরমান বাংলাদেশের অর্থনীতি করোনার প্রভাবে পড়েছে নাজুক অবস্থায়। বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের সিংহভাগ তৈরি পোশাক-ভিত্তিক। করোনায় উন্নত-অনুন্নত সব দেশের মানুষের চাহিদার তালিকায় পোশাক এখন অগ্রাধিকার হারিয়েছে। ফলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পরও দীর্ঘদিন যাবৎ রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব থাকবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্পসহ সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিতে হবে এখন থেকেই। বিশ্লেষকদের মতে করোনায় যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সামনের দিনগুলোয় বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আরও নাজুক অবস্থার মোকাবিলা করতে হবে। ইতোমধ্যে সংকুচিত হয়ে এসেছে কর্মক্ষেত্র। আর্থিক সংগতির অভাবে মানুষের চাহিদা অনুপাতে সম্পদ সরবরাহ কমে গেছে। পরিণতিতে সব ধরনের শিল্প উৎপাদনে ধস নেমেছে। খোদ ব্যাংক ব্যবসায়ও মন্দা বিরাজ করছে। ফলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে করোনাকাল যদি কেটে যায় এ সময়ের মধ্যে বেকার সমস্যা প্রকট হয়ে উঠবে। মানুষের আয় ইতোমধ্যে কমে গেছে ব্যাপকহারে। একই ভাবে চাকরির বাজার অব্যাহতভাবে সংকুচিত হচ্ছে। এ পরিস্থিতি সামলাতে ঘরে ঘরে উদ্যোক্তা এবং স্বকর্মসংস্থান সৃষ্টির উদ্যোগ নিতে হবে। আশার কথা, করোনা-পরবর্তী পর্যায়ে যারা চাকরির বদলে নিজেরা উদ্যোক্তা হয়ে জীবন-জীবিকার লড়াই চালাতে চান তাদের সহায়তা দেবে সরকার। এটি সফল হলে করোনাজনিত সংকট অভিশাপের বদলে আশীর্বাদে পরিণত হবে- এমনটিই আশা করা যায়।

বিদায়ী অর্থবছরে করোনাভাইরাস বা কভিড-১৯ মহামারীর প্রভাবে দেশের অর্থনীতিকে বড় ধরনের ধকল সহ্য করতে হয়েছে। রাজস্ব ঘাটতি লাখ কোটি টাকার অঙ্ক ছাড়িয়েছে। চলতি অর্থবছরের শুরুতে বন্যার ধকল মহাবিপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। নতুন অর্থবছরের প্রথম মাসটা অতিক্রান্ত হয়েছে করোনা ধকলের মধ্য দিয়ে। এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এ পরিস্থিতির মোকাবিলায় সরকার সতর্ক হয়ে উঠেছে, যা ইতিবাচক। বাস্তবতার নিরিখে কম গুরুত্বপূর্ণ ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়ন্ত্রণে সরকার নানা ধরনের পদক্ষেপ নিয়েছে। গাড়িবিলাসিতা বন্ধের যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা প্রশংসনীয়। দেখে -শুনে মনে হচ্ছে মৌলিক প্রয়োজনের বাইরে খরচ করতে চাইছে না সরকার। অপ্রয়োজনীয় ব্যয় এড়াতে উন্নয়ন ও পরিচালন উভয় ধরনের ব্যয় সংকোচন নীতি অনুসরণ করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, বিলাসী ব্যয়, বিদেশ ভ্রমণ জরুরি না হলে বন্ধ রাখাসহ দেশের অভ্যন্তরেও যাতায়াত খরচ কমানোর কৌশল নেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাস মোকাবিলায় সরকার ১ লাখ ৩ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা করেছে। এ বিশাল ব্যয়ের পাশাপাশি রাজস্ব আহরণে বড় ধরনের ঘাটতির কারণেই সরকার ব্যয় সংকোচনে নেমেছে। উন্নয়ন প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় বন্ধ করা হয়েছে। একইভাবে সরকারি, আধাসরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ব্যয় কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। অর্থ বিভাগ এ-সংক্রান্ত পরিপত্রও জারি করেছে।

করোনাভাইরাস বিপুলসংখ্যক মানুষের জীবন কেড়ে নিয়েছে। তবে এর প্রভাবে অর্থনীতির যে ক্ষতি হয়েছে তা নজিরবিহীন। এ বিরূপ অবস্থা কাটিয়ে উঠতে কয়েক বছরও লেগে যেতে পারে। ফলে সরকারকে বাস্তব অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় সংকোচন নীতি গ্রহণ করতে হবে। বিলাসিতা ও অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে বাদ সাধতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের সময় জাতি যেভাবে শত্রুর বিরুদ্ধে লড়েছে, সেভাবে করোনা ও বন্যা-পরবর্তী ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় অর্থনীতির পুনর্গঠনে লড়তে হবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর