শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ত্যাগের কোরবানি এবং তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ

মাহমুদুল হক জালীস

ত্যাগের কোরবানি এবং তার থেকে শিক্ষা গ্রহণ

মহান আল্লাহ মানবজাতি সৃষ্টির পর থেকেই কোরবানির বিধান দিয়েছেন। পৃথিবীর সব জাতি ও সম্প্রদায় কোনো না কোনোভাবে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয় বস্তু কোরবানি করেছে। এ মর্মে কোরআনে আল্লাহ ঘোষণা করছেন, ‘আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্য কোরবানির নিয়ম করে দিয়েছি; যাতে তাদের জীবনোপকরণ- স্বরূপ যেসব চতুষ্পদ জন্তু দিয়েছি সেগুলোর ওপর তারা আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।’ সুরা হজ, আয়াত ৩৪। মানবজাতির এ কোরবানির বিধানটি অতীব প্রাচীন। যুগ যুগ ধরে এর প্রচলন সমাজের পরতে পরতে চলে আসছে।

ইতিহাসে সর্বপ্রথম কোরবানি হজরত আদম (আ.)-এর দুই পুত্র হাবিল ও কাবিলের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। এ মর্মে কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে, ‘হে রসুল! আপনি আদমের দুই পুত্রের বৃত্তান্ত তাদের যথাযথভাবে শোনান। যখন তারা উভয়েই কোরবানি করেছিল। তাদের একজনের কোরবানি কবুল হলো। অন্যজনের কোরবানি কবুল হলো না।’ সুরা মায়েদা, আয়াত ২৭। বর্তমানে আমাদের ওপর যে কোরবানির বিধান প্রচলিত তা হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর ত্যাগের ফসল। পৃথিবীর ইতিহাসে ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি অবিস্মরণীয়। তাঁর আত্মত্যাগ দৃষ্টান্তহীন হয়ে থাকবে চিরকাল। আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রথমে হজরত ইবরাহিম (আ.) কোরবানি করতে স্বপ্নাদৃষ্ট হলেন। তারপর একটি একটি করে পশু কোরবানি করতেই থাকলেন। কিন্তু সে কোরবানি আল্লাহর কাছে গৃহীত হচ্ছিল না। তিনি পেরেশান হয়ে গেলেন, সে সময় নির্দেশ দেওয়া হলো এমন বস্তু কোরবানি করার যা তাঁর কাছে সবচেয়ে প্রিয়। হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় বস্তু ছিল তাঁর ছেলে হজরত ইসমাইল। নিশ্চয় তাঁর কোরবানির কথাই আল্লাহ স্বপ্নের ভিতরে বলেছেন। তখন হজরত ইবরাহিম (আ.) স্তম্ভিত না হয়ে আল্লাহর আদেশের কথা পুত্র ইসমাইলকে জানালেন। জবাবে পুত্র বললেন, ‘হে আমার সম্মানিত পিতা! আপনি আল্লাহর পক্ষ থেকে যা আদিষ্ট হয়েছেন তা তাঁর সন্তুষ্টির জন্য পালন করুন। আপনি চিন্তিত হবেন না। ইনশা আল্লাহ আমাকে আপনি ধৈর্যশীলদের অন্তর্ভুক্ত পাবেন।’ সুরা সাফফাত, আয়াত ১০২। এরপর হজরত ইবরাহিম (আ.) এবং ইসমাইল  (আ.) উভয়েই আল্লাহর হুকুম পালনে মনস্থির করলেন। মা হাজেরাও নিজ থেকে আদরের সন্তানকে সাজিয়ে দিলেন।  নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে যখন ইবরাহিম (আ.) পুত্র ইসমাইলকে কোরবানি করতে উদ্যত হলেন, চোখ বেঁধে সন্তানের গলায় ছুরি চালানোর সঙ্গে সঙ্গে মহান আল্লাহ ইবরাহিম (আ.)-এর আনুগত্যে সন্তুষ্ট হয়ে তাঁর কোরবানি কবুল করে নিলেন। পরীক্ষায় পাস করার পুরস্কারস্বরূপ একটি মোটাতাজা পশু (দুম্বা) পাঠিয়ে পুত্রের পরিবর্তে তাকে জবাই করার হুকুম দিলেন। হজরত ইবরাহিম (আ.) চোখ খুলে দেখলেন, পুত্রের বদলে একটি পশু কোরবানি হয়ে গেছে। সুবহানাল্লাহ! হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর কোরবানি দেওয়ার এ ঘটনা প্রাণবন্ত করে রাখার জন্যই উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর কোরবানি ওয়াজিব করা হয়।

লেখক : মুহাদ্দিস খাদিমুল ইসলাম মাদ্রাসা, ঢাকা।

সর্বশেষ খবর